August 25, 2025, 12:33 pm

সংবাদ শিরোনাম :
ব্যবসায়ী আলী হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টায় রিয়াজ মেম্বারের ভাই গ্রেফতার বড়লেখার রাজনীতিতে পরীক্ষিত নেতৃত্ব প্রভাষক ফখরুল ইসলাম বাংলাদেশীদের জন্য দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা উত্তরা বিমান দুর্ঘটনা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫০ : প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব আগস্টে নতুন জুলাই সংবিধান আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক এনসিপির রহমানিয়া টুকা হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সিলেটে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, চলতি বছরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩ মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: শিশুর লাশে ভরে গেল ক্যাম্পাস, ২৫ জন আশঙ্কাজনক সিলেট মহানগরীর ১৪নং ওয়ার্ডে তালামীয ইসলামিয়ার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সাংবাদিকের উপরে মিথ্যা মামলা কোম্পানীগঞ্জে ফ্যাসিস্টের দোসরদের পুণর্বাসন নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতার উপর হামলা মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার শুরু কুলাউড়ায় বিএসএফের গুলি, বাংলাদেশির লাশ তুলে নিল ভারত মাহি-শাবাব হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি যুক্তরাজ্যে ছবি ভাইরাল: নবীগঞ্জে ওয়ালিদের বাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ কুলাউড়া সীমান্তে আবারও পুশইন, ১৪ জন আটক ওসমানী হাসপাতালে সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ সিলেট সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৬ জনকে আটক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাবেক এমপি ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে ছাত্রশিবিরের কোরআন কুইজে হিন্দু শিক্ষার্থীর বিজয় সারা দেশে গণজমায়েতের ডাক এনসিপির প্রতিটি রক্তবিন্দুর প্রতিশোধ নেয়া হবে: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনানি শেষ, রায় ২৭ মে এম.সি কলেজ তালামীযের কাউন্সিল সম্পন্ন সিলেটে এবার বিষ্ফোরক আইনে ২৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মিজানকে জড়িয়ে অপপ্রচারের নিন্দা ও হুমকিদাতাকে গ্রেফতারের দাবি সিলেটে সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা: ষড়যন্ত্রমূলক দাবি পরিবারের সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশী নিহত দিরাইয়ে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২৬ ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে বাস চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
মা–বাবার অসুখে পাশে থাকা চাই

মা–বাবার অসুখে পাশে থাকা চাই

Please Share This Post in Your Social Media

তিন সন্তান তিন মহাদেশে। নচিকেতার গানের মতো সবাই মস্ত প্রতিষ্ঠিত। জীবনের সব উপার্জন দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন। সত্তরোর্ধ্ব এক দম্পতির কথা বলছি। চাকরিজীবনে অন্যায় উপার্জন করেননি। সন্তানদের দেখার জন্য মন ব্যাকুল হলে মাঝেমধ্যে বিদেশে সন্তানদের কাছে যান। অবসর-ভ্রমণের পাশাপাশি টুকটাক চিকিৎসাও করিয়েছেন সেখানে। এই দম্পতির মন টেকে না দেশের বাইরে। সুস্থ থাকলে ভালোই চলে সব। সমস্যা হয় অসুস্থ হলে। দেশে অসুস্থ হয়ে দুজনের কেউ যখন হাসপাতালে ভর্তি হন—সন্তান ও নাতিদের জন্য ভীষণ ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। দুজনেই চোখের জল ফেলেন নীরবে। সাত সাগর তেরো নদী—এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে আকাশ পাড়ি হুটহাট চাইলেই তো দেওয়া যায় না। এই দম্পতির মনের গোপন ব্যথা গোপনেই থেকে যায়। সন্তানেরাও একধরনের অপরাধবোধে ভোগে।
এ তো গেল বাইরে সন্তান ও তাদের মা–বাবাদের কথা। কিন্তু সন্তানেরা দেশের মধ্যে থেকেও অনেক সময় অসুস্থ মা-বাবার দায়িত্ব নিতে চায় না। কে হাসপাতালে থাকবে, রাত জাগবে কে, চিকিৎসকের কাছে নেবে কে—এসব বিষয় তো আছেই। আরও রূঢ় বাস্তবতা হলো, চিকিৎসার খরচ নিয়ে যখন ভাইবোনে ঠেলাঠেলি, দায়িত্ব না নেওয়ার মনোভাব দেখা যায়।
এমনটা কখনোই কাম্য নয়। স্বজনের সুখে-অসুখে সবাই পাশে থাকবে, সেটাই প্রত্যাশিত। মা-বাবার অসুখে অসুস্থতায় সন্তান পাশে থাকবে না তো কে থাকবে। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা যেন ‘ঝলসানো রুটি’।
এই যে বিপন্ন জীবন, কেমন করে তাকে সজীব ও প্রাণময় করে তোলা সম্ভব। কী উপায়? যে সন্তানের জন্য মা-বাবা জীবনের সর্বস্ব ব্যয় করেন, তাঁদের জন্য মন কাঁদবেই। বিপদে-অসুখে সন্তানকে মনে পড়বেই। এই আবেগ অনিরুদ্ধ। যে সন্তান মা-বাবার দুঃসময়ে পাশে থাকতে পারছে না, কেতাবি ভাষায় তাদের ‘কুসন্তান’ বলে আখ্যা দিলেই সমস্যার দায় মেটে না। সমস্যার জটিলতা যাপিত জীবনের গভীরে। একটি সম্পন্ন, সুন্দর জীবনের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সেটা তৈরি কোনো পণে্যন মতো নয়।  সমগ্র একটা জীবনের নানা ধাপে প্রস্তুতি দরকার।

