October 21, 2025, 11:07 am

সংবাদ শিরোনাম :
ইম্পেরিয়াল মেডিকেল হাসপাতালের উদ্যোগে ৯ দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প সম্পন্ন ব্যবসায়ী আলী হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টায় রিয়াজ মেম্বারের ভাই গ্রেফতার বড়লেখার রাজনীতিতে পরীক্ষিত নেতৃত্ব প্রভাষক ফখরুল ইসলাম বাংলাদেশীদের জন্য দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা উত্তরা বিমান দুর্ঘটনা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫০ : প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব আগস্টে নতুন জুলাই সংবিধান আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক এনসিপির রহমানিয়া টুকা হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সিলেটে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, চলতি বছরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩ মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: শিশুর লাশে ভরে গেল ক্যাম্পাস, ২৫ জন আশঙ্কাজনক সিলেট মহানগরীর ১৪নং ওয়ার্ডে তালামীয ইসলামিয়ার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সাংবাদিকের উপরে মিথ্যা মামলা কোম্পানীগঞ্জে ফ্যাসিস্টের দোসরদের পুণর্বাসন নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতার উপর হামলা মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার শুরু কুলাউড়ায় বিএসএফের গুলি, বাংলাদেশির লাশ তুলে নিল ভারত মাহি-শাবাব হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি যুক্তরাজ্যে ছবি ভাইরাল: নবীগঞ্জে ওয়ালিদের বাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ কুলাউড়া সীমান্তে আবারও পুশইন, ১৪ জন আটক ওসমানী হাসপাতালে সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ সিলেট সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৬ জনকে আটক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সাবেক এমপি ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে ছাত্রশিবিরের কোরআন কুইজে হিন্দু শিক্ষার্থীর বিজয় সারা দেশে গণজমায়েতের ডাক এনসিপির প্রতিটি রক্তবিন্দুর প্রতিশোধ নেয়া হবে: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনানি শেষ, রায় ২৭ মে এম.সি কলেজ তালামীযের কাউন্সিল সম্পন্ন সিলেটে এবার বিষ্ফোরক আইনে ২৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মিজানকে জড়িয়ে অপপ্রচারের নিন্দা ও হুমকিদাতাকে গ্রেফতারের দাবি সিলেটে সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা: ষড়যন্ত্রমূলক দাবি পরিবারের সুনামগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশী নিহত দিরাইয়ে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২৬
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)

সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)

Please Share This Post in Your Social Media

Manual1 Ad Code

এসবিএন ডেস্ক:
আমাদের প্রিয় নবী সাঃ ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র মক্কানগরীতে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ৪০ বছর পর নবুয়তি লাভ করেন। নবুয়তি মিশনের পরম্পরা ও ধারাবাহিকতা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। তাঁর মিশনের লক্ষ্য ছিল ইহকাল ও পরকালের মুক্তি। মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম করা। তিনি সম্যক উপলব্ধি করেন যে ন্যায়বিচার এমন এক প্রচলিত নীতি, যার প্রয়োগ সুস্থ সমাজের সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য। যে লক্ষ্য নিয়ে তিনি দুনিয়ায় আবির্ভূত হন, ২৩ বছরে প্রাণান্তকর প্রয়াস চালিয়ে তিনি তা কার্যকর করেন সার্থকভাবে। তাঁর উপস্থাপিত জীবনব্যবস্থা মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে সব দিক দিয়ে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নিয়ামক ও চালিকাশক্তি। মানবিক মর্যাদাবোধ ও পারস্পরিক দায়িত্ববোধ এ গুণের কারণেই সৃষ্টি হয়। নিজের অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি সমাজের অপরাপর সদস্যদের অধিকারের প্রতি সচেতন থাকা জরুরি, যেন কারো প্রতি জুলুম না হয়। একবার কুরাইশ বংশীয় মাখজুম গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত মহিলা চুরির অপরাধে ধরা পড়লে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হাত কর্তনের নির্দেশ দেন। আভিজাত্য ও বংশমর্যাদার উল্লেখ করে সে মহিলার শাস্তি লাঘবের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে তাঁর একান্ত স্নেহভাজন উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) সুপারিশ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর দণ্ডবিধির ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’ অতঃপর লোকজনকে আহ্বান করে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী জনগণ পথভ্রষ্ট হয়েছে। এ জন্য যে তাদের কোনো সম্মানিত লোক চুরি করলে তখন তারা তাকে রেহাই দিত। আর যখন কোনো দুর্বল লোক চুরি করত তখন তারা তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে, তবে অবশ্যই তার হস্ত কর্তন করে দিতাম।’ (বুখারি ও মুসলিম)

