অতিথি প্রতিবেদক:: সদ্য প্রতিষ্ঠিত সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি এখনো। শুরু হয়নি পাঠদান। অস্থায়ী অফিসে চলছে দাপ্তরিক কাজ। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৭৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে উপাচার্যের ১৩ আত্মীয়কে বসানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। নিয়োগ পেয়েছেন জামায়াত-শিবিরের লোকজনও।
দেশের চতুর্থ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৮ সালের অক্টোবরে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বড় অংশকেই অস্থায়ী (অ্যাডহক) ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা লেনদেন, আত্মীয়করণের অভিযোগ রয়েছে। এসব নিয়োগের বিষয়ে যাতে চাপে পড়তে না হয় সে জন্য রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বজনদেরও চাকরি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকের একাধিক সাংবাদিকের আত্মীয়-স্বজনও চাকরি পেয়েছেন; যাঁদের অনেকের ওই সব পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে উপাচার্যের ১৩ আত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন শ্যালক নাহিদ গাজীর স্ত্রী ফাহিমা আক্তার মনিও। উপাচার্যের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় হিসেবে সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) পদে নিয়োগ পেয়েছেন শাবিপ্রবির সাবেক শিবিরকর্মী সরোয়ার আহমদ।
উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নঈমুল হক চৌধুরী দুজনেরই গ্রামের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের ভাগ্নে রহমত আলী, মামাতো ভাই মোনাল চৌধুরীকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে ছাত্রশিবিরের সিলেট মহানগর শাখার সদস্য আলমগীর, দেলোয়ার ও ফারুকী এবং সদর উপজেলা শিবিরের সাবেক নেতা সাফওয়ান আহমদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপসহকারী প্রকৌশলী পদে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) শিবিরের সাথি আশরাফ হোসেন এবং সেকশন অফিসার হিসেবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরকর্মী বেলাল উদ্দিন নিয়োগ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হারিছ চৌধুরীর আত্মীয় বেলাল চৌধুরীসহ বিএনপি-জামায়াতের মোট ১৭ জন নিয়োগ পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নঈমুল হক চৌধুরী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না, এ বিষয়টি তাঁর জানা নেই মন্তব্য করে উপাচার্য বলেন, ‘তা ছাড়া তিনি ঠিক রেজিস্ট্রারও নন, ফিন্যান্স ডিরেক্টর।’ নিজ দলের লোকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে সুবিধা দিচ্ছেন নঈমুল—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিপুলসংখ্যক লোকবল নিয়োগে লেনদেন ও অনিয়মের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এসব অভিযোগ সঠিক নয়। তা ছাড়া যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এর বেশির ভাগ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। কর্মকর্তার সংখ্যা খুব বেশি নয়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান শুরুর আগে এত জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজ, সাইড দেখাশোনাসহ নানা কাজের জন্য তো লোক লাগে।অ্যাডহকে লোকজন নেওয়া হলেও নিয়ম মেনে অনেকের চাকরি স্থায়ী করা হয়েছে। বাকিদেরও হবে।’ সিন্ডিকেটে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে বলেন, ‘স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। পরে প্রক্রিয়া মেনেই স্থায়ী করা হবে।’
বিএ/৬ নভেম্বর