এসবিএন ডেস্কঃ চট্টগ্রামে কিশোর হিমেল দাশ সুপেন হত্যা ও রংপুরে আনজিলা বেগম নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যার দায়ে ১১ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রামে কিশোর হিমেল দাশ সুপেন হত্যা মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সেলিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামী হলেন মাহমুদুল ইসলাম, সুনীল দাশ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মো. হোসেন সাগর, নজরুল ইসলাম ও মো. সেলিম। এদের মধ্যে হিমেলের দূরসম্পর্কের চাচা সুনীল দাশসহ ৪ জন কারাগারে আছেন। বাকি দু’জন পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৮ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণার ৪ দিন আগে নিখোঁজ হয় চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র হিমেল দাশ সুপন। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে মাহমুদুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই নজরুল ইসলামের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে গিয়ে অপহৃত হয় হিমেল।
১৪ মে বান্দরবানের দুর্গম নাগাঝিরি পাহাড় থেকে নগরীর ডবলমুরিং থানা-পুলিশ হিমেলের লাশ উদ্ধার করে। হিমেলের মা পাপিয়া সেন বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তা হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী মাহমুদুল ইসলাম ও তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম আদালতে জবানবন্দিতে জানান, হিমেলের চাচা সুনীল দাশের পরিকল্পনায় তাকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। সম্পত্তির লোভে সুনীল দাশ এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিলেন।
২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৬ জনকে আসামী করে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগপত্রে ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়। অভিযোগ গঠন ও সাক্ষ্য গ্রহণের পর আদালত এ রায় দিয়েছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি অ্যাডভোকেট এম এ নাসের বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
রংপুরঃ রংপুরে আনজিলা বেগম নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যার দায়ে তার ভাইসহ ৫ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই আদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন আনজিলা বেগমের ভাই আব্দুল মজিদ, পীরগঞ্জ উপজেলার কুমারপুর এলাকার মনিরুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম, আনিছুল ইসলাম ও এমদাদুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার পার কুমারপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে আনজিলা খাতুনের স্বামী পাগল হওয়ায় তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। রাতে থাকতেন ভাই আব্দুল মজিদের বাসায়।
ঘটনার দিন ২০০৬ সালের ৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে খাওয়া দাওয়া সেরে তিনি ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে এলাকাবাসী আরজিলা খাতুনের গলাকাটা লাশ দেখতে পান ওই এলাকার সিরাজ হাজির বাঁশঝাড়ে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রমেক মর্গে পাঠায়। টাকা পয়সার লেনদেনসংক্রান্ত জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এ ঘটনায় নিহতের আরেক ভাই আব্দুল বাকি বাদী হয়ে অপর ভাই আব্দুল মজিদসহ ৫ জনকে আসামী করে পীরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বাদীর ভাতিজা নাসিমার স্বামী গোলাপ মিয়ার সঙ্গে আরজিলা খাতুনের সম্পত্তি নিয়ে অভিযুক্ত আসামীদের বিবাদ হয়।
তদন্ত শেষে পীরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু আব্দুল্লাহ ২০০৬ সালের ৩১ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত আজ ৫ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
সরকারপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এপিপি ফারুক মোহাম্মদ রেয়াজুল, আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, বসুনিয়া মো. আরিফুল ইসলাম। রায় ঘোষণার সময় ৫ জনই কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।