সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি নেতার অপকৌশল, হামলা মামলা ও ফ্যাসিস্টের দোসরদের পুণর্বাসন নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা ও তার ছেলে সহ তিনজন সেনা সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এই ঘটনার জন্য বিএনপিরই আরেক সিনিয়র নেতা শওকত আলী বাবুল এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২৯ জুন) দুপুরে সিলেটের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে ধরেন পাড়ুয়া লামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রোকসান মিয়া। তিনি জানান, গত ২৫ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইসলামপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরীর ছেলে রুহুল মিয়া চৌধুরী এবং সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালনরত তিনজন সেনা সদস্য নির্মম হামলার শিকার হন। আহত রুহুল চৌধুরী বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। অপর এক সেনা সদস্যের অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন যে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই হামলার পেছনে নেতৃত্ব দিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শওকত আলী বাবুল। তিনি পাড়ুয়া মাঝপাড়া গ্রামের সিকন্দর আলীর ছেলে এবং রাজনৈতিকভাবে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামীমের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। বক্তাদের অভিযোগ, শওকত আলী বাবুল বিএনপির পরিচয়ে শামীমের সন্ত্রাসী বাহিনীকে পুনর্বাসন করছেন এবং বর্তমানে নিজের ব্যক্তিগত বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শওকত আলী বাবুল মাদক ব্যবসা, পাথর লুট, চোরাচালানসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত। তার নেতৃত্বে একাধিকবার হামলা হয়েছে বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের ওপর। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু বিএনপির স্থানীয় শাখার ভাবমূর্তিই নষ্ট হচ্ছে না, বরং পুরো উপজেলায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে।
রোকসান মিয়া অভিযোগ করেন, বাবুলের নেতৃত্বাধীন হামলায় পূর্বেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রুহুল মিয়ার বাবা হারুন মিয়া চৌধুরী। ২২ জুন সন্ধ্যায় বাবুলের অনুসারীরা তাকে হামলা করে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও, এখনও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এজাহারে প্রধান অভিযুক্ত শওকত আলী বাবুল ছাড়াও আরও যাদের নাম রয়েছে: আবু তাহের মোমিন (৪০), বাবুলের ভাই আনসার উদ্দিন জিলানী (৪৫), পাড়ুয়া গ্রামের মৃত বশর মিয়ার ছেলে ইয়াহিয়া মিয়া (৩৫), আজিজ মিয়া (৩৭), শাহাবউদ্দিন (৩০), মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে জিব্রিল (৩০), গোদা মিয়ার ছেলে জাহেদুল (৩২), বতুল্লাহর ছেলে হাবিবুর রহমান রাসেল (৩৫), মশ্রব আলীর ছেলে সুমন (৩০) ও সালমান (২৪), ইদি মিয়ার দুই ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এইসব আসামিরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রোকসান মিয়া জানান, “হারুন চৌধুরী ও রুহুল চৌধুরীর পরিবারসহ আমরা আত্মীয়-স্বজনরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হামলার পর শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা আবারও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।”
তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপত্তার দাবি জানান। পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় শওকত আলী বাবুলের বিরুদ্ধে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এই ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী এবং সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা অবগত। কিন্তু এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে রোকসান মিয়া আরও অভিযোগ করেন, শওকত আলী বাবুলের পরিবারের অতীত অপরাধের ইতিহাস রয়েছে। তার ভাই ২০০৯ সালে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন এবং অন্য একজন ভাই বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল নেতা। এই পারিবারিক ও রাজনৈতিক জোটবদ্ধ সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্টতা এখন কোম্পানীগঞ্জের জনগণের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির ত্যাগী নেতাদের উপর একের পর এক হামলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজনকেই সামনে এনে দিয়েছে। এই বিভাজন, অপরাধচক্র ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া রুখতে না পারলে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বক্তারা শওকত আলী বাবুল ও তার বাহিনীর দ্রুত গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থার দাবি জানান।
বিজ্ঞপ্তি/টিআর