নোমান মাহফুজ: গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ইউপির অতি গুরুত্বপূর্ণ বিএনকে সড়কের বেহাল দশা। প্রায় ৩ কিলোমিটারের এ সড়কটি বর্তমানে অনেকটাই চলাচল অনুপোযোগী। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বেহাল সড়কে প্রতিদিন ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে নিশ্চিন্ত, খর্দাপাড়া, দক্ষিণ বারকোট, তলাহাল সহ আশপাশের হাজার হাজার মানুষ। এতে করে ভোগান্তীর শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী , রোগী ও যাত্রীসাধারনরা। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এই সড়কটির বেহাল দশা। পিচ-খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে নাকাল অবস্থা হয়। প্রতিদিন এই রাস্তায় হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ছোটবড় দুর্ঘটনা এই রাস্তায় নিত্যদিনের ব্যাপার, দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলো ধীরে চলতে বাধ্য হচ্ছে। এ সড়কে নিত্যদিন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তার বেহাল দশা ও ভোগান্তির যন্ত্রণায় ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে ক্ষোভের অনূভুতি প্রকাশ।
সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তা ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দকে ভরপুর। জায়গায় জায়গায় শুধু পিচই নয় খোয়াও উঠে গেছে। শুধু যানবাহন নয়, পথচারীদের চলাফেরায়ও অসুবিধা হচ্ছে। প্রায় একই অবস্থা দেখা গেছে সড়কের পুরো এলাকায়। বিএনকে সড়ক নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন করতে গেলে প্রতিবেদককে শুনতে হয় “সাংবাদিক সাব রিপোর্ট লেখিয়া কিতা অইতো। বারো মাস তো কষ্ট করিয়ার আমরা। কতো সাংবাদিকে লেখালেখি করলা। খেউতো আর রাস্তা ঠিক করাইতা পারলা না। ইতা লেখিয়া লাভ নাই। যেতায় ভোটর সময় আমরার আতো পায়ো ধরিয়া ভোট নিলা এরাউ এখন লাপাত্তা। ভোটর সময় খইলা প্রার্থী হখলে রাস্তাঘাটের উন্নয়র করবা। ভোট জিতিয়া তারার খবর নাই। মেম্বার চেয়ারম্যান এমপি মন্ত্রী সবে তারার দরকারে আমরারে বুকে টানিয়া নেইন, এখন আমরার দরকারে তারা নাই। মন্ত্রী সাব তো কতোবার আইলা ই রাস্তা দিয়া, তাইন কিতা দেখছইন না নি। নিজের ক্ষোভের কথা এমনভাবে বললেন নিশ্চিন্ত ও খর্দাপাড়ার কয়েকজন মুরব্বী।” গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে ঢাকাদক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকাদক্ষিণ বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকাদক্ষিণ দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদরাসা, নগর বানাত মাদরাসা, রায়গড় বানাত মাদরাসা, দত্তরাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কিন্ডারগার্টেন, প্রাইভেট স্কুল মাদরাসার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে এই পথ ব্যবহার করেন।
ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী জান্নাত ফেরদৌসি বলেন,প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে আমাদেরকে কলেজে আসতে হয়। ১০ মিনিটের পথ এই রাস্তায় সময় লাগে তার দিগুণ। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ রাস্তা মনে হয় এটিই। ৩ কিলোমিটার সড়কে পিচ ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কোথাও পিচ ডেবে গিয়ে রাস্তার ভিতরেই খাদের তৈরি হয়েছে,যানবাহন চলছে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চালাতে হয় ধীর গতিতে। এক কিলোমিটার পথ যেতে অন্তত ১০ মিনিট সময় লাগে।
সিএনজি চালক লুকমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই কিতা কইতাম আমরা বড়ই কষ্টে আছি ,কেউ নয়া গাড়ি এই রাস্তায় চালাইয়া অনুমানিক যদি গাড়ির মেয়াদ থাকে এক বছর, দেখা যায় ছয় মাস হয় না গাড়িটির নাটবল্টু ঢিলা হয়ে যায়। ছয় মাসে যা আয় করি তার চেয়ে বেশী ঋন করিয়া গাড়ি কাজ করাতে হয়। এখন কিলা চালাইতাম, খাইতাম না, ঋন মারতাম, না আয় করতাম । ই রাস্তা দিয়া গাড়ি চালাইলেউ ভর্তুকি দেয়া লাগে বেশি। রাস্তার যে বেহাল দশা। আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
বিএনকে স্ট্যান্ডের সিএনজি চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ফেসবুক টাইমলাইনে। লিখেন “”ঢাকাদক্ষিণ থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তা বিএনকে রোড ১০ বছর থেকে ভাঙ্গা। যখন রাস্তার কাজ আসে তখন কনট্রাকটর রাস্তা মেরামত করে ইটের গুড়া এবং কমদামি গালা, আবার রাতের বেলা সেই গালার মাঝে জলন্ত মবিল মিশিয়ে দেয়। রাস্তা মেরামতের পর দেখা যায় রাস্তা সাদা হয়ে গেছে, তাই এক বছরের মাঝে রাস্তা ভেঙ্গে যায়, বাকী ১০ বছরের মাজে কাজ আর আসেনা। আজ চার পাঁচটি এলাকার মানুষ অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করে থাকেন, স্কুল কলেজে সময় মতো ছাত্রছাত্রী যেতে পারে না। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই।””