সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ফুলতলা বটুলি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক আব্দুল মুমিন বাপ্পার লাশ বাড়ির পাশে দাফন করা হয়েছে। সোমবার (২২ মার্চ ) রাত ৮ টায় ফুলতলার পূর্ব বটুলি জামে মসজিদে জানাযার পর বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে বাপ্পার লাশ দাফন করা হয়।
বাপ্পার লাশ দাফনের সময় আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কান্নায় আশেপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ভারতীয় বিএসএফরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন ও নানা সূত্র ধরে অনেক বাংলাদেশীদের এরকম নির্বিচারে হত্যা করছে। নির্বিচারে মানুষ খুনের মূল ইস্যু তাঁদের চোরাচালান। তবে ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরাইপথে যেসব জিনিস আসে, এর জন্য পাচারকারীরাও অপরাধী।
আর পাচারকারী বাংলাদেশী হওয়ার কথা নয়। কেননা ভারতীয় নাগরিক যদি পাচার না করতো তাহলে বাংলাদেশী দু’চারজন চোরাকারবারীরাও এ বিশাল কাঁটাতার কেটে অবৈধভাবে কোনোকিছু নিয়ে আসার সুযোগ পেতো না। এছাড়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের টহল কাঁটাতারের বেড়ার একেবারে কাছাকাছি হওয়ায় এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া টহল খুব সহজে ফাঁকি দিয়ে কাঁটাতার কেটে ভিতরে প্রবেশ করা একেবারে সহজ নয়। এরপরও ভারতীয় নাছির বিড়ি, কাপড়, মদ, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গরুসহ আরো বেশকিছু জিনিসপত্র চোরাইপথে প্রায়ই আসার খবর পাওয়া যায়। এতো নজরদারির পর এসব কিভাবে কার মাধ্যমে বাংলাদেশী চোরাকারবারির হাতে পৌঁছে এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়?
তারা আরোও বলেন, বিএসএফের ভাগাভাগিতে যখন গড়মিল দেখা দেয়, তখনই নির্বিচারে হত্যা করা হয় শুধু বাংলাদেশের মানুষকে। সীমান্তে হত্যা তাঁদের স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে।তা না হলে, বাছবিচার ছাড়া একজন মানুষ আরেকজন তরতাজা মানুষকে হোক সে অপরাধী কিভাবে হত্যা করে?
সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল ৫ টার দিকে ফুলতলা বটুলি সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ও বিজিবির পতাকা বৈঠক শেষে আব্দুল মুমিন বাপ্পা মিয়ার গলিত লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ।এ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় স্বাক্ষর করে লাশ গ্রহণ করেন বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সুবেদার দেলোয়ার হোসেন, জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি।ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের কদমতলা থানার ওসি কৃষ্ণধন সরকার, বিএসএফের-১৬৬ নং ব্যাটালিয়নের সহকারি কমান্ডার সুরিন্দর কুমার সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইমতিয়াজ গফুর মারুফ বলেন, মিডিয়ার কল্যাণে সকলের সহযোগিতায় বাপ্পার লাশ দেশে আনা গেছে। তবে এখানে বাপ্পার মতো যারা এসব কাজে জড়িত তারা পেটের দায়ে সীমান্তে গিয়ে অপরাধে জড়ায়। বিজিবি যদি অবহেলা ও দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা না দেখাতো তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতো না। বিজিবির দীর্ঘসূত্রিতার ফলে আমরা আজ বাপ্পার গলিত লাশ পেলাম।
লাশ আনার দীর্ঘ সূত্রিতার ব্যাপারে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী বলেন, উপর মহলে চিঠি পৌঁছানোর পর সিদ্ধান্ত আসতে সময় লেগেছে। এজন্য লাশ দেশে আনতে দেরী হয়।
উল্লেখ্য, শনিবার (২০ মার্চ) ভোরের দিকে উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বটুলী এলাকায় বাংলাদেশি পিলার ১৮২২ এর বিপরীত পাশে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার অভ্যন্তরে ওই যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। তিনি উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বটলী গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে।
সিলেট৭১নিউজ/টিজা