May 5, 2024, 9:23 am

সংবাদ শিরোনাম :
চোরাচালান লাইনম্যান রুবেল আহমদ বেপরোয়া জমির ধান নষ্ট করে দিলো প্রতিপক্ষ: দিশেহারা কৃষক সিলেটে ইট ভাটা নিয়ে নজিরবিহীন কেঙ্ককারী বিশ্ব গাজায় হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছে, বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না : প্রধানমন্ত্রী সুজানগর ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কমিটি গঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত মাওলানা লুৎফুর রহমানের মৃত্যু ”গুজব সংবাদ ফেসবুকে” বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বিজিবির নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে সচিবদের :প্রধানমন্ত্রীর বইমেলা বাঙালি জাতিসত্তা দাঁড় করাতে সহায়ক : কবি নুরুল হুদা দুর্নীতি-অনিয়ম র অভিযোগে ডৌবাড়ী প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্টের ৪ সদস্য বহিষ্কারের অভিযোগ ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী গোয়াইনঘাটের শীর্ষ কুখ্যাত চোরাকারবারী কালা মিয়া বিছানাকান্দি সীমান্তে অবৈধ পথে ঢুকছে ভারতীয় গরু :নেপথ্যে গোলাম হোসেন! বাদাঘাট মসজিদে ৫ লাখ টাকার অনুদান দিলেন সেলিম আহমদ এমপি রতনের আশীর্বাদ : যাদুকাটা গিলে খাচ্ছে রতন-মঞ্জু গোয়াইনঘাটে স্কুলের নামে প্রবাসীর জমি দখল গোয়াইনঘাটে এক শিবির নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ  সিলেটে শেখ হাসিনার প্রথম সফর স্মরণ করে আবহবিচ’র দু’আ মাহফিল শেখ হাসিনার সিলেট শুভাগমণের ৪৩ বছর সোমবার সিলেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক এমপির আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা নির্বাচিত সুনামগঞ্জের গোলাম আজম তালুকদার দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত মোখা:‘পরিস্থিতি বুঝে’ এসএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে নির্বাচনের ৪ দিন আগে নতুন যে প্রতিশ্রুতি দিলেন এরদোগান উত্তাল পাকিস্তান, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলা জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বৈধ বলার সুযোগ নেই আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘটত না: ট্রাম্প কী হচ্ছে, আর কী হবে তা সময়ই বলে দেবে: অপু বিশ্বাস
যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৫ কোটি টাকা উধাও: চেয়ারম্যান-সচিব লাপাত্তা

যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৫ কোটি টাকা উধাও: চেয়ারম্যান-সচিব লাপাত্তা

Please Share This Post in Your Social Media

সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন এবং সচিব অধ্যাপক এ এম এইচ আলী আর রেজা আট দিন ধরে উধাও। তাদের দু’জনকে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও খুঁজে পাচ্ছে না। বিপুল অর্থ আত্মসাতের দায়ে গত ১৮ অক্টোবর তাদেরসহ মোট পাঁচজনের নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই দিন সন্ধ্যায় শিক্ষা বোর্ডের বাংলোর নিজ নিজ বাসা থেকে তারা দু’জন বেরিয়ে যান। তার পর থেকে তাদের আর খোঁজ মিলছে না।

এদিকে, আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। ২ ডিসেম্বর থেকে হবে এইচএসসি। বোর্ডে পরীক্ষার প্রস্তুতি কাজে জরুরি অনেক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। অথচ বোর্ডের শীর্ষ দুই নীতিনির্ধারকই পালিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত বোর্ডের অন্তত পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। অর্থ আত্মসাতের দায়ে কোনো শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পালিয়ে থাকার ঘটনা দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। আলোচিত দু’জনই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা।

গত ১৮ অক্টোবর বোর্ড ছেড়ে যাওয়ার আগে চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন অফিসিয়াল ফাইলে নোট রেখে যান, দাপ্তরিক কাজে তিনি গাজীপুরে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার চালকসহ তার অফিসিয়াল গাড়িও নিয়ে গেছেন। তবে গাজীপুরে যশোর শিক্ষা বোর্ডের দাপ্তরিক কী কাজ থাকতে পারে, বোর্ডের কেউই তা বলতে পারছেন না।

দুদকের মামলা হওয়ার দিন একই সময়ে আট দিনের মেডিকেল ছুটির আবেদন রেখে বোর্ড ছাড়েন সচিব অধ্যাপক এ এম এইচ আলী আর রেজা। ১৮ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান, সচিবসহ পাঁচজনের নামে মামলা করে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ধরা পড়ে আরও আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতি ও আত্মসাতের ঘটনা। একজন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততায় এমন বৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সারাদেশে সমালোচনার ঝড় তুলছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ ঘটনা যশোর শিক্ষা বোর্ডকে শুধু কলঙ্কিতই করেনি, কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

চেয়ারম্যান ও সচিবের অনুপস্থিতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘিরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বোর্ডের। সমস্যার সমাধান না হলে সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কিত অনেকেই।

যেভাবে অর্থ আত্মসাৎ :গত ৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার অডিটকালে যশোর শিক্ষা বোর্ডে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের প্রথম ঘটনাটি ধরা পড়ে। সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করা হয়েছিল। ওই চেকগুলো জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং শাহী লাল স্টোর নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে এই বিপুল টাকা আত্মসাৎ করা হয়। দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংক শিক্ষা বোর্ড শাখার এই চেকগুলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার মাধ্যমে পরিশোধিত হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়-ব্যয় বোর্ডের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টের সঙ্গে মিলকরণের সময় দেখা যায়, বোর্ডের ব্যয় অ্যাকাউন্ট এসটিডি-২৩২৩২৪০০০০০২৪ হিসাব খাতের ৯টি চেক পরিশোধিত হয়েছে। কিন্তু বোর্ডে সংরক্ষিত মুড়ি বইয়ের চেকে উল্লিখিত টাকার পরিমাণের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরিশোধিত টাকার মিল নেই। এ ধরনের অমিল ধরা পড়ায় হিসাব প্রদান শাখার হিসাব রেজিস্ট্রারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। বোর্ডে সংরক্ষিত মুড়ি বইয়ের ৯টি চেকের তারিখ অনুযায়ী হিসাব শাখায় ব্যয় রেজিস্ট্রারের ব্যয় বিবরণীতে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য চেকগুলো ইস্যু করা হয়। কিন্তু ইস্যুকৃত চেকগুলোর বিপরীতে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ সরকারি কোষাগারে অর্থ পরিশোধিত হয়নি। শিক্ষা বোর্ডের ইস্যুকৃত ৯টি চেক জালিয়াতি করে দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে দুই কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা তুলে নিয়েছে।

এর মধ্যে ২০২০ সালের ৮ জুলাই আয়কর বাবদ দুই হাজার ৫০০ টাকার চেক ইস্যু করে বোর্ড। ওই চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং প্যাকেজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন করেছে। একইভাবে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট ভ্যাট বাবদ এক হাজার ২০৭ টাকার ইস্যু করা হয়। ওই চেক জালিয়াতি করে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট আয়কর বাবদ ৬০০ টাকার চেক ইস্যু করা হয়। ওই চেকের নম্বর ও তারিখ ব্যবহার করে শাহী লাল স্টোর নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর আয়কর বাবদ ৬৭৮ টাকার চেক ইস্যু করে বোর্ড। এই চেকের নম্বর ও তারিখ ব্যবহার করে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে শাহী লাল স্টোর। একই বছরের ১৯ নভেম্বর ভ্যাট বাবদ ৬০০ টাকার চেক ইস্যু করা হয়। ওই চেক জালিয়াতি করে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। ২০২১ সালের ৬ মে ভ্যাট বাবদ ৯৯৬ টাকার চেক ইস্যু করা হয়। সেটি জালিয়াতি করে ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। ব্যাংক থেকে পরিশোধিত চেক/অর্থের বিপরীতে প্রতিষ্ঠান দুটি বোর্ডে কোনো মালামাল বা সেবা সরবরাহ করেনি।

সংশ্নিষ্টরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান বোর্ডে মালামাল সরবরাহের জন্য বোর্ডের সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর কার্যাদেশে উল্লিখিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টোরে মালামাল সরবরাহ করে বোর্ডের সচিবের কাছে মালামালের চালান ও বিল ভাউচার দাখিল করবেন। তারপর বোর্ডের সচিব মালামাল বুঝে নেওয়ার জন্য চালান ও বিলের ওপর স্টোরকিপারকে মার্ক করে স্টোরে পাঠাবেন। স্টোরকিপার ওই চালান এবং বিল ভাউচার সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত স্মারকে কার্যাদেশ অনুযায়ী মালামাল বুঝে নিয়ে বিলের জন্য রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিল ভাউচার হিসাব প্রদান শাখায় পাঠাবেন।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে হিসাব প্রদান শাখার কার্যাদেশের মাধ্যমে বিল প্রদান নথি নিরীক্ষা করে দেখা যায়, ব্যাংক থেকে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে কোনো বিল ভাউচার নথিতে উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ জালিয়াতি চক্র অন্য বিল থেকে ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার লক্ষ্যে ইস্যু করা চেকগুলোর মুড়ির নম্বরের এবং তারিখের মিল রেখে চেক জালিয়াতি করে বোর্ড তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

মামলার আসামি যারা: এ ঘটনায় গত ১৮ অক্টোবর পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। এতে অভিযুক্তরা হলেন- চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, প্রতারক প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলার শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম।

এ মামলার তিন দিন পর গত ২১ অক্টোবর ধরা পড়ে আরও আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের ঘটনা। এ ব্যাপারেও দুদকে আরও একটি অভিযোগ দেয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। যেখানে বলা হয়েছে, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন সচিব থাকার সময় এসব জালিয়াতি করেছেন।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক এমদাদুল হক গতকাল জানান, আমরা আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছি। এ নিয়ে দুদকে ২১ অক্টোবর আরও একটি অভিযোগ জমা দিয়েছি। বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন বোর্ডের সচিব থাকার সময় প্রথম এই জালিয়াতি করা হয়। বোর্ডের আবদুস সালাম তখন হিসাব শাখার দায়িত্বে ছিলেন। তার নেতৃত্বে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক যশোরের শরিফুল ইসলাম বাবু এসব জালিয়াতি করেছেন বলে আমরা জেনেছি। এখন দুদক বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

