নিজস্ব প্রতিবেদক:: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুল্যায়নের যাত্রা শুরু করেছেন। গত ১যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগের সকল পর্যায়ের কমিটিতে নবাগতদের আগমন ও ত্যাগীদের দুরে ঠেলে দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিলেন দলীয় প্রধান। তিনি একাধিকবার ত্যাগীদের মুল্যায়নে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। মূল্যায়নের এই যাত্রা সিলেট থেকে শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশ^নাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের গত ৪যুগ ধরে দলকে টিকিয়ে রাখার মরণপন যুদ্ধে লড়েছিলেন উপজেলা পর্যায়ের একজন নেতা। কিন্তু এতো অত্যাচার নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও বিগত কমিটিতে তাঁর নাম রাখা হয়নি। ফলে একেবারে নিরবে তিনি সংগঠন থেকে দুরে সরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিধিবাম। সেই ত্যাগী নেতা এখন সিলেট জেলা কমিটিতে মূল্যায়িত হয়েছেন।
নির্যাতিত এই নেতার নাম আবু হেনা মো: ফিরোজ আলী (এএইচএম ফিরোজ আলী)। তিনি রাজনীতিতে অনেক কিছু হারালেও প্রাপ্তির কোন আশা ছিলনা। রাজনীতির কারনে তিনি শুধু ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগস্থ হননি, ক্ষতিগস্থ হয়েছিল তার পুরো পরিবার। তাতেও তাকে দলের আদর্শ থেকে চুল পরিমান নড়াতে পারেননি। তাকে হত্যার জন্য একাধিকবার আক্রমন করেছিল জামাত বিএনপি জোট। কিন্তু দলকে সুসংগঠিত করতে বলতে গেলে একাই লড়েছেন বিগত ৩০ বছর। ১৯৯৬ সালের ৬ই ফেব্রæয়ারী বিএনপির বিতর্কিত নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলের সময় ৬টি দাঁত, বুকের হাড় ও পায়ের ২টি আঙ্গুল ভেঙ্গে দেয়া হয়।
আহত ফিরোজ আলীকে হাসপাতালে নেয়ারও কোন লোক এগিয়ে আসেনি। এবছর ৭ মার্চ বিশ^নাথের মিছিলের গুলি করে ৩০জনকে আহত করে বিএনপি। যখন আওয়ামীলীগের অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া তখন ফিরোজ আলী দলীয় আহত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার উপরও সে সময় হামলা করে একটি চোখ নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কোন লোভ লালসা হুমকি ধামকি তাকে বিরত রাখতে পারেনি। মোট কথা তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে একটুও বিচ্যুত হননি।
একযুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও তিনি কোন সুযোগ সুবিধা নেননি। বরং দল ক্ষমতায় থাকাবস্থায় তাকে হয়রানি করা হয়েছে।
১৯৭৩ সালে এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান এমপির নির্বাচনে কিশোর ফিরোজ আলী গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে প্রচারনায় গুরে ছিলেন।
এনামুল হক বীর প্রতীক, শাহ আজিজুর রহমান, লুৎফুর রহমান এবং শফিকুর রহমান চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারনায় তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ভিক্ষা চেয়ে আওয়ামীলীগের একজন খ্যাতিমান কর্মীর খাতায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। স্থানীয় নির্বাচন সহ সকল নির্বাচনে তিনি খেয়ে না খেয়ে দলের জন্য কাজ করেছেন। ১৯৭৮ সালে স্কুলের ছাত্র থাকাবস্থায় মরহুম বজলুর রশীদ ও আফসর মিয়া তাকে ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য করেছিলেন। মদন মোহন কলেজে ছাত্রাবস্থায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে কয়েকজন ছাত্র নেতার মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। সে সময় পুলিশের হাতে তিনি ২বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তার পর তিনি বিশ^নাথ উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সব শেষে নির্বাচিত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
২০১৫ সালের সম্মেলনের পর গঠিত উপজেলা কমিটিতে সদস্য পদেও তাকে রাখা হয়নি। ফলে তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। ১৯৯৪ থেকে ৯৬ সালে অসহযোগ আন্দোলনে একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০০১ থেকে ০৯ পর্যন্ত বিএনপির সাবেক সাংসদ তার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে চরমভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। থানা পুলিশ একাধিকবার তাকে দেশ ত্যাগী হওয়ার জোর চালিয়েছিলেন। ২০০৪ সালে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে স্বাক্ষাত করে বিশ^নাথ রাজনীতির বিশদ বর্ণনা দিয়েছিলেন। এতে দলীয় কিছু লোকেরও চক্ষুশূল হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তাকে কাছে বসিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে মূল্যায়নেরও আশ^াস দিয়েছিলেন। হয়তোবা শেখ হাসিনা তাকে জেলা কমিটিতে অর্šÍভুক্ত করে তার প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেছেন।
এ ব্যাপারে ফিরোজ আলীর অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামীলীগের একজন কর্মী হওয়ায় গর্ববোধ করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গির করিব নানক এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সিলেট-২ আসনের মানুষের ভরসাস্থল আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন খান সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।