শরীফ আহমদ, দক্ষিণ সুরমা : সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় এবার অনাবাদী জমিতে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে কৃষকদের মুখে। সফল হয়েছে কৃষি অফিসের উদ্যোগ ও পরামর্শ। জমিতে উৎপাদিত সূর্যমুখীর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে উৎসুক জনতা ভীড় করছেন। তেল ফসল সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন ঘরে তোলা হলে অবশ্যই কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। অর্থ উপার্জনে নতুন এক সম্ভাবনার নাম সূর্যমুখী চাষ। আর্থিকভাবে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণ সুরমা
যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে, যা অতীতে ছিল অকল্পনীয়। জানা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বছরে দুইবার জমি আবাদ হয়। এরমধ্যে নিচু জমিতে বোরো ও উঁচু জমিতে রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়। রোপা আমন কাটার পর জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে। বিশাল আয়তনের অনাবাদি জমিগুলো কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই চাষে উৎসাহ ও আগ্রহতার কমতি নেই কৃষক সারওয়ার আলম মিতুনের তিনি উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের তেতলী মাঝপাড়া গ্রামের (দারোগা বাড়ীর) বাসিন্দা পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিবীদ, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় ২ বিঘা জায়গায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন।তিনি জানান সূর্যমুখী চাষ করে নিজে স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও আমিষের চাহিদা পূরণ করা যায়।এই ভৈজ্য তৈল কোলেস্টেরলমুক্ত ও ডায়াবেটিক রোগীদের উপকারী। নিজ দেশের তৈলের চাহিদা দূর করা যায়।
সুর্য্যমুখি ফুল ও গাছ থেকে উন্নতমানের কোলেস্টেরলমুক্ত তেল উৎপাদন হয়। এ তেল বর্তমান বাজারে প্রতি লিটার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সূর্যমুখী থেকে শিশু খাদ্য, খাওয়ার বাদাম, গবাদিপশুর খাদ্য ও জ্বালানী হয়। জমি রোপনের মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়। ব্যয় কম ও আয় বেশি হওয়ায় সূর্যমুখী আবাদে কৃষকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ শামীম আক্তার বলেন, দক্ষিণ সুরমায় এবার সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। সরিষার পাশাপাশি সূর্যমূখী জনপ্রিয় করতে প্রতিটি জমি চাষের আওতায় তৈল ফসলা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকবে। প্রদর্শনী ৮ হেক্টর ও প্রনোদনা ৫২ হেক্টর সহ মোট ৬০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। এতে অনাবাদি জমিগুলো কাজে লেগেছে। সারওয়ার আলম মিতুনের সূর্যমুখী চাষাবাদ খুবই ভাল হয়েছে। আগে এসব জমিতে এক ফসল হিসেবে শুধু রোপা আমন চাষ হতো।
এ ব্যাপারে তেতলী ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকতা মিল্টন পাল জানান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের আমনের অনাবাদি হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন প্রায় ৭ জন কৃষক। এই বছর ইউনিয়নে ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।প্রতি বিঘা জমিতে ৫ হাজার টাকা ব্যায় হয়। প্রতি লিটার ২৫০টাকা লিটার সূর্যমুখী উৎপাদিত সরিষার ঘানী বিক্রি করা যাবে। এতে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা লাভবান হবে কৃষকরা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশে ব্যাপক ভাবে সূর্যমুখী আবাদ হলে বিদেশ থেকে কোলেস্টেরলমুক্ত তেল আমদানি করা লাগবে না। দেশের তৈল চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করা যাবে।
তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক মিয়া জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। দেশে কৃষকদের যথাযথ মূলায়নের করায় কৃষিখ্যাতে উন্নয়ন বাড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের তেতলী ইউনিয়নেরও কৃষকরা কৃষিখাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সূর্যমূখী চাষ করে অনেকেই লাভ হয়েছেন।