সিলেট৭১ ডেস্ক:; সিলেট নগরীতে মধ্যরাতে সংখ্যালঘু এক পরিবারের বাসায় দলবল নিয়ে হামলা চালিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তওহীদ। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে রক্ষা পেয়েছে ওই পরিবার। রােববার মধ্যরাতে নগরীর রায়নগর রাজবাড়ি এলাকার মৃত নন্দগােপাল পুরকায়স্থের বাসায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় নন্দগােপাল পুরকায়স্থের স্ত্রী স্নিগ্ধা দেব আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
৯৯৯-এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গতকাল সােমবার রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন। লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় হামলার শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছিল। হামলার শিকার পরিবারের অভিযােগ, রায়নগর রাজবাড়ি এলাকায় মন্দিরের জায়গা দখল করে একটি হাউজিং প্রকল্পের রাস্তা বানাতে দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর শওকত আমীন তওহীদ।
এমনকি তাদের এলাকা ছাড়া করতেও একাধিকবার হুমকি দেন তিনি। রােববার রাত ২টার দিকে মন্দিরে মূর্তি রাখাকে কে কেন্দ্র করে ৩০/৪০ জন যুবককে নিয়ে বাসায় হামলা চালান তিনি। পরে ৯৯৯-এ কল করে হামলা থেকে রক্ষা পান পরিবারের সদস্যরা। তাদের অভিযােগ, পূর্বের ঘটনার জেরেই কাউন্সিলর এ হামলা চালিয়েছেন।
মন্দিরের সেবায়েত পরিবারের সদস্য মৃত নন্দগােপাল পুরকায়স্থের ছেলে প্রীতিরাজ . পুরকায়স্থ বলেন, রােববার রাত ২টার দিকে প্রথমে মাস্ক পরিহিত ৩০/৪০ জন লােক ট্রাকে করে মূর্তি রাখতে মন্দিরে আসেন। এসময় তাদেরকে পার্শবর্তী বাগানে মূর্তি রাখার কথা বলায় তারা বলেন-কাউন্সিলর বলেছেন এটা সরকারি জায়গা। এখানেই মূর্তি রাখতে হবে। আমরা ফের না করায় আমার মাকে গালি দিয়ে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন।
এ ঘটনার : প্রতিবাদ করায় পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ৪০/৫০জন লােক লাটিসােটা নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। বাসার জানালায় ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে প্রতিবেশীরা এসে জড়াে হলে হামলাকারীরা চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর কাউন্সিলর শওকত দলবল নিয়ে এসে দ্বিতীয় দফায় বাসায় হামলা চালান।
গেইট ভেঙে বাসায় ঢুকার চেষ্ঠা করেন এসময় তার সাথে পুলিশ সদস্যও ছিলেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমরা ৯৯৯-এ ফোন করি। কিছুক্ষণ পরে তার সাথে আসা পুলিশ সদস্য ওসির নির্দেশে আমাদের সাথে কথা বলেন। এসময় কোতােয়ালি থানার ওসিও ফোন করে আমাদের সাথে কথা বলেন। এ ঘটনায় আমরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়লে ওসি আমাদের আশ্বস্থ করেন আর কোনাে ধরণের হামলা হবে না।
প্রীতিরাজ পুরকায়স্থ আরও বলেন, দীর্ঘদিন থেকে কাউন্সিলর শওকত বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। মূলত আমাদের বাসা ও মন্দিরের পাশে একটি হাউজিং প্রকল্পের মন্দিরের জায়গা দখল করে রাস্তা তৈরির পাঁয়তারা করছিলেন তিনি। জায়গাটি নিতে আমাদের সাথে বেশ কয়েকবার যােগাযােগ করেন কিন্তু মন্দিরের জায়গা হওয়ায় আমরা তাকে না করে দেই। এতে তিনি ক্ষুব্দ হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
প্রীতিরাজ পুরকায়স্থ আরও বলেন, গত বছর আমরা পারিবারিক উদ্যোগে মন্দিরের সংস্কার কাজের জন্য কাউন্সিলরের অনুমতি নিতে চাইলে তিনি বলেন-মন্দিরের কাজের অনুমতি লাগবে না। তাঁর মৌখিক নির্দেশে মন্দিরের সংস্কার কাজ শুরু করলে পরবর্তীতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রকৌশলী এসে অবৈধ স্থাপনা বলে উচ্ছেদ করে দেন।
পরবর্তীতে প্রায় সাত মাস আগে সিসিকের অনুমতির জন্য সংস্কার কাজের নকশা তৈরি করে আবেদন করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজের অনুমতি দেয়নি সিসিক। এমনকি সিসিকের পক্ষ থেকে মন্দির পরিদর্শন করতেও যাওয়া হয়নি। প্রীতিরাজ অভিযােগ করে বলেন, তিনমাস আগে সিসিকের প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ারসহ বেশ কয়েকজন তাদের বাসায় আসেন কাউন্সিলর।
এসময় কাউন্সিলর শওকত কার অনুমতি নিয়ে মন্দিরে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে জানতে চান। এসময় তার (কাউন্সিলরের) মৌখিক অনুমতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে শওকত বলেন-তােমরা কী এই এলাকার মালিক হয়ে গেছাে পাঁচ বছর ধরে আমি এই এলাকার মালিক। যতদির আমি কাউন্সিলর থাকবাে ততদিন আমার হুকুম ছাড়া এখানে গাছের একটি পাতাও নড়বে না।
এসময় এ সংখ্যালঘু পরিবারকে এলাকা ছাড়া করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যান তিনি। এ ব্যাপারে সিসিকের কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তওহীদ বলেন, এটা আমার সমস্যা না হিন্দু সম্প্রদায়ের লােকদের সমস্যা। তারা মূর্তি রাখা নিয়ে ঝামেলা করেছে পরে আমি পুলিশকে খবর দেই। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার পরে আমি যাই।
আমি কোনাে হামলা করি নি যারা এধরণের অভিযােগ দিয়েছে সেগুলাে মিথ্যে। মন্দিরের জায়গা দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কেন জায়গা দখল করবাে। এখানে তাে রাস্তা আছে। আর যে জায়গার (প্রকল্প) জন্য রাস্তা বানানাের কথা বলা হচ্ছে সে জায়গা অনেক দুরে । এগুলাে তাদের মনগড়া অভিযােগ।
এদিকে সংখ্যালঘু পরিবার বলায় এ ব্যাপারে কোনাে বক্তব্য দিতে রাজি হননি কোতােয়ালি থানার ওসি মােহাম্মদ আলী মাহমুদ। এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। সূত্র-দৈনিক জাগ্র্রত সিলেট।
এবিএ/০৮ ফেব্রুয়ারী-৩২