সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: ভাড়াটিয়ার কাছে জিম্মি সিলেটের এক প্রবাসী ও বাড়ির কেয়ারটেকার। ভাড়াটিয়া সেজে প্রথমে বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিলেও এখন একই বাড়ির তিনটি কক্ষ জোরপূর্বক দখল করে আছেন ভাড়াটিয়া জামিল আহমদ। প্রতিবাদ করায় বাড়ির কেয়ারটেকারকে মারধোরসহ বাড়ির প্রবাসী মালিকের কাছে ৩০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করেন ওই ভাড়াটিয়। ঘটনাটি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার মোগলা বাজারে। ভাড়াটিয়ার নাম জামিল আহমদ। তিনি সিলেটের মোগলাবাজার নৈখাই গ্রামের শাহনাজ বেগম রিনির ছেলে। আর বাড়ির মালিক ভুক্তভোগী প্রবাসীর নাম কয়েছ আহমদ। তিনি দক্ষিণ সুরমার খালেরমুখ বাজারের ভাঙ্গি গ্রামের মৃত আং রহিমের ছেলে। এ ব্যাপারে বাড়ির কেয়ারটেকার দুলাল মিয়া (৬০) ভাড়াটিয়া ভাড়াটিয়া জামিলের কাছে নিজে নিরাপত্তাহীন উল্লেখ করে মোগলাবাজার থানায় একটি জিডি দায়ের করেন। বাড়ির কেয়াটেকার দুলাল আহমদ জানান, জামিল আহমদ নিজেকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ আহমদের অনুসারী বলে প্রকাশ্যে পরিচয় দিয়ে আসছে।
এদিকে বাড়ির মালিক দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসে থাকার সুবাধে ভাড়াটিয়া জামিল আহমদ ওই বাড়িটি দখলে মরিয়া হয়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই প্রবাসীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখলের অংশ হিসেবে জামিল আহমদ ভূমি খেকো একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। বর্তমানে ওই সিন্ডিকেটের ভূয়া ওয়ারেন্ট, চাঁদাবাজী ও একের পর এক মিথ্যা মামলায় উদ্বিগ্ন ওই প্রবাসীসহ তার পরিবার। ইতোমধ্যে সাজানো মামলায় গ্রেফতার পরবর্তী কারাবরণ করেছেন ওই প্রবাসী। জামিনে মুক্তি পেলেও শঙ্কামুক্ত নন তিনি। ওই চক্রের অব্যাহত হয়রানীর শিকার হওয়া প্রবাসী এখন সরকারের আইনানুগ কতৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সাথে নিজ বসতভিটা থেকে ওই ভূমি খেকো চক্রের উচ্ছেদ চেয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে থাকা নিজ পিতার জীবনের নিরাপত্তা এবং সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দিতে চলতি মাসের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই প্রবাসীর কনে নাজমিন জাহান।
এর আগে ভূমি খেকো এই চক্রের মূল হোতা জামিল আহমদের অব্যাহত হুমকী এবং বাড়ি দখলের প্রচেষ্টায় নিজের নিরাপত্তা হুমকীর সম্মুখীন উল্লেখ করে পৃথক দুটি থানায় জিডি দায়ের করেন প্রবাসী কয়েছ আহমদ। র্যাব-৯ এর অধিনায়ক ও সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবরেও তিনি সুবিচার কামনায় ৩০ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাছাড়া ঘঁনার প্রেক্ষিতে ওই চক্রের মূল হোতা জামিলসহ ৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক সিলেটে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ধারা ৩৮৫/৫০৬ (২) ৩৪ । মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, আসামীরা নগদ ৩০ লাখ টাকা চাঁদা প্রাপ্তি সাপেক্ষে কয়েছ আহমদের বসতভিটা থেকে সরে যাবে। একইসাথে চাঁদা না পেলে নিজ মা কে (শাহনাজ বেগম রিনি) হত্যা করে কয়েছ আহমদের নামে হত্যা মামলা চালিয়ে দিবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে।
এর আগে অভিযুক্ত ভাড়াটিয়া জামিল আহমদ নিজের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে প্রবাসী কয়েছ আহমদের উপর মোগলাবাজার থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৪, তারিখ-১২/০৯/২০২১। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। কয়েছ আহমদের উপর দায়ের করা জামিল আহমদের ষড়যন্ত্রমূলক আরও একটি সিআর মামলা নং ১৭/২০২০ এর তদন্ত করে পিবিআই। পিবিআই’র সিলেট জেলার এসআই সুদীপ দাস ১৬/০৬/২০২০ খ্রিস্টাব্দে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেন। তদন্তে প্রতিবেদনে জামিল আহমদ নারাজি হলে পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত করে সিআইডি। সেই প্রতিবেদনেও মামলাটি অসত্য বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পর পর একাধিক ভুয়া মামলায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কয়েছ আহমদ।
এই ঘটনার পর উদ্দেশ্য প্রণোদিত আরও মামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় ১৭/০৬/২০২১ সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় একটি জিডি দায়ের করেন। জিডি নং ৭৯০। এর পাঁচ দিন পর ২২/০৬/২০২১ তারিখে সিলেটের মোগলাবাজার থানায় আরও একটি জিডি দায়ের করেন। জিডি নং ১২৬৪।
এদিকে ২০/০৭/২০২১ তারিখে জামিল আহমদ কতৃক প্রবাসী কয়েছ আহমদের দখলকৃত বাড়ি দখলমুক্ত করার দাবিতে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন জামিল আহমদের মা শাহনাজ বেগম রিনি নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নিতে চাইলে তিনি তাতে সম্মতি প্রদান করেন। এরপর থেকে সেখানে ছেলে জামিলসহ রিনি বেগম একটি কক্ষ নিয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। পরচিয়ের সুবাধে জামিল আহমদ চৌকিদেখিস্থ প্রবাসী কয়েছ আহমদের অপর একটি বাসায়ও যাওয়া-আসা করতে থাকে। একপর্যায়ে চৌকিদেখিস্থ বাসা থেকে দামি দামি আসবাবপত্র নিয়ে যায় জামিল আহমদ। চলতি বছরের ১০ জুন কয়েছ আহমদ দেশে ফিরে নিজ চৌখিদেখিস্থ নিজ বাসার দামি দামি আসবাবপত্র দেখতে না পেয়ে জামিল ও তার মা কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মা-ছেলে কয়েছ আহমদকে সুদুত্তর না দিয়ে উপরন্তু বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দেন এবং অন্যথায় বিরাট বড় ক্ষতি সাধন হবে বলে হুমকী প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় তিনি চলতি বছরের ২০ জুলাই বাড়ির মালিক প্রবাসী কয়েছ আহমদ ভূমিখেকো চক্রের কবল থেকে নিজের বাড়ি দখলমুক্ত করার আবেদন জানিয়ে সিলেটের পুলিশ কমিশনার বরাবরে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
এদিকে দেশে অবস্থানের পর থেকে জামিল আহমদসহ ভূমিখেকো ওই চক্রের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের কারণে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন প্রবাসী কয়েছ আহমদ। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ। তিনি নিজ সম্পত্তি ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় মাননীয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীসহ উর্দ্ধতন আইনানুগ কতৃপক্ষের ত্বড়িত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জামিল আহমদের মোবাইল নাম্বারে ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় মন্তব্য আদায় করা সম্ভব হয়নি।
এবিএ/১৮