সোনালী ব্যাংক শিক্ষা বোর্ড শাখার ব্যবস্থাপক এসএম শাহিদুর রেজা জানান, ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ঢাকার ফকিরাপুল ঠিকানার চেক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ক্লিয়ারিং চেকের মাধ্যমে এসব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। চেকে চেয়ারম্যানসহ সবার সই যাচাই করেই সেটা ছাড়া হয়। তবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক রিয়াদ হাসান জানিয়েছেন, সোনালী ব্যাংকের ক্লিয়ারেন্সর ভিত্তিতে চেকের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে চেক জালিয়াতির সঙ্গে তাদের কোনো ত্রুটি থাকার সুযোগ নেই।

এদিকে মামলা হওয়ার পর চেয়ারম্যান ও সচিব তাদের বাংলো থেকে বের হয়ে যান। এরপর তারা কেউ অফিসে আসেননি। তাদের মোবাইল ফোনও রয়েছে বন্ধ। তবে প্রথম দফায় জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর চেয়ারম্যান প্রফেসর মোল্লা আমীর হোসেন দাবি করেছিলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের চেক ছাপানো। সেখানে হাতে লেখার সুযোগ নেই। জালিয়াতি করে ভুয়া চেকের মাধ্যমে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা থানায় জিডি করেছি। গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। যেটির প্রধান কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানি। কমিটির রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুর্নীতির বরপুত্র: মোল্লা আমীর হোসেন ১৪তম বিশেষ বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক (ইতিহাস) পদমর্যাদার কর্মকর্তা। অতীত কালেও তিনি বিভিন্ন স্থানে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারসহ যশোর বোর্ডের সচিব থাকা কালেও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে যশোর বোর্ডের সচিব পদ থেকে বদলি করা হলে নিজের দুর্নীতির প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে তিনি অফিসিয়াল গোপন নথিপত্র ও কম্পিউটার হার্ডডিস্ক চুরি করে পালানোর চেষ্টা করেন। কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখেন। পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় তার কাছ থেকে ওইসব ফাইল ও হার্ডডিস্ক উদ্ধারের পর মুক্ত হন তিনি।

এই বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু অভিযোগ করেন, অধ্যাপক আমীর সচিব থাকার সময়ই হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম ও তার ব্যবসায়িক পার্টনারদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই চেক জালিয়াতির ঘটনা। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে জড়িতদের নাম বেরিয়ে আসবে। এর আগে ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলেও তিনি তদবিরে রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটির টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কলামিস্ট অধ্যাপক ড. আমীরুল আলম খান সমকালকে বলেন, যাই ঘটুক না কেন চেয়ারম্যানের বোর্ডেই থাকার কথা। তিনি কেন আত্মগোপনে গেলেন? ব্যাপক তদন্ত হওয়া উচিত এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনার। দ্বিতীয়ত, শুধু এই বোর্ডে নয়, মোল্লা আমীর যত স্টেশনে চাকরি করেছেন, সবগুলোতেই নানা অপকর্মের জন্ম দিয়েছেন। কারণ তার অতীত রেকর্ড ভালো নয়। সেগুলোরও বিচার হওয়া দরকার। সব জেনেশুনেও এমন একজন ব্যক্তিকে বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে সরকারই বসালো কেন?

শিক্ষা সচিবের বক্তব্য: এ ঘটনা সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতরাতে সমকালকে বলেন, মামলা হওয়ার কথা আমরা শুনেছি। চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছিলেন যে, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তারা নিজেরাই পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আমি বলেছিলাম, ঠিক আছে, তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন আমাদের দিন। আমরা আরেকটি কমিটি গঠন করিনি, কারণ একই বিষয়ে দুটি কমিটি করলে অকারণে কাজের সময় নষ্ট হয়। প্রতিবেদন পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব ভেবেছিলাম।

সচিব বলেন, উনারা পলাতক কিনা জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব এ ব্যাপারে। তবে আইন অনুসারে মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে এবং গ্রেপ্তার হলে উনারা সাময়িক বরখাস্ত হবেন।

এসএসসি পরীক্ষা ও বোর্ডের অন্যান্য কার্যক্রমে সৃষ্ট অচলাবস্থা প্রসঙ্গে মাহবুব হোসেন বলেন, ঢাকা বোর্ড পরীক্ষা কনডাক্ট করে। তারা জানিয়েছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকলেই পরীক্ষা নেওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না।

চেয়ারম্যান মোল্লা আমীরের আগের কর্মস্থলের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কেউ আগে জানায়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, যে কোনো দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্সে থাকব।

এবিএ/০৫





Calendar

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031



  1. © সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2017 sylhet71news.com
Design BY Sylhet Hosting
sylhet71newsbd