সিলেট : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। সেই সাথে বেশ কিছু সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছে সিলেটের এই অভিভাবক প্রতিষ্ঠান।
রোববার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপনমূলে গঠিত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সিলেট জেলা কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য আইসোলেশন ইউনিট হিসাবে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট শহিদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতাল এবং ২০ শয্যাবিশিষ্ট সংক্রামকব্যাধি হাসপাতাল নির্বাচন করা হয়। প্রয়োজনে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হযরত শাহপরান (র.) হাসপাতাল, খাদিমনগর নির্বাচন করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া সভায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি ও ব্যাপক প্রচারের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সকল পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদকে অনুরোধ করা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত লিফলেট ছাপিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সভায় অনুরোধ জানানো হয়।
এ সভায় বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের নিজস্ব বাসস্থানে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুরোধ করা হয়। যদি কোন ব্যক্তির বিদেশ থেকে ফেরত আসার পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে কোন প্রকার উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে তাকে সাথে সাথে সিভিল সার্জন/উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে এবং নিম্নোক্ত মোবাইল ফোন নম্বরে (হটলাইন) অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহকে অতিদ্রুত আইসোলেশন ইউনিট স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোন প্রয়োজনে হটলাইন নম্বর ০১৯৩৭ ১১০০১১, ০১৯৩৭ ০০০০১১, ০১৯২৭ ৭১১৭৮৪, ০১৯২৭ ৭১১৭৮৫ নাম্বারে যোগাযোগের জন্য এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মেজবাহ উদ্দিন।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সিলেটে সর্বমোট ১২০ টি বেড তৈরি করে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে দুইটি হাসপাতালে ১২০ টি বেড তৈরির পাশাপাশি আরেকটি হাসপাতাল তৈরি করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল।
তিনি বলেন, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১০০ টি বেড তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সিলেট সংক্রামক ব্যাধী হাসপাতালে আরো ২০ টি বেড তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে খাদিনপাড়ার শাহপরাণ (রহ.) হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত জেলার কোথাও করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা বেড প্রস্তুত করে রেখেছি। করোনা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।
এর আগে সিলেটে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা প্রবাসী যুবক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। রোববার (৮ মার্চ) তার রক্ত পরীক্ষার রির্পোটটি সিলেটে এসে পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি। এতে তার দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি।
এর আগে ২৯ ফেব্রুয়ারি ওই প্রবাসী দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন। এর চিকিৎসা নিতে বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে তিনি রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
কিন্তু তিনি ঢাকায় না গিয়ে নগরের একটি বাসায় অবস্থান করেন। পরে রাতে তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনের জন্য পাঠানো হয়।পরে বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) প্রবাসীর রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট রোববার (৮ মার্চ) সিলেটে এসে পৌঁছে।