সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানের করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে আধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও প্রযুক্তি বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। বেইজিং আরবান কন্সট্রাকশন গ্রুপ (BUCG) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো: মফিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিমান সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হবে। উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের ন্যায় সর্বাধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা থাকবে এ টার্মিনালসহ অন্যান্য স্থাপনায়।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে ৩৪ হাজার ৯১৯ বর্গমিটারের আধুনিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন। এ টার্মিনালে আটটি বিমান একসঙ্গে যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে। এর বাইরে ৬ হাজার ৮৯২ বর্গমিটারের কার্গো ভবন, ২ হাজার ৪১৫ বর্গমিটারের ফায়ার স্টেশন, ২ হাজার ৭৭২ বর্গমিটারের কন্ট্রোল টাওয়ার, ১ হাজার ৩৯৫ বর্গমিটারের প্রশাসনিক ভবন, ৬০৬ বর্গমিটারের মেইনটেন্যান্স ভবন, ২ হাজার ৫২৪ বর্গমিটারের ইউটিলিটি ভবন এবং ৯ হাজার ২৯৯ বর্গমিটারের মধ্যে আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, বিদ্যমান সুবিধাসহ আরো সুপরিসর ৬টি উড়োজাহাজ পার্কিং উপযোগী ৭১ হাজার ৭৪৩ বর্গমিটার এপ্রোন নির্মাণ, এপ্রোনের সংযোগকারী টেক্সিওয়ে, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রসহ ফুয়েল ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড হাইড্রেন্ট সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো ও স্থাপনাদি নির্মিত হবে।
বিমান সূত্র জানায়, বিদ্যমান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে যে এরিয়া রয়েছে তার তিনগুণেরও বেশি এরিয়া নিয়ে তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন টার্মিনাল। বিদ্যমান টার্মিনালে বছরে মোট ৬ লক্ষ যাত্রীকে সেবা দেয়া যায়। নতুন টার্মিনালের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে (২০৪০ সাল পর্যন্ত) বছরে ২০ লক্ষ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবা প্রদানের জন্য ভবনে থাকবে ৬টি বোর্ডিং ব্রিজ (ডাবল ডকিং ২টি, সিঙ্গেল ডকিং ২টি), কনভেয়ার বেল্টসহ ৩৬টি চেক-ইন-কাউন্টার যার মধ্যে ২টি স্বয়ংক্রিয়, বহির্গামী ও আগমনী যাত্রীদের জন্য মোট ২৪টি পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, ৬টি এস্কেলেটর, ৯টি লিফট এবং আগমনী যাত্রীদের জন্য ৩টি লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট, ভবনের ফ্লোরে বসবে ইঞ্জিনিয়ারড স্টোন। নতুন টার্মিনালের ১ম তলা আগমনী যাত্রীদের এবং ২য় তলা বহির্গামী যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হবে। শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে আগত যাত্রী টার্মিনালের চেক-ইন লেভেলে পৌঁছে যাবেন। আবার বিদেশ হতে আগত যাত্রীগণ ১ম তলা থেকে বিমানবন্দর ত্যাগ করে সারফেস রোড ব্যবহার করে শহরের যে কোন প্রান্তে যেতে পারবেন। টার্মিনাল অভিমুখী বা বহির্মুখী সকল যানবাহন চলাচল হবে একমুখী যা বিমানবন্দর অংশকে সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত রাখবে।
সূত্রমতে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে ১০,২৫০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একটি রানওয়ে রয়েছে। এছাড়া, প্রায় ১২,১০০ বর্গমিটার এরিয়া বিশিষ্ট টার্মিনাল, ৭৫০ বর্গমিটার কার্গো ভবন, ২টি টেক্সিওয়ে, ৪টি ছোট ও ২টি বড় বিমান পার্কিং সুবিধাসহ পার্কিং এপ্রোন, ২টি বোর্ডিং ব্রিজ, লিফট, এস্কেলেটর, কন্ট্রোল টাওয়ারসহ অপারেশনাল বিল্ডিং ও অন্যান্য অবকাঠামো রয়েছে। কার্গো বিমান ও যাত্রী বৃদ্ধির হার অনুযায়ী টার্মিনালের সক্ষমতা বৃদ্ধি অপরিহার্য- সে কারণে বর্তমান সরকার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালে।
জানা গেছে, ভবনের স্থাপত্য নকশা করেছেন কোরিয়ার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান Heerim । এ প্রতিষ্ঠানটি Incheon International Airport এর টার্মিনাল-২ সহ বিশ্বের বহু এয়ারপোর্টের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনের স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান।
এর আগে গত বছরের মে মাসে (বেবিচক) সদর দপ্তর সম্মেলনকক্ষে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজের চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তিপত্রে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান এবং কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কন্সট্রাকশন গ্রুপের (BUCG) পক্ষে বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড মি. হ্যারল্ড হুয়াং (Harold Huang) স্বাক্ষর করেন।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের একটি দূরদর্শী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
এর আগে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরুর কথা থাকলেও নানা জটিলতায় ২১ মাস পর তা বাস্তবায়ন শুরু হতে যাচ্ছে।
ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন আহমদ সিলেটের ডাককে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক মানের। থাকবে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে ওসমানী বিমানবন্দরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক আরো জানান, চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সিলেট বিমানবন্দর এলাকায় তাদের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড গড়ে তুলেছে। প্রকল্পের সাইট সার্ভে ও সয়েল ইনভেস্টিগেশনের কাজ চলছে। আজ নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
বিমান প্রতিমন্ত্রী ও বিমানের চেয়ারম্যান সিলেট আসছেন: সিলেটের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো: এরশাদ মিয়া প্রেরিত এক ট্যুর শিডিউলে জানানো হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তারা দুজন সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে বিমানযোগে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। ওসমানী বিমানবন্দর থেকে বেলা ২টা ৫০ মিনিটে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট ত্যাগ করবেন।