এসবিএন ডেস্ক: তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রবেশাধিকার নিয়ে মোবাইল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, রেডিও এবং কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ওপর এক জরিপে দেখা গেছে দেশের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।

জরিপে আরো দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী পরিবার মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশ বা ১৭ লাখ। ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৬টি পরিবারের অন্তত একজন সদস্যের মোবাইল আছে। কম্পিউটার ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি বা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ব্যক্তি জীবদ্দশায় একবার হলেও কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন। টেলিভিশন রয়েছে প্রায় অর্ধেক বা ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার ২৫৭টি পরিবারে।

সম্প্রতি ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রবেশাধিকার নিয়ে মোবাইল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, রেডিও ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ওপর এক জরিপ পরিচালনা করে গত ৪ জানুয়ারি ফল প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সারা দেশের ৩৬ হাজার ২৪২টি থানা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ জরিপটি করা হয়।

জরিপকালে দেশে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেশব্যাপী ৩৬ হাজারের বেশি পরিবারের ১ লাখ ৩১ হাজার মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এ জরিপ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্র জানিয়েছে, দিন দিন বেড়েই চলেছে দেশের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। জরিপকালীন সময়ের তুলনায় বর্তমানে এর ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এর আগে জাতীয় পর্যায়ে এ ধরনের জরিপ না থাকায় দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক চিত্র ছিল না। ফলে ভবিষ্যতে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণে এ জরিপ মূল ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে ১৫ বছরের নিচে ২ দশমিক ৪ ভাগ জনগোষ্ঠী কম্পিউটার ব্যবহার করে। এ বয়সী দেড় শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তথ্য প্রযুক্তির বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এ বয়সীদের সাড়ে ১০ শতাংশ কম্পিউটার, ১২ শতাংশ ইন্টারনেট, ৯০ দশমিক ৩ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করে।

অন্যদিকে ২৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ৫ দশমিক ৮ ভাগ কম্পিউটার, ৭ দশমিক ৭ ভাগ ইন্টারনেট এবং ৮৬ দশমিক ২ ভাগ মোবাইল ব্যবহার করছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাত্র ২৯ দশমিক ৬ ভাগ তাদের কর্মস্থলে ইন্টারনেট ব্যবহার সুবিধা পায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার সুবিধা রয়েছে মাত্র ১৫ ভাগ ব্যবহারকারীর। সাইবার ক্যাফেতে ব্যবহার করছে মোট ব্যবহারকারীদের ২৫ দশমিক ৮ ভাগ। আবাসস্থলে এই হার ৪০ শতাংশ।

জরিপে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ বা ১১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪টি পরিবারে ল্যান্ডফোন রয়েছে। এর ৮ দশমিক ১ শতাংশই ব্যবহার হচ্ছে শহর অঞ্চলে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এক-পঞ্চমাংশ (২৪ দশমিক ৯ শতাংশ) পরিবারে ল্যান্ডফোন থাকলেও গ্রামে ১ শতাংশ পরিবারে এ ধরনের ফোন ব্যবহার করা হয়। মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার রেডিও শোনার সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ৪৬ দশমকি ৩ শতাংশ পরিবারের অন্তত একটি হলেও টেলিভিশন রয়েছে। তবে দেশের উন্নয়ন তথ্য পেতে এখনও টেলিভিশন ও রেডিও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণ তথ্য পাচ্ছে।

সবমিলিয়ে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে দেশে ৭৯ শতাংশ মানুষের হাতে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন রয়েছে। দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশই নিজ বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। কর্মস্থলে ব্যবহার করছে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যবহারকারী।

উত্তরদাতা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা এক বছরে দিনে অন্তত একবার হলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। ৪৫ দশমকি ৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন তারা সপ্তাহে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন।

জরিপকালে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ, অনলাইন শপিং এবং অন্যান্য সেবা, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অনলাইনে শিক্ষাগ্রহণ, চলচ্চিত্র, ছবি, গান ডাউনলোড করা, অনলাইনে টিভি দেখা কিংবা কোনো ভিডিও দেখা, রেডিও শোনার বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া অনলাইনে পত্রিকা পড়া, বিভিন্ন প্রকারের ম্যাগজিন ও বই পড়ার বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের চিত্র এ রকম-

বিভাগ কম্পিউটার মোবাইল ল্যান্ডফোন রেডিও টেলিভিশন ইন্টারনেট
বাংলাদেশ ৫.৭ ৮৭.৭ ৩.১ ১৩.৯ ৪৬.০ ৪.৮
বরিশাল ২.৬ ৮৫.৪ ১.৭ ১৮.২ ২৯.৬ ৬.৩
চট্টগ্রাম ৪.৮ ৯০.৮ ২.৬ ২৪.২ ৪৭.০ ৫.০
ঢাকা ১০.৫ ৯১.৩ ৫.২ ১৪.৪ ৫৯.৭ ৭.০
খুলনা ২.৪ ৮৭.১ ১.৯ ১০.০ ৪৩.০ ৪.২
রাজশাহী ২.২ ৮১.৯ ১.৭ ৮.০ ৩৭.৪ ১.৫
রংপুর ২.৭ ৮২.২ ১.৫ ৭.০ ২৭.৩ ১.০
সিলেট ৪.৮ ৮৬.৭ ৩.২ ১১.৪ ৪৩.৩ ৬.৮