সিলেট ৭১ নিউজ ডেস্ক:লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোমবার অনুষ্ঠিত হলো হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর দশম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল ঈসালে সাওয়াব মাহফিল। খতমে কুরআন, খতমে বুখারী, খতমে খাজেগান, খতমে দালাইলুল খাইরাতের পাশাপাশি স্মৃতিচারণমূলক ও জীবনঘনিষ্ট আলোচনায় অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত হয় পুরো দিন। দেশ-বিদেশের অতিথিবৃন্দের হৃদয়গ্রাহী বক্তব্যে শ্রোতারা আবেগাপ্লুত হন বার বার। প্রিয় মুরশিদের স্মৃতি আর বিরহ-ব্যথা অশ্রুসিক্ত করে তাদের। কান্নাজড়িত লাখো কন্ঠে বার বার উচ্চারিত হয় প্রিয় মনীষীর দরজাবুলন্দির জন্য আন্তরিক প্রার্থনা আর তাঁর শিক্ষা অনুসরণের প্রত্যয়দীপ্ত শ্লোগান। সকাল সাড়ে ১০টায় এতীমখানার হাজারো এতীমকে নিয়ে হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি বছরের মতো সকাল থেকেই দেশ-বিদেশের মুরিদীন-মুহিব্বীন জড়ো হতে থাকেন। ধীরে ধীরে ফুলতলী ছাহেব বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, মাজারসহ আশপাশের এলাকাও লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বিশাল এ মাহফিলে মুরিদীন-মুহিব্বীনের উদ্দেশ্যে তা’লীম-তরবিয়ত ও হৃদয়গ্রাহী বয়ান পেশ করেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি নামায কায়েম, উত্তম চরিত্র শিক্ষাদান ও দ্বীনের সঠিক পথ-পদ্ধতি অনুসরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ অঙ্গনে নামায প্রতিষ্ঠা করবেন। উত্তম চরিত্র শিক্ষা দিবেন। নিজে নামায আদায়ের পাশাপাশি অন্যদের নামাযের প্রতি যতœবান করতে সচেষ্ট হবেন। তাহলেই ইকামতে সালাতের হক আদায় হবে। হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) আমাদের নিকট ইলমে কিরাতের আমানত রেখে গেছেন। এ আমানতের প্রতি খেয়াল রাখবেন। মনে রাখবেন ভিন্ন পদ্ধতিতে তিলাওয়াত করলে রাসূল (সা.) পর্যন্ত যে সনদ লাভ করেছেন তার সম্পর্ক বিনষ্ট হয়ে যাবে। যারা খানকা পরিচালনা করেন জেহরী যিকরের পাশাপাশি খফী যিকর করবেন। কেননা খফী যিকরের ক্ষেত্রে রিয়া থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক কুসংস্কার পরিলক্ষিত হয়। এসব থেকে বেঁচে থাকবেন। জিন বশ করার চেষ্টা করবেন না। যিকর মহাফিলে, কিরাত ও হাদীসের দরসে মুমিন জিন শরীক হতে পারে কিন্তু তাদের বশ করবেন না। এসব আমাদের সিলসিলায় নেই। আমাদের কোনো বুযুর্গ কোনো বুযুর্গের মাজার সেজদা করেননি। এসব থেকে বিরত থাকবেন। কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। সিলসিলার বুযুর্গানে কিরাম হক পন্থায় তাবিয দিতেন। যারা তাবিয দেন সতর্ক থাকবেন। কোনো কুফরিমূলক তাবিয দিবেন না। এতে হয়তো রোযগার করতে পারবেন কিন্তু সিলসিলার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বার বার মযলুম রোহিঙ্গাদের করূণ অবস্থা স্মরণ করে বলেন, মায়ানমারের কত নির্যাতিত মুসলমান চোখের সামনে আপনজনকে হারিয়েছে। তারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ সকল বিপন্ন মানুষের সেবায় এগিয়ে আসুন। তিনি তাওবা-বয়াত পরবর্তী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর নসীহত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায শান্তিমনে আদায় করবেন। দৈনিক কমপক্ষে দুইশত বার দুরূদ শরীফ এবং একশত বার ইস্তেগফার শরীফ পড়বেন। বড়দের সম্মান করবেন এবং ছোটদের দয়া করবেন। অন্যের ভালো দেখলে মন খুশি রাখবেন। হিংসা-বিদ্বেষের পরিবেশ থেকে দূরে থাকবেন। এতিম-অনাথ, অসহায়, পঙ্গু, নির্যাতিত মানুষের খিদমত করবেন। তিনি হাদীসে নববীরে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, দুটি বিষয় মানুষের হৃদয়কে নরম করে। এ দুটি হলো মিসকিনকে খাদ্য খাওয়ানে ও এতীমের মাথায় হাত বুলানো।
বাংলাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী’র যৌথ পরিচালনায় মাহফিলে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাসূলে পাক (সা.)-এর অন্যতম বংশধর, মিশরের আল আযহার ইউনিভার্সিটির দাওয়া ফ্যাকাল্টির ডীন প্রফেসর ড. সায়্যিদ জামাল ফারুক জিবরীল মাহমুদ আল হাসানী, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা হবিবুর রহমান, ভারতের উজানডিহির পীর ছাহেব হযরত মাওলানা সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, মুফতী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, সিলেট সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের প্রিন্সিপাল কবি কালাম আজাদ, মুফতী মাওলানা আবূ নছর জিহাদী, মহাখালী কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, সৎপুর কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালিক আহমদ, মিশিগান আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার, আমেরিকা-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু নছর মুহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাপাদার, দারুল হাদীস লতিফিয়া নর্থওয়েস্ট-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা সালমান আহমদ চৌধুরী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিছ মাওলানা বদরুজ্জামান রিয়াদ, দৈনিক শুভ প্রতিদিন’র সম্পাদক সরওয়ার হোসেন প্রমুখ।
মাহফিলে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ফয়জুল মুনির চৌধুরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ, সৎপুর কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকী, শাহজালাল মসজিদ কিথলী, ইউকে’র ইমাম ও খতীব মাওলানা ফখরুল ইসলাম, সোনাকান্দার পীরছাহেবজাদা মাওলানা হোসাইন আহমদ, ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান ওলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, আনজুমানে আল ইসলাহ ইউকে ও দারুল হাদীস লাতিফিয়া নর্থওয়েস্ট-এর এডভাইজর আলহাজ্জ গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এমবিই প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আলিমে দ্বীন মাওলানা আব্দুশ শাকুর চৌধুরী ফুলতলী, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারী হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী, কানাডা আওয়ামীলীগের সভাপতি সরওয়ার হোসেন, বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রহীম, রাখালগন্জ সিনিয়র মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, ইকড়ছই আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ছমির উদ্দিন, জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, খানকায়ে লতিফিয়া ইউকে’র পরিচালক সূফী কারী আব্দুল মুন্তাকিম, আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবূ ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ জাফর মুহাম্মদ নুমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাথিউউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আলিম, স্কুল অব এক্সেলেন্স-এর প্রিন্সিপাল মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান, বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী, ইছামতি কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্যকল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ্জ শেখ মখন মিয়া, ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান তালুকদার, মাওলানা শামছুদ্দীন নূরী, লতিফিয়া দারুল কিরাত সমিতি, উত্তর পূর্বাঞ্চল, আসাম’র সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার উদ্দিন, ঢাকা জেলা লতিফিয়া কারী সোসাইটির সভাপতি মাওলানা আবু সাদেক মুহাঃ ইকবাল খন্দকার, মাওলানা কাজী আলাউদ্দিন আহমদ, ভারতের বদরপুর (বুন্দাশিল) জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিয আলাউর রহমান টিপু, কুলাউড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়ায্যিন মাওলানা হাবিবুর রহমান মিশকাত প্রমুখ।