অজয় বৈদ্য অন্তর:: মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সিলেট জেলা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন,আমি আল্টিমেটাম দিচ্ছি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে যদি সিলেট সিটি কর্পোরেশন অতি সত্ত্বর কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এর কাজ করা না হয়, যদি মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ডিজাইন করা না হয়, যদি ভাস্কর্য্য করা না হয় তাহলে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আন্দোলনে নামবো। এবং আমার বিশ্বাস আমাদের কর্মসূচির ডাকে দেশের মুক্তিযোদ্ধারা নিশ্চই সারা দেবেন। আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।
গোলাকার চত্বরের মধ্যে পানি জমে রয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে ট্রাক, টেম্পো, মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহী বাস দাঁড়িয়ে আছে। এ দৃশ্য সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের।
গত মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে বারোটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানকার বেশ কিছু স্থানের ইট খসে পড়েছে। চত্বরের মধ্যে জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চত্বরের ভেতরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি বাস ও ট্রাকের ভেতরে থাকা দুই ব্যক্তি গল্পগুজব করছেন। আর ট্রাকের ভেতরে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘সবাই রাখে। তাই চত্বরের ভেতরে আমিও ট্রাক রেখেছি। একটু পরই চলে যাব।’
কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, বর্তমান সিসিক মেয়র মুক্তিযোদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ কোনো কাজ করছেন বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, বর্তমান নেতৃত্ব যদি সিসিকের আওতাধীনে হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ কোনো ব্যাপার হবে বলে আমার ধারণা হয় না। কারণে তার আমলে মুক্তিযোদ্ধের মুক্তিযোদ্ধের চেতনা নিয়ে কোনো কাজ করেন নি। তবে যদি জামাত-বিএনপি মুক্তিযোদ্ধ বিরোধী পাকিস্থানের পছন্দসই যদি কোনো কাজ থাকে তাহলে বর্তমান সিসিক কর্তৃপক্ষ সেটা নিশ্চিন্তে করবেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ কিছু সিসিক মেয়র দিয়ে হবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, বর্তমান সিসিকের নেতৃত্বে যারা উর্ধ্বতন-কর্মকর্তা আছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত কাজে শতবছর হাজার বছর লাগবে এমন বক্তব্যই দিয়ে থাকেন। অন্য যতো সব কাজ আছে এগুলো ফেলে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সর্বপ্রথম হওয়ার কথা অথচ হচ্ছে না। এরকম মানসিকতাই সিসিক মেয়রের নেই। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ উৎসব করার জন্য ১ লক্ষ টাকা চেয়েছিলাম মেয়রের কাছে। তিনি স্ট্রেইট বললেন মুক্তিযোদ্ধাদের একাউন্টে ১ লক্ষ টা দেয়া যাবে না ৬০ হাজার টাকা পাবেন। অথচ মেয়র আরিফ রেজিস্ট্রারী মাঠে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসবে মাত্র ৬০ টাকা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতাও সহমর্মীতা অনেক পেয়েছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ৩০০ টাকা থেকে আজ ২০ হাজার টাকায় এসে পৌছেছে কেবল মাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেতনা সমৃদ্ধ ইচ্ছার কারেণেই। আমরা আমাদের ভাতা ৩০ হাজার টাকা দাবি করছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বেতন পাচ্ছি ভাতা পাচ্ছি আগামীতে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহায়ণও হবে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকেন এমনটা বলেন তিনি।
সিসিকের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা সিলেট কে সুন্দরভাবে পরিচলনা করতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা যেহেতু রাস্তা বলে কাজ চালিয়েছি মূলত মনুমেন্ট অথ্যাৎ মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে নির্মিত। আমরা চাইছি ভালো আর্কিঠেকচার দিয়ে এটা তৈরী করতে। কালণ এটা স্বাভাবিক কোনো স্থাপনা নয়। যাতে করে এটা দেখে সবার হৃদয়ে একাত্তর তথা দেশ প্রেম লালন করতে পারে এমনি প্রক্রিয়ায় তৈরী করা হবে। আমরা বাছাই কাজ শেষ হলেই এর নির্মাণ কাজ শেষ করে দিবে।
দেরি হওয়ার কি এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, বুয়েটের একজন স্যার বলছেন ১০ বছর ট্রেনিং করবেন আর ২ বছরে কাজটি সম্পন্ন করবেন যতো দৃঢ় সময় নিয়ে কাজ করা হয় কাজটা ততোই সুচারু হয়।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে কদমতলী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর-সংলগ্ন সড়ক এবং সুরমা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর ফলে সড়কের মধ্যে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি ভেঙে পরিসর আরও বাড়ানো হয়। এ কাজেরই অংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরিরও সিদ্ধান্ত রয়েছে। এরই মধ্যে চত্বরের জন্য নকশা চেয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। তবে জমা পড়া নকশা পছন্দ না হওয়ায় ফের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ১ মোহাম্মদ তৌফিক বকস বলেন, সড়কের মধ্যে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি আরো সুন্দরভাবে নির্মাণ করার লক্ষ্যে আমরা ভেঙ্গে ফেলি। তিনি বলেন কাজ করার পূর্বে একটি কাজকে দীর্ঘ সময় এনালাইসেন্স করে কাজ শুরু করলে কাজটি সুন্দর হবে। চত্বরের জন্য নকশা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। নকশা পেলেই চত্বরের কাজ দ্রুত শুরু হবে। এবং আমরা অচিরেই অথ্যাৎ ২৬ মার্চের মধ্যেই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করে ফেলবো।
কদমতলী এলাকার তরুণ ছেলে সবুজ মিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নামে স্থানটির পরিচিতি সিলেটজুড়েই রয়েছে। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চত্বর এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। চত্বরের ভেতর নোংরা ও দুর্গন্ধময় হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া স্থানটি দীর্ঘদিন ধরেই অস্থায়ী গাড়ি রাখার স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। চত্বরের পরিবেশ সুন্দর রাখতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে চতুষ্কোণ একটি স্তম্ভ ছিল। তিন বছর আগে ওই এলাকার সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য সড়ক ও চত্বর ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। চত্বরের পাশের সড়কটি নির্মাণ করা হলেও চত্বরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এরপর থেকেই স্থানটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এটা থেকে আমরা উপলদ্ধি করতে পেরেছি যে সিসিক মেয়র ইচ্ছে করেই গরিমসি করছেন। তিনি চান না মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটুকু অতি তাড়াতাড়ি শেষ হোক। আর যদি চাইতেন তাহলে সিসিকের সকল কাজ বন্ধ করে হলেও সবার আগে মুক্তিযোদ্ধ চত্বরটিতে সর্বপ্রথম নজরে রাখতেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি নির্মিত হয়েছিল। তিন বছর ধরে চত্বরটি বেহাল। এটি প্রত্যক্ষ করাটা দুঃখজনক। জনসাধারণের মুখে হতাশার চাপ কবে যে শেষ হবে তার কোনো ঠিকানা নেই।
এবিএ/১৭ জানুয়ারি