অতিথি প্রতিবেদক:::: জাতীয় পার্টির দূর্গ নামে খ্যাত সিলেটের জাতীয় পার্টিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্ব, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার প্রভৃতির ফলে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রবাসী ব্যক্তি নির্ভর কার্যক্রম অতিতের সুনামকে ক্ষুন্ন করে পুরোদলের ভাবমুর্তিতে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ এই সিলেটের জাতীয় পার্টি তার সব অতিত ঐতিহ্য হারিয়ে জনমনে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। টাকা দিলে পদ মিলে এই নীতিতে বিশ্বাসী কিছু লোক প্রবাসে থেকেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগসাজশ করে পদ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে ত্যাগী নেতৃত্বের মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত দলের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় দলীয় সূত্র জানায়, গত ৫ ফেব্রæয়ারী ২০২০ জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিলে এটিইউ তাজ রহমানকে অতিরিক্ত মহাসচিব, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, গিয়াস উদ্দিন, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী কে উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, আলহাজ্ব সাব্বির আহমদকে ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক এম পি এহিয়া চৌধরীকে যুগ্ম মহাসচিব, সদস্য যোগ্যদানকারী সাইফুদ্দিন খালেদকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, আতাউর রহমান আতা, তোফায়েল আহমদ, সাহেদ আহমদ, বশির উদ্দিন, উসমান আলী, নাহিদা আক্তার ও মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়। এদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রবাসী এবং বিভিন্নদল থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন। সর্বশেষ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অযোগ্য প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বে সদ্য বিএনপি থেকে যোগদানকারী সাইফুদ্দিন খালেদকে পদায়িত করায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন সিলেটের সাবেক জাতীয় পার্টি ও ছাত্র সমাজ নেতৃবৃন্দ। অচেনা লোকদের কেন্দ্রের এসকল পদে পদায়িত করায় সিলেট বিভাগে জাপার রাজনীতি হুমকির মূখে পড়েছে বলে তৃনমূল নেতাকর্মীর অভিযোগ। নতুন এ কমিটি ঘোষনার খবরে সিলেটে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালের পর থেকে সিলেটে জাতীয় পার্টির বিভক্তির সূচনা ঘটে। পুরনো অনেক নেতাই ছেড়ে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদকে। কেউ যোগ দেন অন্য দলে, কেউ বা আবার চলে যান প্রবাসে। এরপর থেকে অতিথি পাখির মতো বিদেশি নেতারা হাল ধরেন এরশাদের জাতীয় পার্টির। কিন্তু দলে হারিয়ে যায় রাজনৈতিক গতি। প্রবাসী নেতারা বড় বড় পদ নিয়ে নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন। প্রবাসী নেতাদের ক্ষমতা আর টাকার জোরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান দলের ত্যাগী নেতারা।
জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বরাবরই পুণ্যভূমি সিলেটকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি বলে বেড়ান। কিন্তু তার এ দ্বিতীয় বাড়ির ভাঙন ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত। দলকে সুসংগঠিত করতে দলের চেয়ারম্যান কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বারবার বিতর্কিত কমিটি দিয়ে নেতাদের মধ্যে বিভক্তির ফারাক আরও বৃদ্ধি করেছেন।
২০১৫সালে গিয়াস উদ্দিন কে সভাপতি ও ইশরাকুল হোসেন শামীম কে সেক্রেটারী করে জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে বাতিল করে আব্দুল্লাহ সিদ্দিকীকে আহবায়ক, উসমান আলীকে সদস্য সচিব করে জেলা ও এহিয়া চৌধুরী এমপি কে আহবায়ক এবং আব্দুল হাই কাইয়ুমকে সদস্য সচিব করে মহানগর কমিটি গঠন করা হয়। তাদেরও স্থায়িত্ব বেশিদিন হয়নি। ২০১৭সালে এটিইউ তাজ রহমানকে আহবায়ক ও উসমান আলীকে সদস্য সচিব করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করলেও একটি উপজেলা, থানা, পৌর কমিটি গঠন করতে পারেন নি। জাতীয় পার্টির কার্যক্রম সঠিক ভাবে দেখভাল করতে কেন্দ্রীয় ভাবে একটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। যাদের কাজ বিভাগীয় পর্যায়ে সফর করে সাংগঠনিক অবস্থান কেন্দ্রকে অবহিত করা। যে কমিটির নেতৃত্বে বিগ্রেডিয়ার মাসুদ চৌধুরী আহবায়ক, শামীম হায়দার পাটোয়ারা ও তাজ রহমান। গত ৫ ফেব্রæয়ারী সিলেট জেলা পরিষদ হলরুমে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সাথে জেলা জাপার মতবিনিময় সভায় জেলা কমিটির মেয়াদকালিন সময়ের মধ্যে কোন উপজেলা, থানা, পৌর কমিটি গঠন করতে না পারার ব্যর্থতায় জেলা আহবায়ক তাজ রহমান উক্ত পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এছাড়া সময় সময় জেলা কমিটির বিভিন্ন সভায় সদস্য সচিব উসমান আলী জেলা কমিটির ব্যর্থতা স্বীকার করে উপযুক্ত দায়িত্বশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন ভাবে জেলা কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রের কাছে বারবার অনুরোধ জানান। ব্যর্থতার দায়ভার কাধে নিয়ে পদত্যাগকারী তাজ রহমানকে পুণরায় সিলেট বিভাগের দায়িত্বশীল মনোনীত করায় জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তুষ ও অনিহা বিরাজ করছে। রহস্যজনক ভাবে একই ব্যক্তিকে বার বার কেন্দ্রে পদায়িত করায় সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রের্ক হয়েছে।
অথচ ২০১২সালের ১২ ডিসেম্বর সিলেট রেজিষ্টারী মাঠে জাপা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এর উপস্থিতিতে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন ও কাউন্সিলে এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন কে সভাপতি ও ইশরাকুল হোসেন শামীম কে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যাদের গতিশীল নেতৃত্বে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সিলেটের ১৫টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ৬টি থানা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। জাতীয় পার্টির ইতিহাসে এইসব কমিটি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে আজ প্রেরণার উৎস। যা অদ্যাবদি চলমান।
জেলা ছাত্র সমাজের সাবেক আহবায়ক তাজ উদ্দিন এপলু বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদের দ্বিতীয় বাড়ী সিলেটে কোন দালালদের টাই দেওয়া হবেনা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সিলেট ৪ আসন থেকে ৫০০ ভোট পায়নি যে নেতা, তাকে জেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মেনে নিচ্ছেনা। তাকে প্রেসিডিয়াম করায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। এমতাবস্থায় দলের পরিক্ষীত ও নিবেদিত প্রাণ নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানান।
জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ইশরাকুল হোসেন শামীম বলেন, তৃণমুল নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির প্রাণ। তাদের মতামতকে অপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া নেতৃত্ব জাতীয় পার্টির বিভক্তির মূল কারণ। যা স্থানীয় নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারে না। তাই তৃনমূলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠন সম্ভব হলে জাতীয় পার্টি তার হারানো অতিহ্য ফিরে পাবে, দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারার সৃষ্টি হবে। যা ছিল পল্লীবন্ধু হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এর স্বপ্ন ও সাধনা।
এব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা’র সাথে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।