সিলেট : সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে এলাকাবাসী ও পরিবারের পক্ষ থেকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম আজ বুধবার দুপুরে শেষ হচ্ছে।
তবে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামের সময় শেষ হওয়ার আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এলাকাবাসী ও রায়হানের পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় এক সম্মিলিত বৈঠকে নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ, পরদিন শুক্রবার বাদ জুময়া মসজিদে মসজিদে রায়হানের জন্য দোয়া মাহফিল ও শনিবার বিকেল ৪ টায় এলাকাবাসির পক্ষ থেকে মদিনা মার্কেট পয়েন্টে মানববন্ধন।
পরিবারের পক্ষে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রায়হানের স্বজন মো. শওকত হোসেন। তিনি ঘোষিত প্রতিটা কর্মসূচি সফল করতে সিলেটের সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন- ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামের শেষের পর কঠোর কর্মসূচির কথা ছিল। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তারা আপাতত কর্মসূচি থেকে সরে এসেছেন। তবে এরপর যদি প্রশাসন জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানান- এই আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। বিচার প্রাপ্তির আন্দোলন। সরকারও এই আন্দোলনের সাথে রয়েছে। এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান, ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ দাসসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এদিকে সিলেট বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩৪) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি খোকন কুমার দত্ত।
এর কিছু সময় আগে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় সাময়িক বহিষ্কৃত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
এমসি কলেজে গণধষণ ও পুলিশের নির্যাতেন নিহত রায়হান হত্যার প্রতিবাদে ঝড় বইছে দেশে ও বিদেশে। জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছে তারা। প্রতিদিন নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে মানববন্ধন করেছে অনেকেই। থেমে নেই সামজিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার লোক।
তার ধারাবাহিকতায় বুধবার সিলেট নগরীর বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ ও চৌহাট্রস্থ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে সড়ক অবরোধ করে মিছিল করেছে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিলেট শাখার নেতৃবৃন্দ।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা এমসি কলেজে ধর্ষকদের পৃষ্টপোষকদের গ্রেফতার ও রায়হান আহমদ হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, রায়হান আহমদ হত্যায় যাদের নাম এসেছে তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার কার্য পরিচালনা করা হোক।
এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, ঘটনার এতদিন পরও কেন কোনো আসামীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না সেটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। যতক্ষন পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস না দিবে প্রশাসন ততক্ষন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর ভোরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন রায়হান আহমদ (৩৪) নামের এক যুবক। পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন।
এই ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হেফাজতে মৃত্যু আইনে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী।
এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।
স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই। মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর পলাতক রয়েছেন বলে দাবি পুলিশের।