বিশ্বনাথ:: ওয়ার্ড বিভক্তিকরণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় আপাতত বিশ্বনাথ পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে না। তবুও নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ পৌরসবাসীর মাঝে আগ্রহের কোনো কমতি নেই। স্থানীয়রা বলছেন, কাক্সিক্ষত নাগরিক সেবা পেতে হলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিকল্প নেই। পৌর প্রশাসক বর্ণালী পাল জানিয়েছেন, বর্তমানে ওয়ার্ড বিভক্তিকরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চলছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার বলেছেন, সকল কার্যক্রম চূড়ান্তের পর মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে এ ব্যাপারে চিঠি দেয়া হবে। এর পরই পৌরসভাটির নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথকে গত বছরের ১৯ অক্টোবর পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পালকে পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ধারার (১) উপ-ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত আদেশে বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। এরপর থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, বর্তমানে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড বিভক্তিকরণের কাজ চলছে। দেশের ৩৩০তম পৌরসভা বিশ্বনাথের কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে আরো সময় লেগে যাবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২১ মে বিশ্বনাথ পৌরসভা গঠনের লক্ষে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বিশ্বনাথ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২২টি মৌজা নিয়ে গঠিত হয় বিশ্বনাথ পৌরসভা।
বিশ্বনাথ ইউনিয়নের আহমেদাবাদ মৌজা, পূর্ব জানাইয়া মৌজা, বিদাইলসুপানি মৌজা, কানাইপুর মৌজা, মজলিস ভোগশাইল মৌজা, চান্দসিরকাপন মৌজা, মিরেরচর মৌজা, মশুলা মৌজা, সোনারগাঁও মৌজা, ধোপাখোলা মৌজা এবং তাজপুর মৌজা, দেওকলস ইউনিয়নের আলাপুর মৌজা, ধোপাখোলা মৌজা ও দত্তা মৌজা, অলংকারী ইউনিয়নের পূর্ব জানাইয়া মৌজা, কামালপুর মৌজা, ভাগমতপুর মৌজা ও অলংকারী মৌজা, দৌলতপুর ইউনিয়নের দূর্যাকাপন মৌজা, চরচন্ডি মৌজা এবং রামপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম জানাইয়া মৌজা ও মশুললা মৌজা নিয়ে গত বছরের ১৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বনাথ পৌরসভা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১০ মাসেও ওয়ার্ড বিভক্তিকরণসহ কার্যক্রমের তেমন অগ্রগতি হয়নি। করোনাকালের আগেও সরেজমিন তেমন কাজ-কাম হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।
বিশ্বনাথ পরিবেশ ও নদীরক্ষা পরিষদের আহবায়ক মুসাদ্দিক হোসেন সাজুল বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া পৌরসভার পূর্ণতা আসবে না। ওয়ার্ড বিভক্তিকরণের কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।
বিশ্বনাথ পৌরসভার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন জালাল বলেন, শুনছি পৌরসভার ওয়ার্ড বিভক্তির কাজ চলছে। পৌরসভার নির্বাচনের দরকার। জনপ্রতিনিধি না আসলে পৌরসভার পূর্ণতা আসবে না। দ্রুত সকল কার্যক্রম সম্পন্নের প্রয়োজন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর এলাকার বাসিন্দা আলহাজ্ব পংকী খান বলেন, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর এখনো জনসাধারণ নিয়ে কোনো সভা-সমাবেশ হয়নি। সকল প্রক্রিয়া শেষ করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হলে কাক্সিক্ষত নাগরিক সেবা পাওয়া যাবে না।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রশাসক বর্ণালী পাল বলেন, বর্তমানে ওয়ার্ড বিভক্তিকরণের কার্যক্রম চলছে। পৌরসভার দাপ্তরিক কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার বলেন, নির্বাচনের আগে ওয়ার্ডগুলো ভাগ করে জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। তিনি গণবিভক্তি জারী করবেন। এরপর কারো আপত্তি থাকলে শুনানী হবে। পরে চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনের জন্যে পাঠাবে। এরপরে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।
বিশ্বনাথ পৌরসভার নির্বাচন আয়োজনের এখনো অনেক বাকি। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই নির্বাচন কমিশন ভোটের আয়োজন করবে।