এ টি এম তুরাব : নগরীতে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। পাড়া-মহল্লাসহ বিভিন্ন অলিগলিতে হামেশাই দেখা মিলছে কুকুরের। দিনে বিচরণ কম চোখে পড়লেও বিকেল গড়াতেই বাড়ছে সংখ্যা। ক্ষুধার্ত কুকুর হামলে পড়ছে পথচারীর ওপরও। সংঘবদ্ধ কুকুর দলের ঘেউ ঘেউ শব্দে রাতের নিস্তদ্ধতা ভাঙছে। মানুষ দেখলেই তেড়ে আসছে কুকুরের দল।
সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার ফলে বর্তমানে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এ কারণেই নগরে বৃদ্ধি পেয়েছে কুকুর।
এদিকে, কুকুরের কামড়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে কয়েকজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শাহজালাল উপশহরের একজন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছাড়াও ব্যবসায়ী-পথচারী নারী-পুরুষসহ শিশুরাও কুকুরের আক্রমণের শিকার হন। বাসা থেকে বের হলেই পথচারীরা নানা স্পটে কুকুরের উপদ্রবের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে মানুষ দেখলেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তেড়ে আসে ভয়ঙ্কর কুকুরেরা। কম বয়সী শিশু-কিশোরগণ কুকুরের ভয়ে থাকে প্রতিনিয়ত তটস্থ ও উৎকন্ঠায়।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর মুহূর্তে নগরে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারের সামাজিক আয়োজন। হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় সেখানেও নেই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা। তাই রান্না করা খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা হচ্ছে না ডাস্টবিনে। এর ফলে খাবারের সংকটে পড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুরগুলো।
সরেজমিনে নগরের অভিজাত আবাসিক এলাকা শাহজালাল উপশহর, লামাপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, লামাপাড়া, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, বন্দরবাজার, বারুতখানা, জিন্দাবাজার, হাওয়াপাড়া, তাঁতীপাড়া, দাঁড়িয়াপাড়া, চৌহাট্টা, দরগাহ মহল্লা, রাজারগলি, আম্বরখানা, জালালাবাদ, সুবিদবাজার পাঠানটুলা, মদীনা মার্কেট, বাগবাড়ী, ওসমানী মেডিকেল এলাকা, মিরাবাজার, শেখঘাট, মুন্সীপাড়া, রিকাবীবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, শাহীঈদগাহ, কাজীটুলা, ইলেকট্রিক সাপ্লাইসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত দল বেঁধে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত দেখা গেছে। এই এলাকাগুলোতে দিনে দুপুরে রাতের বেলায় চলাফেরা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। চলন্ত গাড়িতে ঘেউ ঘেউ করে পিছু নিচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, র্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর বা চিকার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। মূলত কুকুরের কামড়ে বা আঁচড়ে রক্ত বের না হলেও জলাতঙ্ক রোগ বেশি হয়। টিটেনাস রোগের আশঙ্কা থাকে।
তাদের মতে, শরীরের কোন অংশে কামড় বা আঁচড় দিয়েছে, তার মাত্রার ওপর নির্ভর করে কতোদিনে জলাতঙ্ক দেখা দেবে। সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে তিন মাসের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। শরীরের নিচের অংশে কামড় বা আঁচড় দিলে এর মাত্রা কম হলে সাত বছর সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে মানুষ সাধারণত বাঁচে না।
ভুক্তভোগীরা বলেন, সন্ধ্যার পর পাড়া-মহল্লার পয়েন্টে পয়েন্টে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান জানান, নগরীর প্রতিটি এলাকায় বে-ওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত দল বেঁধে কুকুর মিছিল দিচ্ছে।
উপশহর বি ব্লকের তিব্বিয়া কলেজের সামনে, সি ব্লক খেলার মাঠ, এ ব্লক, মেইন রোডে ময়লার ফেলার স্থানসহ ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কুকুর পাওয়া যায়। এতে আক্রমনের শিকার হচ্ছেন অনেকে এমনটি জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী ।
বেওয়ারিশ কুকুর থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের পর ক্ষতস্থান ক্ষারযুক্ত সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং র্যাবিস ভাইরাসের টিকা নিতে হবে। কুকুরের কামড়ে জখমের ধরণ অনুযায়ী এন্টি র্যাবিস ভ্যাকসিন ও ইআরআইজি নামের দুটি ভ্যাকসিন শরীরে দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে রাত ৯টায় এ রিপোর্ট পর্যন্ত মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও দু’জনই কল রিসিভ করেননি।