নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের মোল্লারগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছমির আহমদ। একজন সফল বীজ চাষী হিসাবে এলাকায় ছমির আহমদের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। মৃত রেদওয়ান আলী’র পুত্র ছমির আহমদ দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১নং মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি আহমদ বীজ এজেন্সী নামে বীজ উৎপাদন ও সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে থাকেন। গ্রামের অনেক কৃষক তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করেন। তিনি বছরে যে পরিমাণ বীজ ও সবজি উৎপাদন করেন সেগুলো বিক্রির টাকায় সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনকে ও পাড়া প্রতিবেশীদের সবজি ও সার দিয়ে সহযোগিতা করেন। বীজ সংরক্ষণের জন্য তিনি ভালো এবং পুষ্ট ফল আলাদা করে বীজগুলো সংগ্রহ করে রৌদ্রে শুকানোর পর সংরক্ষণ করেন। পরবর্তী মৌসুমে যখন রোপণের সময় হয় তখন আরেকবার রৌদ্র দিয়ে ক্ষেতে রোপণ করেন। বছরের পর বছর ধরে তিনি নিজের সংরক্ষিত বীজ দিয়ে ধানসহ সবজি চাষ করে আসছেন। তিনি সবাইকে সামর্থ অনুযায়ী বুদ্ধি ও পরামর্শ দেন এবং সবজি ও ধানের বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেন।
কৃষক ছমির আহমদ এবছর ৮ একক জমিতে ব্রি-৫২, ব্রি-৪৯, ব্রি-৩৪, ব্রি-৩২, ব্রি-২২, ব্রি-৯৩, ব্রি-৮৭, ব্রি-৮০, ব্রি-৭৯ এবং ব্রি-৭১ জাতের ধানের চাষ করেছেন। বর্তমানে তার এসব জমিতে সোনালী ফসলে মাঠ ভরে আছে। দেখলে সকলেরই প্রাণ জোড়ায়। শুধু তাই নয়, ধানের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জাতের সবজি বিশেষ করে টমেটো, ব্রæকলি, সিমসহ নানা জাতের শীতের সবজি চাষ করেছেন। তিনি অল্প জমিতে রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত উপায়ে বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ করে যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি নিজের প্রয়োজনীয় ফসলের বীজ সংরক্ষণ করে বাজার উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের মাঠে গেলে দূর থেকে নজরে পড়ে কৃষক ছমির আহমদের ধানের ক্ষেত। পুরো মাঠ জুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। ধান ক্ষেতের পাশে দাঁড়ালে বুক জুড়িয়ে যাবে সকলের। এযেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। ছমির আহমদের চাষকৃত জমিতে তৈরি হয়েছে যেন সোনালী ফসলের চিরায়ত দৃশ্য, যা শুধু মোল্লারগাঁও এলাকা নয়, পুরো উপজেলার জন্য এক অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত।
কৃষক ছমির আহমদ বলেন, গত বারের চেয়ে এবার ধান ভাল হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। তিনি বলেন, ক্ষেতে রোগ-বালাই ও পোকা আক্রমণ কিছুটা কম। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবো। কৃষকদের আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তিনি জানান, প্রতিবছর বারি গাজীপুর থেকে বিভিন্ন জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করে নিজের জমিতে চাষ করেন। তার চাষকৃত জমি ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রনালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তাবৃন্দ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে সিলেটের প্রত্যয়ন অফিসার এর নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ তাকে কৃষি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে। তার উৎপাদিত ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করে কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে সিলেটের বিভিন্ন্ উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্রেশ তালুকদার বলেন, বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষক অনেকটা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি। ছমির আহমদের মতো সকল কৃষকদের উচিৎ বীজসহ সকল কৃষি উপকরণের জন্য বাজারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করা। আর এটি করা সম্ভব হলে শস্য বীজ ও সকল কৃষি উপকরণে কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে।