নিজস্ব প্রতিবেদক:; সিলেট নগরের ১৯নং ওয়ার্ডের রায়নগর রাজবাড়ীতে গত রোববার মধ্যরাতে সংখ্যালঘু এক পরিবারের বাসায় দলবল নিয়ে হামলা ঘটনা ঘটে। হামলার সময় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে রক্ষা পেয়েছেন বলে জানান ওই পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারী) সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলার অভিযোগে কাউন্সিলর তৌহিদসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে এসএমপির কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা করা হয়েছে।
বুধবার ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত আমীন তৌহিদসহ আরো দুজনের নাম অভিযুক্ত করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন হামলায় আহত মৃত নন্দগোপাল পুরকায়স্থের স্ত্রী স্নিগ্ধা পুরকায়স্থ। অভিযোগকৃত আরও দুইজনের নাম হলো,- রায়নগর রাজবাড়ী এলাকার মৃত মানিক লাল দের ছেলে মুকুল দে ও নকুল দে।
অভিযোগে বলা হয়, রায়নগর রাজবাড়ি এলাকায় শ্রী শ্রী শিব মন্দিরের পাশে একটি খালি জায়গায় যাওয়ার রাস্তা নির্মাণের জন্য দেবত্তোর সম্পত্তি ক্রয় করার প্রস্তাব দেন স্থানীয় কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তৌহিদ। মন্দিরের জায়গা হওয়ায় বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাড়িতে এসে এলাকা ছাড়ানোর হুমকি দিয়ে যান কাউন্সিলর। পরদিন রবিবার রাত ২টার দিকে কাউন্সিলরের লোকজন কয়েকটি ট্রাক নিয়ে মন্দিরের জায়গায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে শক্তির মহড়া দিয়ে ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা নষ্ট করছিল। এসময় আমরা বাধা দিলে দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভতি দেখাতে শুরু করে। অভিযোগে স্নিগ্ধা পুরকায়স্থ আরো উল্লেখ করেন, মধ্যরাতে তাদের আকষ্মিক আক্রমণে বাধা দিলে তারা আমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্ঠা করে। এছাড়া এলোপাথারি মারধর করে আহত করে। তাদের হামলায় আমার দুই ছেলেও আহত হয়েছেন। পরে তারা আমার বাসার গেইট ভাঙার চেষ্ঠা করে। অবস্থা বেগতিক দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করি। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।
মন্দিরের সেবায়েত পরিবারের সদস্য মৃত নন্দগোপাল পুরকায়স্থের ছেলে প্রীতিরাজ পুরকায়স্থ বলেন, মূলত আমাদের বাসা ও মন্দিরের পাশে একটি হাউজিং প্রকল্পের রাস্তা নির্মানের জন্য মন্দিরের জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছিলেন তিনি। জায়গাটি নিতে আমাদের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেন। কিন্তু মন্দিরের জায়গা হওয়ায় আমরা তাকে না করে দেই। এতে তিনি ক্ষুব্দ হয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
প্রীতিরাজ পুরকায়স্থ আরও বলেন, গত বছর আমরা পারিবারিক উদ্যোগে মন্দিরের সংস্কার কাজের জন্য কাউন্সিলরের অনুমতি নিতে চাইলে তিনি বলেন-মন্দিরের কাজের অনুমতি লাগবে না। তার মৌখিক নির্দেশে মন্দিরের সংস্কার কাজ শুরু করলে পরবর্তীতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রকৌশলী এসে অবৈধ স্থাপনা উল্লেখ করে কাজ বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে প্রায় সাত মাস আগে সিসিকের অনুমতির জন্য সংস্কার কাজের নকশা তৈরি করে আবেদন করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজের অনুমতি দেয়নি সিসিক। এমনকি সিসিকের পক্ষ থেকে মন্দির পরিদর্শন করতেও যাওয়া হয়নি। প্রতিরাজ অভিযোগ করে বলেন, তিনমাস আগে সিসিকের প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ারসহ বেশ কয়েকজন তাদের বাসায় আসেন কাউন্সিলর। এ সময় তিনি কার অনুমতি নিয়ে মন্দিরে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে জানতে চান। এসময় তার (কাউন্সিলরের) মৌখিক অনুমতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে শওকত বলেন-তোমরা কী এই এলাকার মালিক হয়ে গেছো? পাঁচ বছর ধরে আমি এই এলাকার মালিক। যতদিন আমি কাউন্সিলর থাকবো ততদিন আমার হুকুম ছাড়া এখানে গাছের একটি পাতাও নড়বে না। এসময় তাদেরকে এলাকা ছাড়া করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যান তিনি।
এ ব্যাপারে সিসিকের কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তৌহিদ বলেন, এটা আমার সমস্যা না, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সমস্যা। তারা মূর্তি রাখা নিয়ে ঝামেলা করেছে। আমি পুলিশকে খবর দেই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার পরে আমি যাই। আমি কোনো হামলা করিনি। যারা এ ধরণের অভিযোগ দিয়েছে সেগুলো মিথ্যে। মন্দিরের জায়গা দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি কেন জায়গা দখল করবো। এখানে তো রাস্তা আছে। আর যে জায়গার (প্রকল্প) জন্য রাস্তা বানানোর কথা বলা হচ্ছে যে জায়গা অনেক দুরে। এগুলো তাদের মনগড়া অভিযোগ।
এসএমপির কোতোয়ালি থানায় যে মামলা করছেন তার নাম্বার ১৬৩৩/৯/৪।
এবিষয়ে এসএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, হামলার ব্যাপারে একটি পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
এবিএ/১০ ফেব্রুয়ারী-১৬