মন যেমন কাঁদে বৃদ্ধ মা-বাবার। তেমনি মন কাঁদে মা-বাবার দুর্দিনে পাশে থাকতে না পারা সন্তানদেরও। আধা গ্লাস পানির যেমন অর্ধেকটা খালি, তেমনি অর্ধেকটা পূর্ণও বটে।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এমন এক নারীর ব্যস্ত সন্তানের সঙ্গে একবার ফোনে কথা হলো। বিরক্ত হয়ে তাঁকে দুই কথা শোনানোর ইচ্ছা হচ্ছিল। সে বেচারাও কাঁদছিল। ঢাকার বাইরে এক উচ্চ বিদ্যাপীঠে চূড়ান্ত পরীক্ষা তাঁর সামনে। মায়ের কাছে ছুটে এলে সব আয়োজন মাটি। এদিকে মাকে দেখার কেউ নেই, সেটাও সত্য।
নগরসভ্যতা বড় নির্মম। আমাদের ক্রমেই বিচ্ছিন্ন করে। যুক্ত করে না। কিন্তু তাই বলে আমরা নিজেদের বদলাব না, বদলাতে সচেষ্ট হব না, তা হয় না। প্রেম, আবেগ, ভালোবাসা—এসব নিয়েই তো মানুষ। হয়তো মা-বাবা মুখে কিছু বললেন, কিন্তু মনের মধ্যে থেকে যাবে গভীর দুঃখ।

বৃদ্ধাশ্রম ও এক ঝুড়ি ফুল
সুইডিশ এক মনোবিদের কথা মনে পড়ছে। তিনি ইউরোপীয় বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে শ্লেষের সঙ্গেই বলেছিলেন, উন্নত বিশ্বে আমরা বুড়ো হলে অনেকেরই ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। আর সন্তানের ভালোবাসার প্রতীক হলো বিশেষ দিনে এক ঝুড়ি ফুল; গুড উইশ কার্ড কিংবা ফলমূল।
তিনি উপমহাদেশের একান্নবর্তী সংসার ধারণার খুব তারিফ করেন। বলেন, পৃথক হওয়া ও বিচ্ছিন্নতাবোধ মানুষকে ক্রমেই বিপন্ন করে। দু-তিনজনকে নিয়ে খুদে সংসার মানে হোটেলে থাকারই নামান্তর। সেই হোটেল থেকেই ওল্ডহোম—এটা এই সংকীর্ণ সংসার ধারণার অনিবার্য পরিণতি।
ইউরোপীয় ওই মনোবিদের কাছে সংসার ধারণার নবতর সংজ্ঞা জেনে বেশ আপ্লুত হয়েছিলাম। তাঁর মতে, সেটাই প্রকৃত পরিবার, যা বৃদ্ধ, শিশু, তরুণ মধ্যবয়সী সবাইকে বিনি সুতার মালায় বেঁধে রাখে। যেখানে সবাই গুরুত্ব পায়। সম্মান, ভালোবাসা, মর্যাদা পায়। কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না। ত্যাগ নয়, পৃথকতা নয়—সম্মিলনই হলো সংসার।
অবাক হয়ে ভাবছিলাম, উন্নত বিশ্ব যখন সংসার টুকরো করে বিপন্নতায় হাহাকার করছে। আর আমরা কি তখন সেই কথিত আধুনিক খুদে সংসার ধারণার জন্য হাপিত্যেশ করছি। নচিকেতা তাঁর বৃদ্ধাশ্রম গানের মাধ্যমে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সমস্যাটি দেখিয়েছেন। আমাদের সাহিত্যে, নাটকে, জীবনধর্মী রিপোর্টে সমস্যার বিশ্লেষণ কম হয়নি। তারপরও আমরা কতটা সচেতন!

