ডেস্ক : আসমাহুল হাছনা খান সিলেটের নারী উদ্যোক্তা। টেইলার্স ও ফেব্রিক্সের ব্যবসা রয়েছে। স্বামীও পোশাক ব্যবসায়ী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান অঘষোষিত লকডাউনের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
তবে এই সময়ে ঘরে বসে থাকেননি আসমা। বরং সিলেটে জরুরি সেবাদানকারীদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন তিনি। রাতে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় জরুরি সেবাদানীকারীদের বিনামূল্যে চা খাওয়ান আসমা। পুলিশ, সাংবাদিক, নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নকর্মী সকলেই নিচ্ছেন আসমার সেবা।
নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার সিলেট প্লাজা মার্কেটের সামনে প্রতিরাতে টুল নিয়ে বসে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আসমা। শুরু করেছেন সেই ২৫ মার্চ থেকে। যা চলছে এখন পর্যন্ত। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মানুষ আসমার কাছ থেকে ফ্রি চা-পানি পান করে যান। ইতোমধ্যে জরুরি প্রয়োজনে নগরীতে রাতে চলাচলকরী সকলেরই দৃষ্টি কেড়েছে আসমার এই মানবিক উদ্যোগ।
শনিবার রাতে প্লাজা মার্কেটের সামনে গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাক্সে করে চা ও কিছু ওয়ানটাইম গ্লাস নিয়ে বসে আছেন আসমা। পাশে রয়েছে পানির বোতল। সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী অনেকেই এসে চা খেয়ে যাচ্ছেন এখানে। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকেই ফ্রিতে চা খাওয়াচ্ছেন তিনি। নিজেও হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক আর মাথায় গাউন পরে আছেন।
জিন্দাবাজার এলাকায়ই বাসা আছমাহুল হাছনা খানের। বাসায়ই চা তৈরি করে ফ্লাক্সে করে নিয়ে আসেন তিনি। এক ফ্লাক্স শেষ হলে বাসা থেকে আসে আরেক ফ্লাক্স ভর্তি চা। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন স্বামী, সন্তান ও ভাই।
আছমাহুল হাছনা খান বলেন, পাঁচটার সময় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ-সাংবাদিক, বিভিন্ন মার্কেটের নৈশপ্রহরীসহ জরুরি সেবাদানকারী অনেককেই রাতেও কাজ করতে হয়। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় অনেক সময় তারা পানিও খেতে পারেন না। এই লোকদের কথা বিবেচনা করেই আমি ফ্রি তে চা-পানি খাওয়ানোর কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে বিকেল থেকে বসতাম। রমজান মাস শুরুর পর তারাবির নামাজের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা নিয়ে বসি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের পোশাকের ব্যবসা তাই ঈদে পণ্য কেনার জন্য কিছু টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু ঈদে তো এবার আর ব্যবসা হচ্ছে না। তাই এই টাকা খরচ করে মানুষজনকে ফ্রি চা খাওয়াচ্ছি। এই দুর্দিনে কত মানুষ তো কতভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে। আমিও সামান্য কিছু করার চেষ্টা করছি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের এই সদস্য বলেন, প্রথমদিকে রাতে বসার ব্যাপারে পুলিশ কিছুটা আপত্তি জানালেও এখন তারাও প্রতিদিন এসে এখানে চা খান। আমিও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করছি। কখনো ভিড় জমতে দিচ্ছি না। দোকানপাট যতদিন বন্ধ থাকবে ততদিন এই সেবা চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তিনি।