সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ একাংশ) আসনের আসন্ন উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তফসিল ঘোষণার খবরে তারা নড়েচড়ে বসেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন অন্ততঃ ৭ প্রার্থী। জাতীয় পার্টির (জাপা) টিকেট পেতেও মাঠে রয়েছেন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণের অভিযোগ এনে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি।
আওয়ামী লীগের তিন বারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ , সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সহধর্মিণী ফারজানা সামাদ চৌধুরী , বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন ( বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, সিলেটের বর্তমান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব , যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু ও ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি স্যার এনাম উল ইসলাম দলের মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন।
জানা গেছে, উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার খবরে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে আগ্রহের কোন কমতি নেই । দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাতায়াতের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের কবর জিয়ারত , অসুস্থ নেতা-কর্মীদেরকে দেখতে প্রার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা চালাচ্ছেন প্রচারণা। প্রার্থীদের দলীয় অতীত ইতিহাস তুলে ধরে প্রচার-প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
করোনা মহামারীর এই সময়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় দুস্থ লোকজনের মাঝে চাল , ডালসহ নিত্যপণ্য ও স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের এক সময়ের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ গেল জাতীয় নির্বাচনে সিলেট -৩ আসনে দলের মনোনয়ন চান। গেলবার মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে মনোনয়ন না দিয়ে তখনকার সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসকেই মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে আবারও মাঠে নেমেছেন সিলেটে খন্দকার মুশতাককে জুতাপেটা করা মিসবাহ।
তবে, সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সহধর্মিণী ফারজানা সামাদ চৌধুরী স্বামীর অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে চান। এজন্য শোকে আচ্ছন্ন ফারজানা সামাদ চৌধুরীও মাঠে নেমেছেন এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা কুশলাদি বিনিময় করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিএমএ’র মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল মাঠে রয়েছেন দলের মনোনয়ন লাভের জন্য। তার সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত এনামুল হক চৌধুরী (বীরপ্রতীক) ছিলেন এই আসনের দু’বারের সংসদ সদস্য।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব মাঠে রয়েছেন বেশ আগে থেকেই। এক সময়ের যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্পাদকীয় পদে থাকা হাবিব গেল জাতীয় নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু দলের মনোনয়ন পেতে সাংবাদিক সম্মেলন করে তার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তিনি মাঠেও রয়েছেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা স্যার এনাম উল ইসলাম দলের মনোনয়ন পেতে কয়েক মাস ধরে মাঠে আছেন।
এছাড়া, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিকও সরব রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আজ সোমবার উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ১২ থেকে ১৫ জুলাই এর মধ্যেই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হতে পারে। তফসিল ঘোষণার সময়ই এ বিষয়ে সকল তথ্য প্রচার করবে নির্বাচন কমিশন। উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায় , আসন্ন উপনির্বাচনে এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ২৯৩ জন।
গত ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট -৩ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। ১৫ মার্চ সংসদ সচিবালয় আসনটি শুন্য ঘোষণা করে। সংবিধান অনুযায়ী ৮ জুনের মধ্যে এ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু, করোনা মহামারিকে ‘দৈব-দুর্বিপাক’ দেখিয়ে এ আসনের নির্বাচন ৯০ দিন পিছিয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ অবস্থায় সোমবারের নির্বাচন কমিশনের সভায় এ আসনে তফসিল ঘোষণার খবরে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের তোড়জোড়।
জানা গেছে, এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচন করেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নামেন। এরপর ১৯৯৬ থেকে টানা ৫ বার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নৌকা নিয়ে ২ বার পরাজিত হলেও তিনবার তিনি বিজয়ী হন। অবশ্য ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি নির্বাচিত হন।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী , গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭ ভোট এবং ধানের শীষ প্রতীকে শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ২৮৮ ভোট।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৭ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপির প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৫৪ হাজার ৯৫৫ ভোট।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৫ হাজার ৯৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী। এ নির্বাচনে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৩৪২ ভোট।
১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত খান লাঙ্গল প্রতীকে ২৬ হাজার ৬৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন । এসময় নৌকা প্রতীকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ১৬৮ ভোট।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আতিকুর রহমান।
নৌকা প্রতীকে তিনি ১৯ হাজার ৫৭ ভোট পান। তাকে হারিয়ে জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত খান লাঙ্গল প্রতীকে ৩৩ হাজার ৪১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের এই পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
এদিকে , গতকাল রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন , বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আসন্ন উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করবে না। তার অভিযোগ , নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নামে প্রহসন করছে ।
সূত্র: দৈনিক সিলেটের ডাক