নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল। মানসম্মত শিক্ষার জন্য রয়েছে ৪ টি মূল উপাদান তার মধ্যে প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এই চারটি উপাদান মানসম্মত হলেই শিক্ষার গুনগতমান নিশ্চিত হয়। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে এই চারটি উপাদানকে লক্ষ্য করে গোয়াইনঘাট উপজেলায় মানসম্মত শিক্ষার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি শারীরিক ভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীর ব্যাপারে খোজ খবর রাখছেন। ফলে ক্রমান্বয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে। উপজেলায় নানা সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয় গুলোর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার পরিদর্শন করেন পরিদর্শনের ফলে তাঁর নিকট চলে আসে একাডেমিক ভবন সমস্যা, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ও বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ একটি তালিকা।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের মধ্যে পাঠ চলাকালীন সময়ে শিক্ষকদের হাটবাজারে চলাফেরার অভিযোগ। তিনি সুকৌশলে সমস্যা জর্জরিত বিদ্যালয়গুলো একাধিক বার পরিদর্শন করে শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুণরায় বিদ্যালয়মুখী করতে নানা সভা সমাবেশ ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মাসিক সভায় অ্যাডভোকেসি করে অভিভাবকদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।
একান্ত সাক্ষাতকারে ইউএনও বলেন, তার এ সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দিনে দিনে কমে আসছে গোয়াইনঘাট উপজেলায় শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার সংখ্যা। সরকারি নিয়মানুযায়ী বিদ্যায়লয় গুলোতে আগমন ও প্রস্থানের উপর তিনি গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উপজেলা সদরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর ভাবে নজরদারি বৃদ্ধি করে ও সফলতা অর্জন করেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়তে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে তিনি অনেকটাই সফল। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে বিদ্যালয় গুলোর একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সংস্কার, মেরামতসহ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য আন্তরিক ভাবে কাজ করেন। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে জনসচেতনতা মূলক সভার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত জাতিয় দিবস গুলো যথাযথ সম্মান পালনের কঠোরভাবে নির্দেশনা তামিল করান, তিনি প্রত্যেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল কন্টেন তৈরি করে পাঠদানের উপর গুরুত্ব দিয়ে মাল্টিমিডিয়ার ব্যাবহারে সকল শিক্ষকদের উৎসাহিত করে তুলেন। ক্ষুদ্র, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আলাদা সম্মানী ভাতা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষায় উৎসাহিত করে তিনি সহযোগিতা মুলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেন। জাফলং চা বাগান, গুলনী চা বাগান ও ফতেহপুর চা বাগানের শ্রমিকদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষায় এগিয়ে নিতে বাগান গুলোতে তিনি বেশ কয়েকটি জনসচেতনতা মূলক সভা করে জন সচেতনতা সৃষ্টি করেন। ফলে ওই বাগানের শ্রমিক পরিবার গুলিতে দিনে দিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়াও তিনি উদ্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাফলং চা বাগানের শ্রমিকদের ছেলে মেয়ে ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ছেলেমেয়েদের জন্য মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে প্রায় দুইশ’জন শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার কম্পোজ, সেলাই প্রশিক্ষণ, বুটিকসহ নানা প্রশিক্ষণ গ্রহন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
গোয়াইনঘাট ইমরান আহমদ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রয়েছে তার এক অনন্য অবদান। ইমরান আহমদ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় নারী শিক্ষার নব জাগরন সৃষ্টির পাথেয় হয়েছে। ইউএনও বিশ্বজিত কুমার পালের প্রচেষ্টায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি হয়। ফলে বর্তমানে হাওরাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে এখন পড়াশোনা জানা লোক পাওয়া যায়।
বাঙালি জাতির অতীত ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে ধারণা দেওয়ার জন্য উপজেলার ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য তিনি উপজেলার ১৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার প্রতিষ্ঠা করেছেন।