সিলেটে গ্রিল ছাড়া সিএনজি অটোরিক্সা চলাচলে গতকাল মঙ্গলবার শেষ দিন হলেও আপাতত অ্যাকশনে যাচ্ছে না পুলিশ। সিএনজি, অটোরিক্সা সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রিল ছাড়া সিএনজি অটোরিক্সা চলাচলের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ সিলেটের ডাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, জানুয়ারির প্রথমদিন থেকে শুরু হবে গ্রিল ছাড়া সিএনজি অটোরিক্সার বিরুদ্ধে অভিযান। তখন রাস্তায় সিএনজি অটোরিক্সায় গ্রিল লাগানো পাওয়া না গেলে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী মামলা দায়ের করবে পুলিশ। এ কাজে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিমকে মাঠে নামানো হবে। গত ৬ নভেম্বর থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সিএনজি অটোরিক্সায় গ্রিল লাগানোর জন্য মাইকিং করে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। গতকাল মঙ্গলবারও নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। ট্রাফিক বিভাগের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চালক, মালিক ও যাত্রীসহ সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এদিকে, নগরীতে চলাচলরত সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিএনজি অটোরিক্সায় গ্রিল লাগানোর বিষয়টিকে তারা মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। সিলেট মহানগরীতে হুট করে তা বাস্তবায়িত হলে যাত্রী, অটোরিক্সা চালক ও মালিক পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তারা মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সিএনজি অটোরিক্সা চালক বলেন, ওয়ান ইলিভেনের সময় চাপের মুখে সিএনজি অটোরিক্সায় মিটার লাগাতে বাধ্য হই। পরবর্তীতে সিলেটে এ সিস্টেম ভেস্তে গেলে সিএনজি অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ।
সিলেট জেলা অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি শাহ মো. দিলোয়ার জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে তারা গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় সিলেট জেলা সিএনজি, অটোরিক্সা, অটোটেম্পু, টেক্সী, টেক্সীকার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় গ্রিল নিয়ে মামলা না দেয়াসহ ৬ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনার মালিক সমিতির ৬ দফা দাবির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদের ডাকা প্রতিবাদী র্যালী স্থগিত করেন বলেও জানান তিনি। স্মারকলিপি প্রদানকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা সিএনজি, অটোরিক্সা, অটোটেম্পু, টেক্সী, টেক্সীকার মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি জামিল আহমদ লিটন, সহ-সভাপতি ইকবাল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমদ, অর্থ সম্পাদক হানিফ মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির আহমদ, আলমগীর আলম, ওলিউর রহমান বাবুল, ইয়াহহিয়া, বেলাল আহমদ, আনছার আলীসহ বিভিন্ন উপ-কমিটির মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি শাহ মো. দিলোয়ার আরো জানান, তড়িঘড়ি করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সিলেট জেলার ২২ হাজার ২শ সিএনজি অটোরিক্সা চালক ও মালিক ক্ষতির সম্মুিখন হবেন। তাদের ৬ দফা দাবি সম্পর্কে জানান, নম্বরবিহীন সিএনজি স্থায়ীভাবে চলাচল বন্ধ করা, ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও ইজি বাইক চলাচল বন্ধ করা, নিয়মবহির্ভূত অত্যাধিক যাত্রী বহনকারী গাড়ী চলাচল করতে না দেয়া, মেট্রোপলিটন এলাকার রোড সমূহ হাইওয়ে মুক্ত করা, সিএনজি অটোরিকশায় গ্রিল সম্পর্কে মামলা না দেয়া।
এদিকে, সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় গ্রিল লাগানো সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং-চট্ট-৭০৭) এর কার্যকরি কমিটির নেতৃবৃন্দের এক জরুরী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ সুরমারস্থ বাবনার প্রধান কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা প্রতি সেক্টরে নির্যাতিত। নতুন করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক গ্রিল লাগানোর নামে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা সিএনজি চালকদের উপর ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের যেখানে আজ পৃথিবী থমকে আছে, সেখানে খেটে খাওয়া পরিবহন শ্রমিকরা জীবনমান রক্ষায় হিমসিম খাচ্ছে। এরকম সংকটকালীন পরিস্থিতিতে পরিবহন শ্রমিকদেরকে নিয়ে কেউ টালবাহানা শুরু করলে তা কখনো মেনে নেওয়া যাবে না।
সিলেট জেলা সি.এন.জি চালিত অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন-এর সভাপতি জাকারিয়া আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আজাদ মিয়ার পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, সহ-সভাপতি মো. সুন্দর আলী খাঁন, মো. আবুল হোসেন খাঁন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন, মো. জিলু মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক, মো. ইকবাল আহমদ, দপ্তর সম্পাদক মো. কাওছার আহমদ, অর্থ সম্পাদক মো. মামুনুর রশিদ মামুন, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, কল্যাণ সম্পাদক মো. আব্দুল মন্নান, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মো. আব্দুল মতিন, সদস্য মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মো. মানিক মিয়া, মো. এবাদুল খাঁন, মো. লিটন আহমদ, মো. সুজন মিয়া, এম. বরকত আলী, মোঃ রাজা, আহমদ রাজা, মো. মুহিবুর রহমান এপল, মো. এমাদ উদ্দিন প্রমুখ।