গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি:: সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৫শতাধিক টিলা অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে । কিছু টিলায় আনারস চাষ শুরু হলেও শত শত টিলায় এখনো কোন ফসল আবাদ হয় না । উপজেলা কৃষি অফিসের এক গণনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এসব টিলায় মাটি ও ফসল বিবেচনা করে চাষের আওতায় আনা গেলে উৎপাদন ব্যাপক ভাবে বাাড়বে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান। জানা যায়, উপজেলা কৃষি বিভাগ সম্প্রতি টিলা ভূমির একটি গণনা করে। তাদের প্রাথমিক ভাবে গণনায় দেখা যায় উপজেলায় প্রায় ৫শতাধিক টিলা রয়েছে। যার অধিকাংশই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে । দু‘চারটি টিলায় আনারস চাষ হচ্ছে ৩ বছর থেকে। এছাড়া কিছু টিলায় বিভিন্ন বনজ গাছ রোপণ করা হয়েছে । অবশিষ্ট প্রায় সব গুলো টিলাই অনাবাদি অবস্থায় পেয়েছে কৃষি বিভাগ । কৃষি বিভাগ অনাবাদি টিলা গুলো আবাদের আওতায় আনার চেষ্টা করছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার মোট আয়োতন ২৭ হাজার ৮৪৪ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ যোগ্য জমির পরিমান ১৭ হাজার ৩৮৬ হেক্টর । উচু ভূমির পরিমান ৫ হাজার ৩০৫ হেক্টর। এসব উচু জমির মধ্যে প্রায় ৫০০ টিলা ভূমি রয়েছে । যার মধ্যে কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় সম্প্রতি ২৫-৩০ টি টিলা আনারস, কমলা, লেবু, মাল্টা, কমলা আবাদের আওতায় এসেছে। বাকি টিলাগুলো অনাবাদি অবস্থায় আছে ।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এসব টিলায় বছরব্যাপী ফল চাষের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে । তবে কিছু কিছু টিলায় আবাদ হলেও শত শত টিলা আনটাচ গোল্ডেন মাইন হিসেবে দীর্ঘ দিন থেকে পড়ে আছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এসব টিলায় কাঠাল, আনারস, গোল মরিচ, কাজু বাদাম কমলা, লেবু সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করা সম্ভব। আধুনিক পদ্ধতিতে ও পরিকল্পিত চাষের আওতায় আনা গেলে উৎপাদিত ফল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করা যাবে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক ও পুষ্টির চাহিদা উন্নয়নে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ উপজেলাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে অনাবাদি টিলায় ফসল উৎপাদন করার জন্য
সাধারণ মানুষকে উদ্যেগী হওয়ার জন্য বিভিন্ন ফসলের চারা, সার, টেনিং প্রদান ও পরামর্শ সহ বিভিন্ন ভাবে আগ্রহী করে তোলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে কৃষি অফিস। এদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২৫-৩০টি টিলায় গড়ে ওঠা বাগানগুলোতে আনারসের ফলন ভালো হওয়ায় আনারস চাষিরা খুশি। তারা পাচ্ছেন ন্যায্য মূল্যও। এসব আনারস বাগান গুলোতে সারা দিনই লেগে থাকে পর্যটকের ভিড়। বিকাল হলে ঢল নামে তাদের। গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে হাজারো দর্শনার্থী আসেন বাগানে। উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল আবদুল মতিন চান্দ মিয়া আনারস বাগানের পরিচালক কাওসার রাজা রতন জানান, ৭টি টিলায় ৮০ একর জায়গায় আমাদের আনারস বাগান। ফলন ভালো হচ্ছে এবং আনারস রসালো ও সুস্বাদু । আনারস বাগান করার পূর্বে টিলাগুলো অনাবাদিই পড়েছিল ।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আব্দুল জলিল বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের টিলাগুলোতে উৎপাদিত সুস্বাদু পেয়ারা যা ‘বাঘার সফরি’ নামে পরিচিত ছিল। সেই পেয়ারা এখন বিলুপ্ত প্রায়। আমাদের সেইসব ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ অনাবদি টিলা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে বিষয়টি প্রশংসার দাবিদার। এ ব্যাপারটি কেউ এতোদিন খেয়ালই করেননি। ইদানিং অনেকের মধ্যে আনারস, কমলা, লেবু ও মাল্টা চাষের আগ্রহ দেখা গেছে। গোলাপগঞ্জের টিলার মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের আওতায় আনলে উৎপাদন বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ফসল উৎপাদনে সম্ভাবনাময় এলাকা। দীর্ঘ দিন থেকে টিলা গুলো অনাবাদি অবস্থায় ছিল, আমরা কিছু উদ্দ্যোগ নেওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ৩০/৪০ টিলা আবাদের আওতায় এসেছে। আমরা কমলা, লেবু, মাল্টা সহ বিভিন্ন রকম চারা দিয়েছি। এখানে সব টিলা গুলো আবাদের আওতায় আনা গেলে ভালো ফলন হবে এবং
পর্যটনেরও বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে। এজন্য সবাইকে উদ্দ্যোগী হতে হবে ।
এবিএ/১৩ মার্চ