সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক:: দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনছে সরকার। এর মাধ্যমে ডিজিটাল হবে এসব স্কুলের প্রতিটা ক্লাসরুম।
৩০টি স্কুলে থাকবে বইবিহীন ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইনে পড়ালেখার সুযোগ। সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের টেলিকম অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডিজিটাইজেশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের টেলিকম অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঝে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালকদ্বয় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী, সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের অর্থায়নে হাওর, প্রত্যন্ত, অনগ্রসর ও দুর্গম এলাকার ৬৫০টি স্কুলে এই প্রকল্প আগামী ২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল ক্লাশরুম ডিজিটাল করা হবে। এরমধ্যে ৩০টি স্কুলে শিশুরা বইবিহীন বা অনলাইনে ট্যাবে লেখাপড়া করতে পারবে। তাদের ক্লাশে ডিজিটাল টিভি, আইপিএস ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে। তাদেরকে ২০২০ সালে ইন্টেলের সাথে উইটসা পুরষ্কার প্রাপ্ত ডিজিটাল কনটেন্ট দিয়ে পাঠদান করা হবে। ডিভাইস ও ইন্টারনেট থাকলে শিশুরা বাড়িতে বসে বা অনলাইনে ক্লাশ করতে পারবে।
বেসরকারিভাবে ২০০০ ও ২০১৫ সালে শিক্ষাব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশন চালু হলেও সরকারিভাবে এই প্রথম কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাঠ্য বিষয়ের সব কিছু ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে ডিজিটাইজেশন করা হচ্ছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে গেছেন।
তিনি বলেন, শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা আনন্দময় করে ডিজিটাল শিশু শিক্ষা পাঠ্যক্রম আবশ্যক। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের কোনো বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব-গোলাম মো. হাসিবুল আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এম মনসুরুল আলম এবং টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মহসীনুল আলম বক্তৃতা করেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী শিশু বয়সকে সৃজনশীলতা ও মেধা অর্জনের সঠিক সময় উল্লেখ করে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বইয়ের পরিবর্তে একদিন ট্যাব বা ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছে যাবে এবং সেদিন খুবই কাছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে শতকরা ৮৮ ভাগ শিশুর হাতে ট্যাব আছে। তাদের বইয়ের দিকে তাকাতে হয় না।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনে সামান্য ফল দেবে কিন্তু প্রাথমিকের ডিজিটাল রূপান্তরে শতভাগ ফল পাওয়া সম্ভব।
মন্ত্রী ডিজিটাল শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষার মূলস্রোতধারায় সংযুক্ত করতে ২০১৫ সাল থেকে তার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে আইসিটি বিভাগ থেকে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও নানা প্রতিকুলতায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। দুর্গম অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত অসহায় শিশুদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধ তহবিলের মাধ্যমে গৃহীত উদ্যোগ শিক্ষার রূপান্তরের একটি ঐতিহাসিক মাইল ফলক বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল শিক্ষা প্রবর্তনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে অচল জীবনধারা সচল রাখার পাশাপাশি ঘরে বসে শিশুরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বড় দৃষ্টান্ত। ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারে আমরা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই।
সিলেট৭১নিউজ/সময়/আবিদ