মিটবে কীভাবে এ সমস্যা
পৃথকতা নয়; বরং সবাই মিলেমিশে থাকার মানসিকতা চাই। ভাঙনে সমাধান নয়, সুরাহা মিলনে। আত্মীয়তার বন্ধনকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করতে হবে। একটি সংসারের মা-বাবা বৃদ্ধ বয়সে মনোযোগ, মর্যাদা, সম্মান প্রত্যাশা করেন। বয়সের ভারে কিছু রোগব্যাধি হয়। সে সময়ে সেবাযত্নের দাবি খুবই স্বাভাবিক। এটা তাঁদের অধিকার। ভাইবোন, মা-বাবা, চাচা, মামা, খালা, ফুপু ও তাঁদের সন্তানদের মধ্যে আন্তআত্মীয় বন্ধন যাদের যত মজবুত, সুখের দিনে যেমন তাতে ভাগাভাগি করা যায় আনন্দ। অসুখেও সহজ হয় ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট’।
একান্নবর্তী ধারণা নগরজীবনে কঠিন বৈকি। ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের সীমিত আয়তনে বিশাল পরিবারের ভরণপোষণ সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু সবাই মিলেমিশে সুখে-দুঃখে কাছাকাছি থাকা সম্ভব। এ জন্য চাই ইচ্ছা ও সদ্ভাব। চাই ইতিবাচক কল্যাণ চিন্তা। আপনি
যখন স্বজনের কল্যাণ করছেন, অন্যজনও তা-ই করবে।
একটি সংসারের কোনো বয়স্কজন যখন অসুস্থ প্রথমে তাঁর সুচিকিৎসা দরকার। তখন সবাইকে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমি কেন যেতে পারব না, সে অজুহাত খুঁজলে চলবে না। অন্য কোনো ভাইবোন বা আত্মীয় কেন দায়িত্ব পালন করল না, বিপদের দিনে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ নয়। বিপদে, অসুখে, দুঃসময়ে প্রথম ও অগ্রাধিকার কর্তব্য হলো, নিজের সাধ্যমতো সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করা। আমার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হলে তা অন্যকে উদ্বুদ্ধ করবে। আমার কাজ দায়িত্ব এড়ানো বা ছিদ্রান্বেষণ হলে তা অন্যকে নেতিবাচক করবে।
হাসপাতালে এমন পরিবারবন্ধন দেখে মুগ্ধ হয়েছি—বৃদ্ধ স্বজনকে সুস্থ করে তুলতে শুধু সন্তান নয়, পরিবারের অন্যরা সবাই পাশে দাঁড়িয়েছে। হুটহাট ভিড় করে চেহারা প্রদর্শন নয়, চিকিৎসাকর্মীদের পাশাপাশি রোগীর সেবা করেছেন সবাই পালা করে। এই মেলবন্ধনের প্রয়াস দরকার।
এখন দেশে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বেড়েছে। ষাটোর্ধ্ব স্বজনের সংখ্যা সব পরিবারেই বাড়ছে। এটা আশীর্বাদ। বয়স্কদের অবহেলা করা যাবে না। সম্মানের সঙ্গে সেবা দিতে হবে। তাতে থাকবে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। তাঁকে যেমন সংসার থেকে ছুটি দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলেই মানবিক দায়িত্ব পালন হয় না; তেমনি তাঁর অসুস্থতার দিনে তাঁকে হাসপাতালের ঠিকানায় পৌঁছালে দায় রক্ষা হয় না। একটি শিশু যেমন তার বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে সবার ভালোবাসা চায়, তেমনি বয়স্করাও সবার ভালোবাসা ও মনোযোগ চান। বিশেষ করে নিজের সন্তানদের। এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। রোগও দ্রুত সারে। তাই শরীরের পাশাপাশি মা-বাবা মনের খোঁজও নিতে হবে। ভেবে দেখুন, আপনি যদি আপনার মা বাবার যত্ন করেন তবে আপনার সন্তানেরাও এই শিক্ষা পাবে আপনার কাছ থেকে। নয়তো একসময় আপনিও হয়তো একাকী হাসপাতালে নীরবে চোখের পানি ফেলবেন।
স্থান কৃতজ্ঞতা: আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

সুলতানা আলগিন : সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা





Calendar

August 2025
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  



  1. © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2017 sylhet71news.com
Design BY Sylhet Hosting
sylhet71newsbd