সিলেট :করোনা সার্টিফিকেট হাতে পেতে নানা ভোগান্তিতে সিলেটের প্রবাসীরা। করোনা সার্টিফিকেটের জন্য তাদের তিনদিনই উপস্থিত থাকতে হচ্ছে সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। এতে করে সিলেট শহর কিংবা আশেপাশের উপজেলার প্রবাসীরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের প্রবাসীরা পড়েছেন দুর্ভোগে।
নির্ধারিত সময়ের আগে প্রবাসীদের কাউকে আসতে হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, মধ্যনগর কিংবা হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ থেকে। টানা তিনদিন আসা-যাওয়া এবং রিপোর্ট করাতে অনেক প্রবাসীই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সিলেট বিভাগে থাকা প্রবাসীদের জন্য সার্টিফিকেট দিচ্ছে সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি নির্ধারণ করে দেয়ার পরপরই সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন, নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এ সম্পর্কে জেলা সিভিল সার্জন বিদেশগামী প্রবাসীদের ফ্লাইট শিডিউলের উপর ভিত্তি করেই রিপোর্ট রেজিস্ট্রেশন, নমুনা গ্রহণ ও রিপোর্ট প্রদানের দিনক্ষণ ধার্য করে দিয়েছেন।
এতে দেখা গেছে, একজন প্রবাসী ফ্লাইটের ঠিক আগের দিন হাতে পান করোনা সার্টিফিকেট। কিন্তু তার আগে প্রথম দিন তাকে সিলেটের আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে এসে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায়ও ভোগান্তি রয়েছে। নির্ধারিত যেসব বুথ করে দেয়া হয়েছে সেসব বুথে প্রবাসীদের ভিড় লেগেই থাকে। নগরের উপশহরের ক্রীড়া কমপ্লেক্সে প্রবাসীরা প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ করার পর বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। আবার অনেকেই অবস্থান করেন হোটেলে। দ্বিতীয় দিন সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে তারা নমুনা দেন। কিন্তু নমুনা দেয়া নিয়েও প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নমুনা সংগ্রহে স্বাস্থ্যকর্মীরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন না।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল জানিয়েছেন, সিলেটে চার দিনে ৫০০ নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। প্রবাসীরা যাতে সঠিক সময়ে সঠিক রিপোর্ট পান সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এখন কেবল শুরু করা হয়েছে। প্রবাসীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এদিকে সিলেটে নমুনা পরীক্ষায় অনেক প্রবাসীর করোনা পজেটিভ হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিলেটে এরই মধ্যে একশ’র মতো প্রবাসী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের রিপোর্ট পজেটিভ আসছে তাদের সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে না। তাদের আইসোলেশনে থাকার নিয়মাবলী জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটিও দেয়া হচ্ছে। ফ্লাইট শিডিউলের কথা বিবেচনা করে ১৪ দিন পর তাদের আবার করোনা পরীক্ষার পর সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল জানিয়েছেন, ‘যেসব প্রবাসীর ফলাফল পজেটিভ আসছে তাদের অনেকেরই উপসর্গ নেই। এরপরও তাদের আইসোলেশন ও চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। তারা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসীদের বসার জন্য মাত্র কয়েকটি চেয়ার বাইরে রাখা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমনেচ্ছুক প্রবাসীরা সকাল ৯টা থেকে জটলা বেঁধে বসে আছেন। অনেকেই আছেন দাঁড়িয়ে। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। একজন চেয়ার থেকে উঠে গেলে আরেকজন এসে হাত দিয়ে মুছে বসছেন চেয়ারে। আর অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই টিকিটের জন্য গিয়ে ভিড় করছেন কাউন্টারে। কার আগে কে টিকিট নেবেন রয়েছে সেই প্রতিযোগিতাও। দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে মাইকের মাধ্যমে বার বার অনুরোধ করে বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের কথা। তবু নেই স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার বিন্দুমাত্র প্রয়াস। বেলা ১১টার পর থেকে রিপোর্ট নিতে আসতে থাকেন আগের দিন নমুনা দিয়ে আসা বিদেশযাত্রী ও তাদের স্বজনরা। সাড়ে ১১টার পর শুরু হয় রিপোর্ট দেয়া। রিপোর্ট নিতে আসাদের সিরিয়াল অনুযায়ী ডাকা হলে একজন করে গিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করার কথা থাকলেও সেখানে এক সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন গিয়ে ভিড় করেন।
প্রবাসীরা জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রেশন, নমুনা দিতে এসে অনেকেই সংক্রমণ হতে পারেন। বিষয়টিকে আরো সহজ করার দাবি তাদের। সিলেট বিভাগের বিদেশযাত্রীদের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার একমাত্র স্থান হচ্ছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব।