সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে ১০ ঘণ্টা করে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা। সিলেটের অনেকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে দৈনিক জালালাবাদে ফোন করে তাদের ভোগান্তি ও দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। এ সময়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে জরুরী অবতরণের কথা বলা হলেও দুর্ভোগের কোন সমাধান হয়নি।
তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজের অংশ হিসাবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে আগামী তিনমাস রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ থাকছে। সেই সঙ্গে বিজয় দিবসের ফ্লাইং পাস্টের প্রস্তুতির জন্য ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিন বিমানবন্দরের রানওয়ে সোয়া দুই ঘণ্টা করে বন্ধ থাকছে। অর্থাৎ প্রতিদিন এখন ১০ ঘণ্টা করে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ থাকছে।
এর ফলে বাংলাদেশের প্রধান এই বিমানবন্দর ব্যবহারকারী এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের সময়সূচি পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে। কিন্তু যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, স্বল্প সময়ে বেশি ফ্লাইটের চাপ থাকায় তারা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন না হওয়ায় রাত সাড়ে ১০টার পর শাহজালাল বিমানবন্দর ছেড়ে যাচ্ছেনা কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, রাতে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটে চাপ রয়েছে। রয়েছে যাত্রীদের প্রচন্ড চাপও। একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের এয়ারপোর্ট প্রতিনিধি বলেছেন, বিমানবন্দরে বর্তমানে যাত্রীরা হইহুল্লোড় ও চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। রাতে বন্ধ থাকায় দিনের চাপ সামলাতে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। কিন্তু যাত্রীদের ভোগান্তির কোন সমাধান হচ্ছেনা। বিমানবন্দর ১০ ঘন্টা বন্ধের পাশাপাশি করোনাকালীন নানা আনুষ্ঠানিকতা যাত্রীদের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে।
সৌদীগামী সিলেটের বালাগঞ্জের এক যাত্রী জানান, দুপুর ১২টায় তাঁর ফ্লাইট। কিন্ত বিমানবন্দরে তিনি পৌছেঁন ভোর ৬টার মধ্যেই। এরপরই তাঁর দুর্ভোগের শুরু। ৬ ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁেছও তিনি বিমানে উঠতে পেরেছেন মাত্র ১০ মিনিট আগে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পৃথিবীর কোন বিমানবন্দরে এতো দুর্ভোগ আছে বলে তাঁর জানা নেই।
একটি ট্রাভেল এজেন্সির একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাদের সবগুলো ফ্লাইটের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হয়েছে। আবার দিনের বেলায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার ফলেও এতে বড় পরিবর্তন হয়েছে। ”আমরা সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যারা যান, তারা তো সবাই ইমেইল বা ফোন নিয়মিত ব্যবহার করেন না। যাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা হয়তো ফ্লাইট মিস করছেন। এরকম বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রেই ঘটেছে,”
রাতে সৌদি এয়ারলাইন্সের রিয়াদ ও জেদ্দাগামী, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী, তার্কিশ এয়ারলাইন্স ইস্তাম্বুলগামী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রিয়াদগামী, বিমান বাংলাদেশ ও মালিন্দো এয়ারওয়েজের কুয়ালালামপুরগামী, বিমানের আবুধাবিগামী ও কুয়েত এয়ারের কুয়েত সিটিগামীসহ ১৫-১৭টি ফ্লাইট চলাচল করার কথা।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিদেশগামীদের জন্য বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালে মোট তিনটি গেটে ইমিগ্রেশন কাউন্টার রয়েছে। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে মোট চার হাজার মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রী চলাচল করেন। এই তিনটি ইমিগ্রেশন গেট চার হাজার যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এই তিনটির মাঝেও একটি বন্ধ থাকে প্রায় সময়। যে দুটি গেট খোলা, সে দুটোর অনেক কাউন্টারেও ইমিগ্রেশন অফিসার নেই। সব মিলে হযবরল অবস্থা।
বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নতুন হাইস্পিড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণকাজের জন্য ১০ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার মধ্যরাত) থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ থাকবে। এছাড়াও ১১ মার্চ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বেবিচক।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, প্রতিদিন রানওয়ে বন্ধ থাকলেও বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কাজে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ সময় বাংলাদেশে কোনো এয়ারলাইন্সের জরুরী অবতরণের প্রয়োজন হলে তাকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, শাহজালাল বিমানবন্দরে শীতকালীন ফ্লাইট-সূচী শুরু হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে মধ্যরাতের ফ্লাইটগুলোর সময়ও। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে শীতকালীন ফ্লাইটসূচী অনুসরণ করা হয়। কারণ এ সময় রাত ২টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকে। তাই রানওয়েতে ‘ভিজিবিলিটি’ কম থাকে বলে উড়োজাহাজের অবতরণে সমস্যা হয়। এ সময়ের মধ্যে জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইট অন্য যেকোনো বিমানবন্দরে পাঠাতে হয়।
এবিএ/১৪ ডিসেম্বর