এসবিএন নিউজ, দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি জুনেল আহমেদ আরিফ: কিছু দিন আগেই উদ্বোধন হলো সিলেট নগরীর নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন কাজিরবাজার ব্রীজ। এর সংযোগ সড়ক মিলেছে এক দিকে নগরীর শেখঘাটস্থ জিতু মিয়ার পয়েন্ট ও অন্য দিকে দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা হয়ে ষ্টেশনরোডে। সংযোগ সড়কের অদূরেই সিলেট রেলওয়ে ষ্টেশন। ষ্টেশন থেকে এই সড়ক অতিক্রম করেছে সিলেট-ছাতক রেললাইন এর লেভেল ক্রসিং। অথচ এই লেভেল ক্রসিং এ নেই কোন গেইটম্যান। রয়েছে কেবল সতর্কতামূলক ২টি সাইনবোর্ড।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লেভেল ক্রসিং এর কাছে পাশাপাশি ২টি সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টানানো। একটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং অন্যটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
সওজ এর সাইনবোর্ডে লিখা “সাবধান! এই গেইটে কোন গেইটম্যান নাই। পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন”।
আর রেলওয়ের সাইনবোর্ডে লিখা রয়েছে “সাবধান! সামনে গেইটম্যান বিহীন লেভেল ক্রসিং। নিজ দায়িত্বে পারাপার হবেন”।
অথচ সদ্য উদ্বোধন হওয়া এই সেতুটি পথচারী আর যানবাহনে বেশ ব্যাস্ত। প্রতিদিন হাজারো মানুষ আর অসংখ্য যান-চলাচল করছে সেতুটি দিয়ে। কিন্তু গেইটম্যান বিহীন চরম ঝুকিপূর্ণ ও অনিরাপত্তায় পড়ে আছে সেতুর সংযোগ সড়কটি। অতি সহজ সরল পথচারী আর চালকরা নিজেও জানেন না যে, কতটুকু বিপদজনকভাবে তারা ব্যাবহার করছেন রাস্তাটি। কিছুক্ষন পরপরই এই রাস্তাটি অতিক্রম করে ট্রেন চলাচল করছে। আর এর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চলাচল করছেন ঐ সেতু দিয়ে। এছাড়া সেতুর দু’পারে রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন অসংখ্য স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এই সেতুটি ব্যাবহার করছেন নিজ দায়িত্বে! তারাও জানেন না, তাদের একটু অসতর্কতায় মুহুর্তের মাঝেই ঘটে যেতে পারে মারাত্নক বড় দুর্ঘটনা। যেহেতু আমাদের দেশে শিক্ষার হার শতভাগ নয়। বিশেষ করে সিলেটীদের শিক্ষার হার সার্বিকভাবে নিতান্তই কম। এমনও আছে যারা অনেকেই পড়তে পারবেন না, এই নোটিশ বোর্ডের সতর্ক বাণী। সে সকল মানুষগুলোর নিরাপত্তার দায়ভার কে নেবে? এমন প্রশ্নও সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, সেতুর কাজ চলাকালীন এই সেতুর সংযোগ সড়কে গেইটম্যান ও ক্রসিং বক্স স্থাপনের জন্য সিলেট রেলওয়েকে প্রদান করা হয়েছে প্রায় ১কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু সেতুটি গত ৮ অক্টোবর উদ্বোধন হলেও এখনও কাজই শুরু করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাই জনগনের প্রশ্ন কোথায় গেলো এই টাকা!
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিশেষ প্রকৌশলী চন্দন কুমার বসাক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজটি প্রক্রিয়াধীন আছে, ক্রসিং বক্স স্থাপনের জন্য রেলওয়েকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কাজ শুরু না করায় আমরা সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড লাগিয়েছি’। এমতাবস্থায় সাধারন পথচারী ও চালকদের দাবী, সকলের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সড়কে গেইটম্যান ও বক্স স্থাপনের কাজ অচিরেই শুরু করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ১৪ দলীয় বিএনপি জোটের আমলে ২০০৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের মধ্যে এর নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে ব্যার্থ হয়। এরপর ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ফের সেতু প্রকল্প সংশোধন করে এর দৈর্ঘ্য ২৫ মিটার ও নির্মাণ ব্যায় বাড়িয়ে করা হয় ১৬২ কোটি টাকা।