গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি: প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) সিলেটের গোয়াইনঘাটে জাফলং নদী থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও অবাধে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। ইসিএ ঘোষিত জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাথর তুলতে গিয়ে শ্রমিক হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে। নিহত ওই বারকি শ্রমিকের নাম পলাশ আহমেদ (১৬)। সে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থানার জাতীয়পাড়া এলাকার মঙ্গল মিয়ার ছেলে।
বারকি শ্রমিকের কাজ করার সুবাদে পলাশ আহমেদ তার বাবা-মা ও পরিবার পরিজনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জাফলংয়ের মেলার মাঠ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল।
পুলিশ ও পাথরশ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে পলাশ আহমেদ তার ভাই ভুট্টোকে নিয়ে জাফলংয়ের ডাউকি নদের মন্দিরের জুম এলাকায় পাথর উত্তোলন করতে পানিতে গভীর একটি গর্ত করে। বিকেল পাঁচটার দিকে গর্তের পাশে বারকি নৌকার একটি বোমা মেশিন স্থাপন করে গর্ত থেকে পাথর উত্তোলনের চেষ্টা চালায়। এ সময় অসতর্ক অবস্থায় বোমা মেশিনের ধাক্কা লেগে পলাশ নৌকা থেকে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গর্তে পড়েন বাবা মঙ্গল মিয়া, ভাই ভুট্টোসহ তিনজন। আশপাশের এলাকার শ্রমিকেরা গিয়ে গর্ত থেকে পলাশকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
স্থানীয় লোকজনেরা জানান, ইসিএ নির্দেশনা অনুযায়ী, জাফলংয়ে বালু-পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাথরশ্রমিকেরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের চেষ্টা করেন। পলাশ যে বোমা মেশিনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিহত হয়েছে, সেটি জাফলংয়ের পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা ইমরান হোসেন জামাইর বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা জামাই সুমনের নেতৃত্বে এ পাথর উত্তোলন হলেও প্রশাসন মাঝে মাঝে লোক-দেখানোর অভিযান চালায়। এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যাতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা না হয় সেজন্য পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাফলংকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা হয় ২০১২ সালে। সেই প্রজ্ঞাপন জারি হয় ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে বালু ও পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা বন্দোবস্ত কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। বালু ও পাথর উত্তোলনও বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির উন্নয়নে জাফলংয়ে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডাউকি নদ থেকে আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১১টি মৌজা নিয়ে মোট ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইসিএ। ঘোষিত এলাকার মধ্যে জাফলংয়ের ডাউকি নদও পড়েছে। স্থানীয় লোকজনেরা জানান, ইসিএ নির্দেশনা অনুযায়ী, জাফলংয়ে বালু-পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাথরশ্রমিকেরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের চেষ্টা করেন।
এ দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদ। পরিদর্শন শেষে দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
সিলেট৭১নিউজ/টিজা