Manual6 Ad Code

সোরাকা নামক জনৈক সাহাবি এক বেদুইনের কাছ থেকে উট ক্রয় করে তার মূল্য পরিশোধ না করায় বেদুইন তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে হাজির করল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রশ্নের জবাবে সোরাকা বলেন, ‘মূল্য পরিশোধ করার ক্ষমতা তাঁর নেই।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বেদুইনকে বলেন, ‘তুমি এটাকে বাজারে বিক্রয় করে তোমার পাওনা উসুল করে নাও।’ বেদুইন তা-ই করল। (দারে কুতনি)

এভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি তাঁর পরিচালিত সমাজ ও রাষ্ট্রে সুবিচার নিশ্চিত করার ব্যাপারে কতখানি যত্নবান ছিলেন, ওপরের ঘটনা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যায়নিষ্ঠ বিচারব্যবস্থা অপরিহার্য পূর্বশর্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইজতিহাদ করে বিচার করে এবং তাঁর ইজতিহাদ যদি সঠিক হয়, তাহলে তাঁর জন্য দুটি পুরস্কার। আর ইজতিহাদে ভুল হলে একটি পুরস্কার। বিচারক তিন প্রকার। তন্মধ্যে দুই প্রকার জাহান্নামি ও এক প্রকার জান্নাতি। যে ব্যক্তি হক জেনে তার দ্বারা ফয়সালা করে সে জান্নাতি। যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত ফয়সালা করে, সে জাহান্নামি এবং যে ব্যক্তি বিচারের ক্ষেত্রে জুলুম করে, সেও জাহান্নামি।’ (ইবনে মাজাহ, পৃ. ৩৪১-৩৪২)

সামাজিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ কয়েকটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রথমত, তিনি অর্থসম্পদ অর্জন, সঞ্চয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন আনার প্রয়াস চালান। সমকালীন দুনিয়া, বিশেষত প্রাক ইসলামী সমাজে ধনসম্পদ ছিল আভিজাত্যের মাপকাঠি, কামিয়াবির নিদর্শন, শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। তাই মানুষ হন্যে হয়ে অর্থ ও সম্পদ অর্জনের পেছনে ছুটেছে সারা জীবন। বৈধ-অবৈধ, হালাল-হারাম, ন্যায়-নীতি, পাপ-পুণ্য—এসবের ধার ধারেনি। এভাবে মানুষ হয়েছে অর্থ-সম্পদের দাস আর অর্থসম্পদ হয়েছে তাদের প্রভু। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্যে ওহিনির্ভর যে দর্শন পেশ করেন তা হলো, মানবজীবনে অর্থসম্পদ অপরিহার্য। জীবন ও জীবিকার তাগিদে অর্থসম্পদ অর্জন করতে হয়, কাজে লাগাতে হয়; কিন্তু তা জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। অর্থ, ধনসম্পদসহ দুনিয়ার সব কিছুই মানুষের সেবক ও খাদেম। পৃথিবীর বস্তু নিচয় মানুষের জন্য সৃষ্টি। (সুরা আল বাকারা : ২৯)

Manual8 Ad Code

সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) জনগণকে নীতি ও বিধিসম্মতভাবে অর্থসম্পদ অর্জন করার এবং জাকাত ও সদকার মাধ্যমে সে অর্জিত সম্পদের কিয়দংশ দুঃখী ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দেন। অধিকন্তু রাষ্ট্রের আর্থিক সম্পদে জনগণের অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয় ধরনের রাজস্ব প্রবর্তন করেন। এগুলো হলো—১. আল-গনিমাহ বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, ২. জাকাত, ৩. খারাজ বা অমুসলিম কৃষকদের ভূমি কর, ৪. জিজিয়া বা অমুসলিমদের নিরাপত্তা কর, ৫. আল-ফাই বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি, ৬. সদকা বা স্বেচ্ছাধীন দান।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে আদর্শ সমাজ গড়ে তোলেন। বংশকৌলীন্য ও আভিজাত্যের গৌরবের পরিবর্তে মানবতার ভিত্তিতে সমাজের বন্ধন সুদৃঢ় করেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দেন, ‘আরবের ওপর অনারবের, অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সব মানুষ একে অপরের ভাই। সব মানুষ আদমের বংশধর আর আদম মাটি থেকে তৈরি।’ (মুসনাদে আহমাদ : খ. ২, পৃ. ৩৩) এই পৃথিবীতে সব মানুষই যে আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান, কৃষ্ণ-শ্বেত, ধনী-নির্ধন—সবাই যে আল্লাহর সৃষ্ট মানুষ, সব মানুষই যে পরস্পর ভাই ভাই, ধর্মীয় ও কর্মীয় অধিকার যে সব মানুষেরই সমান—এ কথা বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন এবং স্বীয় কর্মে ও আচরণে প্রমাণ করেন ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এ কারণে ইসলামে সবার জন্য স্বীকৃত হয়েছে ন্যায়বিচারের অধিকার।

