সিলেট আখাউড়া রেল সেকশনের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও রেলস্টেশনের অদূরে তেলবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে সিলেটের সঙ্গে ঢাকাসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনটি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ডিজেল ও কেরোসিন নিয়ে সিলেট আসছিলো। এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিটিও মাইনুল ইসলামকে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে সারাদেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী তেলবাহী ৯৫১ ট্রেনটি গতকাল শনিবার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও স্টেশন অতিক্রম করে সিলেট যাওয়ার পথে ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। এ সময় কন্টেইনার থেকে বিপুল পরিমান তেল ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে ওই তেল সংগ্রহ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
সরেজমিনে সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের আশপাশের এলাকার মানুষদের মধ্যে রীতিমত উৎসবের আমেজ। যার যা বাসনপত্র আছে তাই নিয়ে আসছেন তেল সংগ্রহে। ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি করে হাড়ি-বালতি ভর্তি করে তেল নিয়ে যাচ্ছেন। সাতগাঁও এলাকাসহ আশেপাশের খারিউজ্জামা, লামাপাড়া, লাহারপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন বালতি, বোতল, জগ, গ্লাসে করে তেল সংগ্রহ করার জন্য আসেন।
জসিম মিয়া (৪০) নামে একজন জানান, সকালে দুর্ঘটনার পর থেকে আমরা পুরো পরিবার মিলে প্রায় ১০০ লিটার তেল সংগ্রহ করেছি।
এদিকে, তেল সংগ্রহে শতশত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ায় দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি উদ্ধার কাজেও বিঘ্ন ঘটেছে। তেল নিতে আসা জনগণের জন্য উদ্ধার প্রক্রিয়া কাজ ধীরগতিতে চলছে। দুর্ঘটনাকবলিত চারটি ওয়াগনে প্রায় দেড় লাখ লিটার তেল থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন মেঘনা পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেডের ডিভিশনাল ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, তেলগুলো আমাদের ছিলো। ঠিক কি পরিমান তেল এখানে ছিলো সেটি আমি নিশ্চিত নই তবে, আনুমানিক দেড় লাখ লিটার তেল আছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা হবে। এদিকে, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি উদ্ধারের জন্য দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন কাজ শুরু করেছে।
রেলওয়ে কুলাউড়া অঞ্চলের সহকারি প্রকৌশলী দুলাল চন্দ্র দাশ জানান, কুলাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেলা সোয়া ২টা থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করলেও পরে মূল উদ্ধারকারী ট্রেন আখাউড়া থেকে এসে কাজ শুরু করে। এ দুর্ঘটনায় রেল, স্লিপার, কালভার্টসহ বেশ ক্ষতি হয়েছে। রেল লাইন সচল করতে রাত ১০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত লাগতে পারে।
শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার শাখওয়াত হোসেন জানান, এ দুর্ঘটনায় আন্ত:নগর ট্রেন জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গলে ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস শায়েস্তাগঞ্জে আটকা পড়েছে।
সাতগাঁও রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. আব্দুর রহিম জানান, দুর্ঘটনায় ৪টি তেলবাহী বগি, ১টি গার্ড ব্যারাক ও একটি ব্যাংকিং ইঞ্জিন লাইচ্যুতি ঘটে। এর পর থেকে খবর পেয়ে ছুটে এসে স্থানীয় এলাকার লোকজন যে ভাবে পেরেছে, সেভাবে তেল লুট করে নিয়ে গেছে। দুর্ঘটনার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছি। জিআরপি পুলিশ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
তিনি আরো জানান, ঢাকাগামী জয়ন্তিকা ট্রেন কুলাউড়ায় ও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাাহাড়িকা এক্সপ্রেস শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে আটকা পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান জানান, এ দুর্ঘটনার কারণে পারাবতের পৌনে ৪টার সিডিউল, উদয়নের রাত ৯টা ৪০ মিনিটের সিডিউল ও রাত সাড়ে ১১টার উপবন এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।