শাবিপ্রবি প্রতিনিধি :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে অতিরিক্ত (১৭ হাজার টাকা) ভর্তি ফি নির্ধারণ করার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে সমালোচনা। এদিকে রবিবারের মধ্যে ভর্তি ফি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে না নিয়ে আসলে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ঘেরাও করে তালা ঝুলানো হবে এবং ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভর্তি ফি, ভর্তি প্রক্রিয়া, ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ভর্তির সময়সূচী ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সাবজেক্ট নির্বাচন ও ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীকে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। SSC ও HSC পরীক্ষার মূল ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট) সাথে নিয়ে আসতে হবে। ভর্তির জন্য ফি বাবদ ১৭০০০/= টাকা সাথে নিয়ে আসতে হবে। পরীক্ষার্থীর ব্লাড—গ্রুপ এর যথাপোযুক্ত প্রমাণপত্র সাথে নিয়ে আসতে হবে। সাবজেক্ট নির্বাচন এর ক্ষেত্রে উপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মেধাক্রম (Rank) অনুযায়ী ডাকা হবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন রোববারের মধ্যে ভর্তি ফি সহনীয় পর্যায়ে না নিয়ে আসলে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা ঝুলানোর আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, পূর্বে অতিরিক্ত ভর্তি পরীক্ষা ফি নিয়ে আমরা যখন মানববন্ধন করি তখন প্রশাসন থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয় যে ভর্তি ফি পূর্বের তুলনায় কম নেওয়া হবে। কিন্তু প্রশাসন তাদের কথা রাখেনি। তাই এইবার আমরা আর কোনো আলোচনায় বসতে চাই না। যদি আগামী রবিবারের মধ্যে ভর্তি ফি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে না নিয়ে আসা হয় তাহলে আমরা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং ঘেরাও করে তালা ঝুলাবো এবং ফি না কমানো পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এদিকে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অতিরিক্ত ফি’কে অযোক্তিক আখ্যা দিয়ে এর তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফি কমানোর দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শাবিপ্রবি শাখা। বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪—২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম আগামী ১৫ ই এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করে দেখছি ২০২৪—২৫ শিক্ষাবর্ষের মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর সাধ্যের বাইরে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই অযৌক্তিক ফি জন্য তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দ্রুত সময়ের ভিতরে এই অযৌক্তিক ফি কমিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের শাবিপ্রবি শাখাও মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি নির্ধারনের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি জানায়,আগামী ১৫ই এপ্রিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪—২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। গত সেশনে গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকাকালীন ভর্তি ফি—র চেয়ে এবছর ভর্তি ফি খুবই নগন্য পরিমাণ কমানো হয়েছে কিন্তু সেটিও গুচ্ছ পদ্ধতির পূর্ববর্তী সময়ের ভর্তি ফি—র চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি, যা পরিশোধ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সাধ্যের বাইরে। গত কয়েক বছরের মাঝে ভর্তি ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করা কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি নির্ধারণের নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি তারেক মনোয়ার এবং শাখা সেক্রেটারী মাসুদ রানা তুহিন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করে দেওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের অযৌক্তিক ভর্তি ফি উচ্চশিক্ষার পথকে কঠিন করে তুলবে। ইতোপূর্বেও আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস তৈরির লক্ষ্যে উপাচার্য মহোদয়ের নিকট ৫২ দফা সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করে ভর্তি ফি সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। তাই আমরা দ্রুত সময়ের মাঝে নতুন করে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য ভর্তি ফি নির্ধারনের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে অতিরিক্ত ভর্তি ফি নিম্নবিত্তের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ আখ্যা দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি নির্ধারনের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শাবিপ্রবি সংসদ। বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ১৭,০০০ টাকা ভর্তি ফি গ্রহণের সিদ্ধান্ত একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও অমানবিক সিদ্ধান্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ পরিবার চরম আর্থিক সংকটের মুখোমুখি। এই ধরনের ফি বৃদ্ধি নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকারকে সংকুচিত করবে।
২০২৪—২৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নেওয়া এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বৃদ্ধি এবং উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি করছে। এই দাবিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ অবান্তর মনে করে। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতের জন্য সরকারি বাজেট বৃদ্ধি না করে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত ব্যয়ভার চাপিয়ে দেওয়া উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শাবিপ্রবি সংসদ মনে করে, শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার। অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষাখাতকে পণ্যায়ন করার বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগঠিত করে আসছি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত ভর্তি ফি শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর আঘাত আনবে না, বরং পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অপ্রত্যাশিত পরিণতি বয়ে আনবে। ২০২৫ সালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শাবিপ্রবির ভর্তি ফি এর পরিমাণ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ—উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের স্বার্থের জন্য যৌক্তিক আন্দোলন করবে সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত কথাবার্তা তারা বলে সেটা কাঙ্ক্ষিত না।
তিনি আরো বলেন, ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় একাডেমিক কাউন্সিলের এখতিয়ারাধীন। এটা ব্যক্তি হিসেবে কেউ বললেই যে কমানো যাবে এমন না। একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করে কমতেও পারে আবার নাও কমতে পারে। এটা সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখন হুটহাট কিরে কিছু করার সুযোগ নেই। তবে উপাচার্য মহোদয় চাইলে তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তিনি চাইলে জরুরি ভিত্তিতে একাডেমিক কাউন্সিলের ব্যবস্থা করতে পারেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি।