সিলেটে আলুর বাজারে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। সরকারিভাবে ৩০ টাকা দরে আলু বিক্রির নির্দেশনা জারি করা হলেও বর্তমানে পাইকারিতে ৩৭ টাকা ও খুচরায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের বিক্রেতারা সরকারের (কৃষি বিপণন অধিদফতর) নির্ধারিত দাম মানছেন না। তারা নানা অজুহাতে খুচরায় এখনও ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাজারে আলু বিক্রি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অবশ্য, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানিয়েছে, আলুর বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
আর বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কাছে মজুদ করা আলু আগের দামে কেনা। ফলে সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করলে তাদের লোকসানে পড়তে হবে। তবে কম দামের আলু বাজারে এলে তখন তারা কম দামেই আলু বিক্রি করবে। গতকাল শনিবার নগরীর কালিঘাট, ব্রহ্মময়ীবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র প্রত্যক্ষ করা গেছে।
পাইকারী বাজারে দেখা যায়, কালিঘাটে রাজশাহী ও মুন্সীগঞ্জী আলু বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৩৯ টাকা ও ৩৭ টাকা কেজি দরে। নগরীর বন্দর বাজারের বিভিন্ন মুদি দোকানে আলু বিক্রি হচ্ছে-৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। লাল দিঘিরপাড়ে ভ্যান গাড়িতে করে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। আর ব্রহ্মময়ী বাজারে প্রতি ৫ কেজি ২০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে কেজি প্রতি দর পড়ে ৪০ টাকা। ১ থেকে ৪ কেজি নিলে প্রতি কেজি ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিবগঞ্জ বাজারসহ নগরীর পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন মুদি দোকানে ৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে আলু।
ব্রহ্মময়ী বাজারে আলু কিনতে আসা নিমকি চানাচুর বিক্রেতা সুসেন কুড়ি জানান, ‘সরকার দর ঠিক করি দিছে, তবুও দর কমে না। ইলা অইলে চলমু কিলা।’ তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়েছেন। অনেক ক্রেতা অভিযোগের সুরে বলেন, দাম নির্ধারণ করে মনিটরিং না হলে এমটি হবেই। এখন পর্যন্ত নগরীতে মনিটরিংয়ের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
কালিঘাট বাজারের আড়তদার মো. শরীফ হোসেন জানান, আমরা কমিশনে মালামাল বিক্রি করি। দর দেন বেপারীরা। তিনি সরকারের নির্ধারিত দাম না মানার বিষয়ে জানান, বেপারীদের প্রতিকেজি আলু সিলেট পর্যন্ত আসতে খরচ পড়ে ৩৫ টাকা। তাহলে কীভাবে ৩০ টাকায় আলু বিক্রি করবো? তিনি আরো জানান, সরকার নির্ধারিত দরের মাল সিলেট পৌঁছালে আমরাও সে দরে বিক্রি করবো।
সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক ক্রেতাই জানান, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়েছেন। নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন ক্রেতারা। উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর প্রতিকেজি আলুর দাম হিমাগারে ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজিদরে বিক্রি নিশ্চিত করতে সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
একই সঙ্গে উল্লেখিত দামে কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিন পক্ষই যাতে আলু বিক্রি করেন সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে ডিসিদের কাছে পাঠানো হয়েছে চিঠি।
চিঠিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় ১ দশমিক নয় কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক নয় লাখ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায় যে, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু থেকে প্রায় ৩১ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রপ্তানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই।