এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় চাপের মুখে সিলেট আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের ভর্ৎসনার শিকার হয়েছেন সিলেটের নেতারা। তবে কঠিন এই অবস্থাকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করছেন সিলেটের নেতারা। তারাও অপরাধ, অপরাধীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, এমসির ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনার পরপরই ঢাকায় তলব করা হয় সিলেট আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল চার নেতাকে। এর মধ্যে তিন নেতা ঢাকায় যান। দলের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়ে দেন- সিলেটের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড।
এসব ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সিলেটকে নিয়ে বিকল্প চিন্তা করা হতে পারে। দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে সিলেটের নেতারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। দায় না এড়িয়েই তারা জানান- সিলেটে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। এমসি কলেজ, সরকারি কলেজেও কোনো কমিটি নেই। এসব বিতর্কিত ঘটনা এড়াতে এবং ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের লাগাম টেনে ধরতে কমিটিও দেয়া হচ্ছে না। এরপরও ছাত্রলীগে ব্যানারে এসব করা হচ্ছে। আগামীতে তারা মনিটরিং করার কথাও জানিয়েছেন। এদিকে- টিলাগড় কেন্দ্রিক রাজনীতির শাসক হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতা আজাদুর রহমান ও এডভোকেট রণজিৎত সরকার। এই দুই নেতা এখন রাজনীতির অগ্নিপরীক্ষায় রয়েছেন। এখন তাদের রাজনীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’। সম বয়সীদের কেউ জাতীয়, কেউ স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে রয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক ঘাট পাড়ি দেয়া বাকি তাদের। কিন্তু টিলাগড় কেন্দ্রিক রাজনীতি তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিলাগড়ে কিছু ঘটলেই দোষ পড়ে আজাদুর রহমান আজাদের উপর। আর গোপাল টিলা, এমসি কলেজ হোস্টেলে কিছু ঘটলেই দোষ পড়ে রনজিৎ সরকারের উপর। এই দোষের বিষয়টি অমূলক নয়। টিলাগড়ের রাজনৈতিক নেতারাই এমসির ছাত্রাবাসে গণধর্ষনের ঘটনায় দায়ী করেছেন রণজিৎ সরকারকে। তার গ্রুপের কর্মীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পর যখন আসামিরা পালিয়ে যায় তখন পুলিশ এক আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের সন্ধান পায়। সিলেট আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন- আজাদুর রহমান আজাদ ও রণজিৎ সরকারের নাম এবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক অতীত, দলের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিষয় বিবেচনা করে এটি করা হয়। তাদের দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি দায়িত্বশীল নেতারা কেন্দ্রের কাছে ব্যাখ্যাও করেছেন। তিনি জানান- টিলাগড় কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির গ্রুপিং নিয়ে সবাই ক্ষুব্ধ। যত অপকর্ম হচ্ছে সব কিছুর মূলে রয়েছে গ্রুপিং রাজনীতি। যে দুটি গ্রুপ রয়েছে সেখানে কর্মী সংখ্যা কয়েক হাজার। কর্মীদের দায়ভার নেতাদের উপর বর্তায়। সুতরাং টিলাগড় কেন্দ্রিক গ্রুপিং রাজনীতি বন্ধ হলেই লাগাম টেনে ধরা যাবে অপরাধের। বিষয়টি মাথায় রেখে আগামীতে কাজ করা হবে। কোনো বলয় কিংবা গ্রুপ থাকবে না। সবাই হবে শেখ হাসিনার সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে সবাইকে রাজনীতি করতে হবে। এদিকে- এমসি কলেজের ঘটনায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি এ ঘটনায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন বর্তমান দায়িত্বশীল নেতাদের প্রতি। এছাড়া টিলাগড় কেন্দ্রিক গডফাদারদের প্রতিও ক্ষুব্ধ তিনি। তিনি দোষিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। সিলেট আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এ নেতা জানিয়েছেন- রাজনীতিতে উত্থান-পতন থাকেই। কখনো কখনো দোষ না করেই দোষী হতে হয়। এসব সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা হয়েছে। সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আজাদ ও রণজিতের ভুমিকা কম নয়। সুতরাং তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি কেন্দ্রের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় নেতা যা মনে করবেন সেটিই দল ও নেতাদের জন্য ভালো হবে।
সুত্র: মানবজমিন