Manual2 Ad Code

রাসুলুল্লাহ (সা.) শতাব্দীর এমন এক ক্রান্তিকালে নতুন সমাজ গড়ার প্রয়াসী হন, যখন গোটা দুনিয়ার বিভিন্ন সমাজে বর্ণপ্রথা, বর্ণবৈষম্য, বংশকৌলীন্য ও আভিজাত্যের দম্ভ মানুষকে গৃহপালিত জন্তু অথবা বিশেষ বৃক্ষের চেয়ে হীন পর্যায়ে নিয়ে আসে। জন্তুবিশেষ ও বৃক্ষবিশেষকে পবিত্র জ্ঞানে অর্চনা করা হতো তখন। সাধারণ মানুষের তুলনায় এসব জন্তু-বস্তুর মর্যাদা ছিল অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মননে ও মানসিকতায় এ কথা চিত্রায়িত করতে সক্ষম হন যে সৃষ্টিজগতে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান ও সম্মানের যোগ্য এবং ভালোবাসার পাত্র হলো মানুষ। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। দুনিয়ার সব কিছু মানুষের কল্যাণে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ইনসাফপূর্ণ যে সমাজ কায়েম করেন, তার ভিত্তি ছিল নৈতিকতা ও মানবজাতির সার্বজনীনতা। মানুষ যদি রিপুর তাড়নার কাছে পরাভূত হয়, তাহলে সুস্থ সমাজের বিকাশধারায় সে কোনো তাত্পর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারে না। মনুষ্যত্বের উজ্জীবন, চারিত্র্যিক উত্কর্ষ ও নৈতিক উপলব্ধি সুস্থ সমাজ বিকাশে সহায়ক আর ইন্দ্রিয়জাত প্রবণতা, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, অনিষ্টকর প্রথা সমাজের সুস্থতার ভিত্তিমূলকে একেবারে নড়বড়ে করে দেয়। জন্ম হয় জুলুম ও বেইনসাফির। এই উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুয়া খেলা, মদ্যপান, নেশা গ্রহণ, কুসিদ প্রথা, জিনা-সমকামিতা ও অহেতুক রক্তপাত নিষিদ্ধ করে দেন। ফলে সমাজবিরোধী কার্যকলাপের ভয়াবহতার হাত থেকে মানুষ রেহাই পায়। উল্লেখ্য, মদ্যপান, জুয়াসহ যাবতীয় অমার্জিত, নীচু স্বভাবের অনিষ্ঠ কার্যকলাপ ও সব ধরনের আতিশয্য হলো খ্রিস্টান-ইহুদি ও পৌত্তলিক সমাজের অভিশাপ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো, সভ্যতার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে ধর্মনিয়ন্ত্রিত ও মানবিকতায় উজ্জীবিত নতুন সমাজের গোড়াপত্তন। বিশ্বমানবতার প্রতি এটা মহানবী (সা.)-এর অসামান্য ইহসান।

Manual5 Ad Code

সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) তত্কালীন সমাজে প্রচলিত দাসপ্রথা উচ্ছেদে সাহসী ভূমিকা রাখেন। বিশ্বের ইতিহাসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-ই প্রথম, যিনি দাসপ্রথার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। তখনকার যুগে গোটা গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্য দাসপ্রথার ওপর গড়ে উঠেছিল। খ্রিস্টজগত্ ও আরব সমাজেও ছিল দাসপ্রথার অবাধ প্রচলন। (উত্. গধলরফ অষর কযধহ, গঁযধসসধফ, ঞযব ঋরহধষ গবংংবহমবত্, ঢ়. ৩৩৭.) প্রভুরা নিজেদের মালিক-মনিব মনে করে দাসদের শ্রমকে শোষণ করত, তাদের দ্বারা অমানুষিক পরিশ্রম করাত। অনেক সময় তাদের ওপর নেমে আসত নির্যাতনের খড়গ-কৃপাণ। দাসদের জীবন ছিল পশুর মতো। পণ্যদ্রব্যের মতো হাটবাজারে তাদের বিক্রি করা হতো। মানুষ হিসেবে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। মহানবী (সা.) শতাব্দীপ্রাচীন দাসপ্রথার অবসানকল্পে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং দাসমুক্তিকে সওয়াবের উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গৃহীত পদক্ষেপ দাসদের মানুষের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে। মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন, কারো করতলগত হওয়াটা তার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ মানবসন্তান স্বভাবগত চাহিদা ও ইমানের দাবিতে ধর্মীয় কার্যকলাপ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে অপারগ। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তিই তার জীবন, তার স্বাধীনতা তার শক্তি। দাসমুক্তিকে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে মহানবী (সা.) ঘোষণা দেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান দাসকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করবে, (আজাদকৃত দাসের) প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার (মুক্তি দানকারীর) প্রত্যেক অঙ্গকে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দান করবেন।’ (মিশকাত, হা. ৩২৩৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) কেবল ঘোষণা দিয়ে ক্ষান্ত হননি, নিজে দাস মুক্ত করে বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করে দাসমুক্তিতে অংশগ্রহণ করেন। এভাবে দাসরা মানবাধিকার ফিরে পেয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্রীতদাস জায়েদ ইবনে হারেস (রা.)-কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। হজরত আনাস (রা.), হজরত সালমান ফারসি ও সুহাইব রুমি (রা.) এবং অন্য ক্রীতদাসরা সামাজিক মর্যাদা লাভ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খেদমত আনজাম দেন। গতকালের ক্রীতদাস আজকের সেনাপতি, আগামীকাল রাষ্ট্রপ্রধান, যাঁদের দ্বারা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় যে বৈপ্লবিক অবদান রাখেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নারীর সামাজিক মর্যাদা দান। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ক্রমান্বয়ে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ইতিহাসে এই প্রথম মায়েরা সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করেন। প্রাক-ইসলামী যুগে পৃথিবীর কোথাও নারীর সামাজিক মর্যাদা ছিল না। তারা ছিল অবহেলার পাত্র ও সন্তান উত্পাদনের যন্ত্র। তাদের অপবিত্র মনে করা হতো। সমাজে যাতে নারীজাতির সম্মান ও মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়, তার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সমাজের অর্ধেকাংশ নারীকে অবহেলা করলে সামাজিক সুবিচার সুদূরপরাহত হবেই, এ চেতনা আল্লাহর রাসুলের মধ্যে ছিল পুরোপুরি কার্যকর। রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ঘোষণা দেন, ‘সাবধান! তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, কেননা তারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সাবধান! তোমাদের স্ত্রীর ওপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপরও রয়েছে তাদের অনুরূপ অধিকার। পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের রক্ষক এবং স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের এবং সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণকারী।’ (রিয়াদুস সালেহিন : ১ খ., পৃ. ২৭৬, ২৮৩) বিবাহ, বিধবা বিবাহ, খুল’আ তালাক, স্ত্রীলোকের মৃত পিতা, মৃত স্বামীর সম্পত্তি ভোগের অধিকার প্রভৃতি বিধান দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সা.) ন্যায় ও ইনসাফ নিশ্চিত করে পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলেন, যা অন্য যেকোনো সামাজিক কাঠামোর চেয়ে ছিল উন্নততর।

ওপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আমরা এই যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তা ছিল যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক। মদিনায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজকাঠামোতে যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছিল, পৃথিবীর অন্য কোনো সমাজে তার নজির পাওয়া মুশকিল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শের অনুসরণে খোলাফায়ে রাশেদিন যে সমাজব্যবস্থা কায়েম করেন, তা ছিল পুরোপুরি সুবিচার ও ন্যায় ও ইনসাফনির্ভর। মানুষের প্রতি ন্যায়বিচারের যে নজির ইসলামের মহান রাসুল (সা.) দুনিয়ার বুকে স্থাপন করে গেছেন, তার আলোর শিখা এখনো পৃথিবীতে অনির্বাণ।





Calendar

October 2025
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031



  1. © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2017 sylhet71news.com
Design BY Sylhet Hosting
sylhet71newsbd
Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code