সিলেট:: করোনা ভাইরাসজনিত কারণে সরকারি-বেসরকারি সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ডেকোরেটার্স সমুহে সরকারি অনুদান অথবা সহজ শর্তে এবং বিনাসুদে ঋণ প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল (১৬ জুন) মঙ্গলবার সকালে ‘দক্ষিণ সুরমা ডেকোরেটার্স ও সাউন্ড সিস্টেম মালিক সমিতি, সিলেট’র পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে দেয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুরূপ পৃথক একটি স্মারকলিপি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বরাবরেও হস্তান্তর করা হয়েছে। স্মারকলিপির অনুলিপি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত সিটি কর্পোরেশনের ৩টি ওয়ার্ডের ৪ জন কমিশনার বরাবরেও পাঠানো হয়েছে। পেশকৃত স্মারকলিপিতে ৫ দফা সমস্যা এবং এর প্রতিকারে সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, মহামারি করোনা ভাইরাসজনিত কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিয়ে-শাদীসহ সকল প্রকারের সামাজিক অনুষ্ঠান এবং প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সরকারি অনুষ্ঠানসমুহও দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস যাবত বন্ধ রয়েছে। ফলে সত্যিকার অর্থে ডেকোরেটার্স ও সাউন্ড সিস্টেম প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় মারাত্মক মন্দা দেখা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির আওতাভ‚ক্ত প্রতিষ্ঠানসমুহের কর্মহীন মালিক-শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। একটানা দীর্ঘ সময় বন্ধ দোকান ও গোদামে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাঁশ-কাঠ, কাপড়-চোপড়সহ যাবতীয় কাঁচামাল। অকর্মণ্য হয়ে পড়ছে ইলেক্ট্রনিক্স সরঞ্জাম। ক্রোকারিজ সামগ্রিরও কিছু অংশ ব্যবহারের অনুপযোগী হতে চলেছে। মালামাল রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার প্রয়োজনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নাইট গার্ড বা চৌকিদারসহ জরুরি প্রয়োজনে বাধ্যতামুলক ২/৩ জন কর্মচারিকে নিয়োজিত রাখতে হচ্ছে। এসব কর্মচারিরও বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। তদুপরী দোকান ও গোদাম ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ ইত্যাদি কারণে অর্থ সংকটে পড়ে ডেকোরেটার্স মালিকরা ক্রমশঃ পুঁজি হারাতে বসেছেন।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, আমাদের সমিতিভ‚ক্ত প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের মালিক-শ্রমিকের সংখ্যা ৪ শতাধিক হবে। এদের সবাই এখন বেকার। অনেক ডেকোরেটার্স বিভিন্ন ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ থাকায় ঋণদাতা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়েও সরকারি নির্দেশনা জরুরী হয়ে পড়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমাদের সমিতিভূক্ত অনেক ডেকোরেটার্স সাধারণ ছুটি ঘোষণার পূর্ববর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অনেক সংস্থার অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রাপ্য বিল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এসব অনুষ্ঠান প্রস্তুতিতে যেসব ডেকোরেটার্স শ্রমিক কাজ করেছেন, তাদের পাওনা মিটিয়ে দিতে হয়েছে। এ অবস্থায় ডেকোরেটার্স মালিকরা মারাত্মক অর্থ কষ্টে রয়েছেন। এছাড়া, বিগত সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দুঃস্থ-দরিদ্রদের সাহায্য-সহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ডেকোরেটার্স শ্রমিকরা সরকারি বা বেসরকারি কোন মাধ্যম থেকেই কোন সহযোগিতা বা অনুদান পাননি। পরিস্থিতির আলোকে দূর্গত ডেকোরেটার্স মালিক-শ্রমিকদের দূর্ভোগ লাঘবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মোটামুটি সাধারণভাবে খাওয়া-পরার উপযোগী একটি মাসিক অনুদান প্রদানের দাবি জানানো হয়। যদি কোন অনুদান বা আর্থিক সহযোগিতা দেয়া সম্ভব না হয়, তবে প্রত্যেকটি ডেকোরেটার্স যাতে টিকে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে সরকারি মাধ্যম থেকে বিনাসুদে এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের দাবি জানানো হয়। তা হলেই কেবল ডেকোরেটার্স শিল্পটি বিলুপ্ত না হয়ে মোটামুটি টিকে থাকতে পারবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
‘দক্ষিণ সুরমা ডেকোরেটার্স ও সাউন্ড সিস্টেম মালিক সমিতি, সিলেট’র সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রকিব আহমদের নেতৃত্বে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্মারকলিপি হস্তান্তরকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সিনিয়র সদস্য সিয়াম আহমদ খোকন, মোঃ টিপু সুলতান, মোঃ রাসেল আহমদ, দেলওয়ার হোসেন, আবুল হোসেন খান, সাইফুল ইসলাম, শাহীন আহমদ (১) মোঃ লিপু সুলতান, শাহীন আহমদ (২), শায়েক আহমদ, আমিনুর রহমান চৌধুরী শিফতা, জাবেদ আহমদ, মতিউর রহমান (মতিক), আতাউর রহমান, মতিউর রহমান সিতাব, তাজউদ্দিন আহমদ এপলু বক্স, লিলু মিয়া, শায়েস্তা মিয়া, সেবুল মিয়া, সানোয়ার হোসেন খান অনিক প্রমুখ।-বিজ্ঞপ্তি