নিজস্ব প্রতিবেদক :: করোনা মহামারীর জন্য সারাদেশের ন্যায় প্রবাসী অধ্যাষিত এলাকা বিশ্বনাথে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। এ লকডাউনে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। বরাবরের মতো যারা দিনে সর্বনিম্ন আয় থেকে চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাড়ি নিয়ে যান, এই লকডাউনে তাদের অবস্থা একেবারেই নাকাল।
সরেজমিনে বিশ্বনাথ থানাসহ বিভিন্ন হাট-বাজার দেখা যায় যে, কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষজন হাট-বাজারে, রাস্তার পাশে দাড়িঁয়ে ঘুরাফিরা করছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ী দেখলে লুকিয়ে যান। কিন্তু তাদের পেটে ভাত নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন। তাদের অনেকেরই সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বর্তমান লডডাউনে বড়ই অসহায়। তাদের কাজকর্ম নেই। পরিবারে চলছে কলহ। বিদেশ নির্ভর পরিবারগুলোতেও অনুরূপ অবস্থা বিরাজ করছে। তাদের টাকা বিদেশ থেকে আসলেও ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনেরও সুযোগ নেই। গ্রামের আনাচে-কানাচে দোকানগুলোতে বাকিতে খরচপাতি করছেন। অনেক এলাকার দোকানেও মাল নেই। হাট-বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র সংকট। সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় নিম্ন আয়ের মৎস্যজীবিরা সারা দিনে কিছু পনা এনে বাজারে বিক্রি করছেন। দেশীয় ও ফার্মের মাছের সংকট রয়েছে।
বাজারগুলোতে মানুষজন না থাকায় রিকশা চালকদের অবস্থা করুণ। কোন উপায়ান্তর না দেখে অনেকে অটো রিকশা বন্ধ করে দিয়েছেন আবার অনেকেই পেটের দায়ে বেরিয়ে পড়েছেন রিকশা নিয়ে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির চাকা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন পরিবারের সকল সদস্যকেই না খেয়ে থাকতে হয় বলে চালকরা।
অটোরিকশা চালক শহীদ মিয়া বলেন, লকডাউনের মধ্যে বের হলেও পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশি বাধার মধ্যে পড়তে হয়। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য বের হওয়া।
দিনে যত টাকা ইনকাম হতো তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন মতে ডাল-ভাত খেয়ে দিনযাপন হতো। কিন্তু এ লকডাউন আমাদের জন্য মরার উপর খাড়ার গা হয়ে দেখা দিয়েছে। দোকানপাঠ বন্ধ থাকায় বাজারে সারাদিন অপেক্ষা করতে করতে বিকেল বেলা শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হয় তাদের। কিভাবে চলবো আমরা কিছুই বুঝে আসেনা।
ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া সিএনজি চালক কবির মিয়া জানান, প্রশাসনের কড়াকড়িতে গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। লকডাউনের এই মুহুর্তে খেয়ে বেচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। তাই তো প্রশাসনের কড়াকড়িতেও গাড়ি নিয়ে বের হতে হয়েছে।
দারিদ্র্যতার সাথে সর্বদা সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষজনদের অবস্থা এ লকডাউনের কঠিনতম হয়ে পড়েছে। অভাবের তাড়নায় যে বা যারা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন, যাত্রী কিংবা মালের অপেক্ষায় বসে থেকে দিন পার করতে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষদের। ৩৩৩-তে ফোন করে খাদ্য সহায়তা প্রাপ্তির সরকারি সুযোগের পক্রিয়া অনেকের জানা নেই। কিভাবে সাহায্য পাওয়া যায় তাও জানেন না তারা।