সিলেট:: সিলেটে সংকটের আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এক সময়কার ‘দুর্গে’ দলটি এখন নিজেদের মধ্যেই বিভেদের দেয়াল গড়েছে। যার ফলে এক পক্ষ সম্মেলনের দায়িত্ব পাওয়ায় আরেক পক্ষ প্রত্যাখ্যান করছেন, নতুন কমিটি দিচ্ছেন। আবার এক পক্ষ ‘তৃণমূলের’ ব্যানারে সামনে আসছেন তো আরেক পক্ষ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। এই ‘পাল্টাপাল্টি’তে সিলেট জাপায় এখন অস্থিরতা।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনের জন্য কেন্দ্র থেকে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে আহবায়ক ছিলেন এটিইউ তাজ রহমান ও সদস্যসচিব ছিলেন উছমান আলী। কিন্তু প্রায় তিন বছরেও সেই কমিটি সম্মেলন করতে পারেনি। গেল ১৭ ফেব্রুয়ারি তাজ রহমানকে আহবায়ক আর উছমান আলীকে সদস্যসচিব করে জেলা জাতীয় পার্টিতে ১৩ সদস্যের নতুন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি দেয় কেন্দ্র।
বিরোধী পক্ষটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির ‘তৃণমূল’ হিসেবে নিজেদের দাবি করে ৯১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। ইশরাকুল হক শামীমকে আহবায়ক আর আহসান হাবীব মঈনকে সদস্যসচিব করা হয়। আহসান হাবীব মঈন আবার কেন্দ্রঘোষিত ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য। তারপরও তিনি ‘বিদ্রোহী’ হয়েছেন।
এই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন- আহবায়ক এটিইউ তাজ রহমান, সদস্যসচিব উছমান আলী, সদস্য আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, সাইফুদ্দিন খালেদ, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মালিক খান, এডভোকেট আবদুর রহমান, আলতাফুর রহমান আলতাফ, আবদুস শহীদ লস্কর বশির, দৌলা মিয়া ও আহসান হাবীব মঈন।
তাজ রহমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব (সিলেট বিভাগ)। উছমান আলী দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য। অন্যরা বিভিন্ন পদে আছেন।
ওই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে এর বিরোধীতা করে জেলা জাতীয় পার্টির একটি অংশ। তারা দাবি করেন, তাজ রহমান ও উছমান আলী তিন বছরেও সম্মেলন করতে পারেন নি। তাদের দিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবে না।
এই বিরোধী পক্ষটিকে জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জহির উদ্দিন পল্টু এবং জাপা নেতা বাশির আহমদ নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জেলা জাতীয় পার্টির ‘তৃণমূল’ দাবিদার আহবায়ক কমিটির নেতারা দলের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সাথেও দেখা করেছেন। তবে কাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন।
এদিকে, গত সোমবার (৯ মার্চ) এই পক্ষটি সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রঘোষিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বাতিলের দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে যে লিখিত বক্তব্য সরবরাহ করা হয়, সেটিতে স্বাক্ষর করেন ইশরাকুল হক শামীম, আহসান হাবীব মঈন, মুজিবুর রহমান মুজিব, নাহিদা আক্তার ও মামুনুর রশীদ মামুন।
তারা বলেন, এটিইউ তাজ রহমান ও উছমান আলীর নেতৃত্বাধীন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি যা করছে, তা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। এ কমিটি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে তাজ ও উছমান দায়ী থাকবেন।
এদিকে, কেন্দ্রঘোষিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি কাল বুধবার (১১ মার্চ) পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে। এ সংবাদ সম্মেলন থেকে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টিতে ‘বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের’ বিরুদ্ধে যথাশিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে আগামী শনিবার জেলা জাতীয় পার্টির যে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত বলেও জানানো হয়।
জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব (সিলেট বিভাগ) ও জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক এটিইউ তাজ রহমান দাবি করেন, তৃণমূল জাতীয় পার্টি দাবিদার ব্যক্তিরা ২০১১ সালে দল থেকে বহিষ্কার হয়। তাদের সাথে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, ‘যে বা যারা দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নামে ব্যক্তিগত আক্রমণ, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা আইনের চোখে যেমন অপরাধ, ঠিক তেমনি সাংগঠনিকভাবেও তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দলের চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, যথাশিগগিরই এসব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল সহসাই মিটবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিভেদ আর কোন্দল জাতীয় পার্টিকে সিলেটে আরো দুর্বল করে দেবে।