ডি এইচ মামুন:: সিলেটের কুঁচিয়ায় চীনের করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে প্রায় সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি বন্ধ থাকায় মারা যাচ্ছে মজুদকৃত কুঁচিয়া। কুঁচিয়ার ব্যবসায় ধস নামায় এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ব্যবসায়। ফলে বিপুল পরিমাণ টাকা আর্থিক ক্ষতির আশংকা করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে কুঁচিয়া নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। কাঁকড়া রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে তবে চীন অতি সম্প্রতি আশ্বস্ত করায় পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সিলেট জেলা মৎস্য দপ্তরের সূত্রমতে, সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহকৃত কুচিয়া চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও হংকং সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। যার মধ্যে ৯০ ভাগ কাঁকড়া শুধুমাত্র চীনেই রপ্তানি হয়। মাস খানেক আগে চীনে করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ায় গত ২৫ জানুয়ারী থেকে বাংলাদেশ থেকে চীনে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েন অত্র এলাকার সরবরাহকারী, ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও উৎপাদনকারী চাষীরা। ২০ দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় ধস নেমেছে কুচিয়া ব্যবসায়। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অলস সময় পার করছে ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান চালু রাখলেও সরবরাহ ও কেনা-বেচা নেই বললেই চলে। দামও নেমে এসেছে কয়েকগুণ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাকালীন সময়ে কুচিঁয়া কেজি প্রতি মূল্য ছিল ৩শ ২০ থেকে ৩শ ৫০। যা নেমে এসেছে ১শ ৪০ থেকে ১শ ২০ টাকায়। অপরদিকে যে সব ব্যবসায়ী ও হ্যাচারী মালিকরা কুচিয়া মজুদ করে রেখে ছিলেন দীর্ঘদিন মজুদ করে রাখায় মরতে শুরু করেছে কুচিয়া।
কুচিয়া লাইভফিড খাবার খাওয়ায় হাউজ ও ড্রামে যেসব কুচিয়া মজুদ করে রাখা হয়েছে তা মরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কুচিয়া মারা যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছে অনেক ব্যবসায়ী। অনেকেই ব্যাংক ও এনজিও ঋণ নিয়ে ব্যবসা করায় আর্থিক এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্য প্রতিনিয়ত চাঁপ দিচ্ছেন। অনেকেই আবার ফঁড়িয়াদের নিকট দিয়েছেন মোটা অংকের টাকা দাদন। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ খাতে কোটি কোটি টাকার লোকসান ও ক্ষতির আশংকা করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারী ব্যক্তিরা।
দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরস্থ লোকনাথ মৎস আড়ৎ এর পরিচালক জৌতিষ চন্দ্র বর্মন জানান, আগে প্রতিদিন ১শ কেজি কুচিঁয়া কেনা হতো। যেখানে এখন ৫ কেজি কেনা হচ্ছে। প্রতিদিন নূন্যতম ১টন কুচিয়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। গত ২০ দিন ড্রামে যে সব কুচিয়া মজুদ করে রেখে ছিলাম ধীরে ধীরে তা মারা যাচ্ছে। কুচিয়ার জন্য এই মৌসুমটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সারাবছর যে ব্যবসা হয় তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যবসা হয় এই মৌসুমে। যেখানে প্রতিদিন ২০থেকে ২৫জন শ্রমিক আমার আড়তে কাজ করত, সেখানে ৫/৭জন শ্রমিক আজ অলস বসে সময় কাটাচ্ছে।
তিনি জানান, গত ২৫ জানুয়ারী থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ ডিপো বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কর্মচারীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। চীনের ব্যাংক গুলোতে বর্ষবরণের ছুটি থাকায় কোটি কোটি টাকা চীনে আটকা পড়েছে। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘ স্থায়ী হলে কোটি কোটি টাকা লোকসান ও ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতে হবে আমাদের। আমরা চাই সরকার চীন সরকারের সাথে কথা বলে দ্রুত রপ্তানির ব্যবস্থা করুক। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশে নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
কুচিয়া শ্রমিক আকাশ, কৃষ্ণ ও সাগর জানান, প্রতিদিন যেখানে ৪০/৪৫ কেজি কুচিয়া বিক্রি সম্ভব হতো, সেখানে আজ ৫কেজিও বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।
সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, এমন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সরকারের থেকে আমরা এখনো কোন নির্দেশনা পাইনি। এটা মূলত বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের কাজ। তবে আমরা বসে নেই। বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করছি। শুনেছি চীন সরকার আশ্বস্ত করেছে। আশা করছি দ্রুত আবারও রপ্তানি শুরু হবে এবং তাহলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।