সিলেট বিভাগের ৭ পৌরসভার ভোট উৎসব আজ শনিবার সকাল থেকে হয়েছে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি, স্বতন্ত্রসহ ২৫ মেয়র প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ২৬৩ জন ও সংরক্ষিত আসনে লড়ছেন ৭৯ জন নারী। ৭ পৌরসভার মোট ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ২১৮ জন। রয়েছেন ১ হাজার ৫২৫ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা। আজ ৯১ ভোট কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে। জগন্নাথপুর পৌরসভায় প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম এ ভোট দেবেন ভোটাররা। বাকী ৬ পৌরসভায় ব্যালট পেপারেই ভোট নেয়া হবে। এজন্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। মোতায়েন রয়েছেন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য। রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্নের জন্যে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বর্তমান মেয়র নাদের বখত নৌকা প্রতীকে ও বিএনপির প্রার্থী মুর্শেদ আলম ধানের শীষ প্রতীকে ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ হাতপাখা প্রতীকে ভোটের লড়াই করছেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভায় কাউন্সিলর পদে ৪৯ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৩ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার ৪৬ হাজার ৯৭৯ জন। পুরুষ ২৩ হাজার ২২০ ও ২৩ হাজার ৭৫৯ জন হলেন মহিলা ভোটার। মোট ভোট কেন্দ্র ২৩টি ও ভোট কক্ষ ১২৬টি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গনিউল সালাদীনকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আইয়ুব বখত জগলু জয়ী হন। ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জগলু আকস্মিকভাবে মারা যান। এরপর ২৯ মার্চ উপ-নির্বাচনেও সালাদীনকে হারিয়ে জগলুর সহোদর ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাদের বখত জয়ী হন।
শিল্পনগরী ছাতক পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোঃ আবুল কালাম চৌধুরী নৌকা মার্কা ও বিএনপির প্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সি ধানের শীষ মার্কায় লড়ছেন। ছাতক পৌরসভায় কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার ৩০ হাজার ২৭৮ জন। পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ২৭২ জন ও ১৫ হাজার ৬ জন হলেন মহিলা ভোটার। ভোট কেন্দ্র ১৯টি ও ভোট কক্ষ ৭৭ টি। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল ওয়াহিদ মজনুকে হারিয়ে আবুল কালাম চৌধুরী বিজয়ী হন।
প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর পৌরসভায় মেয়র পদে ৫ প্রার্থী লড়াই করছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান ভূইয়া (নৌকা), সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তার হোসেন (চামচ), বিএনপি প্রার্থী হারুনুজ্জামান (ধানের শীষ), আমজাদ আলী শফিক (মোবাইল ফোন) ও বিষ্ণু রায় বিশ্ব (জগ)। কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে লড়ছেন ৯ নারী প্রার্থী। মোট ভোটার ২৮ হাজার ৬০১ জন। পুরুষ ভোটার ১৪ হাজার ৩৬৪ জন ও ১৪ হাজার ২৩৭ জন হলেন মহিলা ভোটার। ভোট কেন্দ্র ১২ টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৫ টি। প্রথমবারের মতো এবার জগন্নাথপুর পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী রাজু আহমেদকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল মনাফ বিজয়ী হন। গত বছরের ১১ জানুয়ারি মেয়র মনাফ লন্ডনে মারা যান। এরপর ২৯ মার্চ উপ-নির্বাচনে ভোটের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু করোনার কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। গত ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিজানুর রহমান ভূইয়া জয়ী হন।
কমলগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র জুয়েল আহমদ (নৌকা), বিএনপি প্রার্থী আবুল হোসেন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (নারিকেল গাছ) ও হেলাল মিয়া (জগ)। কাউন্সিলর পদে ৩১ প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনে ১১ নারী লড়ছেন। কমলগঞ্জ পৌরসভার মোট ভোটার ১৩ হাজার ৯০৫ জন। পুরুষ ৬ হাজার ৮৮৭ জন ও ৭ হাজার ১৮ জন হলেন মহিলা ভোটার। ৯ ভোট কেন্দ্রে মোট কক্ষ সংখ্যা ৪২ টি। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জাকারিয়া হাবিব বিপ্লবকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জুয়েল আহমদ বিজয়ী হন।
কুলাউড়া পৌরসভায় মেয়র পদে ৪ প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ প্রাথী শিপার উদ্দিন আহমদ (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী কামাল উদ্দিন আহমদ (ধানের শীষ), বর্তমান মেয়র শফি আলম ইউনুস (নারিকেল গাছ) ও শাজান মিয়া (জগ)। কাউন্সিলর পদে ৩৩ প্রার্থী ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬ নারী প্রার্থী। মোট ভোটার ২০ হাজার ৭৬৯ জন। পুরুষ ১০ হাজার ২২৮ জন ও ১০ হাজার ৫৩১ জন হলেন মহিলা ভোটার। মোট ভোট কেন্দ্র ৯টি ও ভোট কক্ষ ৬১ টি। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কামাল আহমদ জুনেদকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শফি আলম ইউনুস জয়ী হন।
প্রবাসী অধ্যুষিত নবীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে ৩ প্রার্থী লড়ছেন। তারা হলেন- বিএনপির প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী (নৌকা), শ্রমিক নেতা মাহবুবুল আলম (জগ)। কাউন্সিলর পদে ৪১ প্রার্থী ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে লড়ছেন ৯ প্রার্থী। মোট ভোটার ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ১৩৯ জন ও ৯ হাজার ৫৬০ জন হলেন মহিলা ভোটার। ভোট কেন্দ্র ১০টি ও ভোট কক্ষ ৪৮টি। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরীকে পরাজিত করে বিএনপির প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী বিজয়ী হন।
মাধবপুর পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ প্রার্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্ত (নৌকা), বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান মিলন (ধানের শীষ), সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোঃ মুসলিম আলী (জগ), বর্তমান মেয়র হীরেন্দ্র সাহার সহোদর ব্যবসায়ী পংকজ কুমার সাহা (নারিকেল গাছ)। কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৭ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ৭ জন। মোট ভোটার ১৫ হাজার ৯৮৭ জন। পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১০৭ জন ও মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৮৮০ জন। ভোট কেন্দ্র ৯টি ও ভোট কক্ষ মোট ৪৯টি। গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিককে হারিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হীরেন্দ্র লাল সাহা বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর বুধবার দেশের অন্যান্য পৌরসভার সাথে একই দিনে এই ৭ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল।
জানা গেছে, ৭ পৌরসভায় ৯১ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৪৭৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৯৫৬ জন পোলিং অফিসার ভোট গ্রহণ করবেন। নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করব। এজন্যে ভোটার ও প্রার্থীদের সহযোগিতাও প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ, ছাতক ও জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও সুনামগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার একই তথ্য জানিয়ে বলেন, জগন্নাথপুরে ইভিএম সচেতনতার জন্যে ডামি ভোটিং করা হয়েছে। ভোটাররা ইভিএম সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
নবীগঞ্জ ও মাধবপুর পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দেবেন। শান্তিপূর্ণভাবে নিরপেক্ষভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে।