কামরান আহমদ :: ৫/৬টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চলাচলের রাস্তায় কোরবানির পশুর হাট চলছে দুই জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে। তাদের একজন বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। আর অপরজন এই উপজেলার ওয়ার্ড মেম্বার ফায়দুল ইসলাম।

স্থানীয় সচেতন মহলের প্রতিবাদের মুখে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের সুবাদে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসন শনিবার বিকেলে আছিরগঞ্জে অভিযান চালায়। তবে তা একদম নিস্ফল অভিযান। পশুর হাট চলছে রাস্তায়। প্রশাসন কোন জরিমানাও করেনি। তারা মাহবুব চেয়ারম্যানের প্রভাবের কাছে নতজানু হয়ে ফিরে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসিল্যান্ড মিজ মুশফিকীন নূর জানিয়েছেন, জরিমানা না করলেও তিনি রাস্তা থেকে হাট সরানোর নির্দেশ দিয়ে এসেছেন।

এবার করোনার কারণে রাস্তায় পশুর হাটের ব্যাপারে সরকার ও মন্ত্রনালয়ের অবস্থান ছিল কঠোর। প্রথমে অনুমোদন দেয়ার কথা না থাকলেও শেষ মুহুর্তে এসে অস্থায়ী পশুর হাট্রে অনুমোদন দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে সরকারের প্রধান তিন শর্ত হচ্ছে, রাস্তায় পশুর হাট বসানো যাবেনা, হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দুটি রাস্তা থাকতে হবে, প্রবেশ মুখ ও বের হওয়ার পথে রাখতে হবে স্যানিটাইজার।

কিন্তু আছিরগঞ্জে এসবের কিছুই মানা হচ্ছেনা। পশুর হাট বসানো হয়েছে আছিরগঞ্জ বাজার-খাগাইল-দেবারাই রাস্তায়। গত কয়েক বছর ধরেই তারা এমনটা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এতে স্থানীয়দের চলাফেরা করাই দায়। তার উপর এখন চলছে করোনাকাল। এসময়টাতে এলাকাবাসীকে মরণব্যাধির ঝুঁকিতে ফেলেছেন দুই জনপ্রতিনিধি।

জানা গেছে, বাজারটি ইজারা নিয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলার ৮নং তিলপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও এই ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার ফায়দুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। তারা গত কয়েক বছর ধরে আছিরগঞ্জ থেকে খাগাইল-দেবারাইগামী রাস্তায় পশুর হাট বসাচ্ছেন। এবারও তাদের এই প্রস্তুতির খবর আগে থেকেই গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছিল। কিন্তু বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা ছিলেন এতদিন। অনেকটা কুম্ভকর্ণের নিদ্রার মতো।

সেই নিদ্রা কিছুটা ভেঙেছে শনিবার। বিকেল ৪টার দিকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার জন্য আছিরগঞ্জে উপস্থিত হন বিয়ানীবাজার উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা মিজ মুশফিকীন নূর। তবে তিনি সেখানে কেবল উপস্থিতই হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মিনিট দশেক অবস্থানকালে মাহবুব চেয়ারম্যান ও ফায়দুল মেম্বারের সাথে কথা বলে তিনি আবারও ফিরে গেছেন। কোন জরিমানাও করেন নি।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কোন জরিমানা করা হয়নি। তবে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে রাস্তা ছেড়ে দিতে।

তার সেই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে কি না তাও তিনি বলতে পারেন নি। কার্যকর না হওয়ার কথা জানালে তিনি বলেন, পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই হচ্ছে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসনের করোনাকালীন কোরবানীর পশুর হাটের ভূমিকা।

এর আগে আছিরগঞ্জ এলাকাবাসীকে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর। ভ্রাম্যমান আদালত হলোনা কেন? ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও কোন জরিমানা আদায় করলেন না কেন? এমনসব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা বুঝতে পারছিনা। বিষয়টি আমি দেখবো।

এদিকে জনপ্রতিনিধি হয়েও এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলার কারণ, জানতে চেয়ে তিলপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের মোবাইলে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এ ব্যাপারে অন্যতম ইজারাদার ও ইউপি সদস্য ফায়দুল ইসলাম বলেন, আশপাশে কোন জায়গা না থাকায় তারা রাস্তায় বাজার বসিয়েছেন। তিনি আরও জানান, উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও তাদের কোন জরিমানা করা হয়নি।

উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মিজ মুশফিকীন নূরের নিস্ফল অভিযান নিয়ে আছিরগঞ্জ এলাকার সচেতন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের করোনাকালীন ঝুঁকিতে ফেলার জন্য তারা এখন তাকেসহ বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসনকে দায়ী করছেন।

সিলেট৭১নিউজ/টিআর/কামরান