অনলাইন ডেস্ক : বেসরকারি হাসপাতালের নানা অনিয়ম বন্ধে অভিযান পরিচালনা নিয়ে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়েছে। এ অভিযান নিয়ে মন্ত্রী ও সচিবের বক্তব্যে মতভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানোর আগে মন্ত্রণালয়কে জানানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু সচিব চান অভিযান জোরদার হোক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রী ও সচিবের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে খারাপ হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে চলমান অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। বিভিন্ন মহল থেকে এসব অভিযানের প্রশংসাও করা হয়। কিন্তু মন্ত্রী, সচিব এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় কিছু অভিযান প্রশ্নের মুখে পড়েছে। গত ১০ আগস্ট একটি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করার পর এর দায়দায়িত্ব মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ নেয়নি।
সম্প্রতি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা নিয়ে মন্ত্রী ও সচিবের বক্তব্যের মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ করা গেছে। স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে অভিযান শব্দের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাককে বলেছেন, ‘অভিযান সাধারণত সন্ত্রাসী পাকড়াও করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে আমরা তদন্ত করতে পারি। মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বিষয়ে বলেন, হাসপাতালের অনিয়ম বন্ধে অভিযান এক দিনের জন্যও, এমনকি এক মিনিটের জন্যও বন্ধ হবে না। এ লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি দেয়। এতে হাসপাতালগুলোতে অভিযান পরিচালনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়। তবে অভিযান অনিবার্য হলে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর অনুরোধ করা হয়।
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম উদ্ঘাটনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো জায়গায় এককভাবে অভিযান পরিচালনা করবে না। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়ম উদ্ঘাটনে গঠিত টাস্কফোর্স তাদের প্রথম সভা করেছে। এতেও সিদ্ধান্ত হয় যে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযানের সময় স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিয়া জানান, টাস্কফোর্সের সদস্যরা যে কোনো সময় যে কোনো হাসপাতাল পরিদর্শনে যেতে পারবেন। এছাড়া যেসব হাসপাতাল বা ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই, সেগুলোর নবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালগুলোকে তাদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নবায়ন না করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তবে টাস্কফোর্সের সভায় উপরোক্ত সিদ্ধান্ত হলেও কিছু বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনাকে ঘিরে নানা পশ্নের জন্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ কার্যক্রম মনিটর করার জন্য সরকার ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।