সিলেটের করোনা হাসপাতালসমূহে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) বেডের অস্বাভাবিক চাপ বেড়েছে। এ কারণে সিলেটে বিদ্যমান তিনটি করোনা হাসপাতালকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব মিলিয়ে ৫০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে করোনার জন্য ডেডিকেটেড শহীদ ডা: শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রয়েছে ১৮টি বেড। এর বাইরে বেসরকারি নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি এবং মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে রয়েছে ১২টি বেড।
শহীদ ডা: শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ঈদুল আযহার পর থেকে এ হাসপাতালে আইসিইউতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রতিদিনই পূর্ণ থাকছে আইসিইউ বেডসমূহ। কেউ মারা গেলে আইসিইউ বেড খালি হয়। এর বাইরে এ ধরনের বেড খালি হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানায় ওই সূত্র। এ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গুরুতর রোগীকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না।
এছাড়া, এ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। আইসিইউ বিভাগে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসক সপ্তাহে ৭২ থেকে ৮০ ঘণ্টা রোস্টার ডিউটি পালন করেন। প্রয়োজনের তুলনায় সেখানকার আইসিইউতে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল বলে জানায় ওই সূত্র।
শহীদ ডা: শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল পরিচালিত হয় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে। এ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: হিমাংশু লাল রায় সিলেটের করোনা হাসপাতালসমূহে সাধারণ রোগীদের চাপ কমলেও জটিল রোগীদের চাপ বেড়েছে বলে স্বীকার করেন। ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৪টিতে ভেন্টিলেশনসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। সরকারি হাসপাতাল হবার কারণে এ হাসপাতালে আইসিইউতে রোগীদের চাপ একটু বেশি-এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডে ভর্তি রোগীর খরচ বিপুল। যে কারণে সিলেট বিভাগের চার জেলার রোগীদের ঝোঁক বেশি সরকারি হাসপাতালের প্রতি। কারণ সরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। শামসুদ্দিনে অপ্রতুল জনবল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ হাসপাতালে মাত্র ৫ জন কনসালট্যান্ট ও ৬ জন মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। অনেক চেষ্টা করে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে ২৫ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে এ হাসপাতালে। এ হাসপাতালে আইসিইউ’র জন্য ৭ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও উপজেলা পর্যায় থেকে আরো ৪ জন দক্ষ চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া, মেডিসিনসহ অন্যান্য বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্টরা নিয়মিত করোনার আইসিইউ ইউনিট পরিদর্শন করেন। করোনা ইউনিটে চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন জানিয়ে তিনি লোকবলের অপ্রতুলতার বিষয়টি এড়িয়ে যান।
স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেট-এর পরিচালক ডা: সুলতানা রাজিয়া জানান, শামসুদ্দিনের আইসিইউতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক পদায়ন করা হয়েছে। সেখানে আরো চিকিৎসক সংযুক্তির ব্যাপারে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার স্বাস্থ্য সচিবকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট সিভিল সার্জন অফিসের সাথে সমন্বয় করে সিলেটে করোনার চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা: নাজমুল ইসলাম জানান, তাদের হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত ২০টি আইসিইউ বেড সবসময় পূর্ণ থাকে। তিনি বলেন, লেইট (খারাপ) স্টেইজের রোগীরা মূলত আইসিইউতে ভর্তি হয়। আইসিইউ মিলিয়ে তাদের হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন করোনা রোগী ভর্তি থাকে বলে জানান তিনি।
মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা: আখলাক আহমদ জানান, জটিল এবং খারাপ অবস্থার রোগীরা মূলত তাদের হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের হাসপাতালের ১২টি আইসিইউ বেড সব সময় পূর্ণ থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা অনেক রোগীকে প্রায়শ আইসিইউতে সিট দেয়া যাচ্ছে না। তাদের হাসপাতালে গড়ে ৪০ জন করোনা রোগী ভর্তি থাকে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে নতুন করে ৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২২৭ জন ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৮১ জনের। এর মধ্যে কেবল সিলেট জেলায় মারা গেছেন ১২৯ জন। এছাড়া, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে ২০ জন করে এবং হবিগঞ্জে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।