খবরটি প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকায় গত সপ্তাহে। সেটা হলো ‘সিলেটে অতিরিক্ত ভাড়ার বিধি আছে, স্বাস্থ্যবিধি নেই।’ এতে বলা হয় গণপরিবহনের নৈরাজ্যের কথা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই পরিবহন খাতে। মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার ন্যূনতম তাগিদ নেই। বাসে গাদাগাদি করে মানুষ ভ্রমণ করছেন; অনেকে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন। অথচ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা না হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া ঠিকই আদায় করা হচ্ছে। এতে যাত্রীরা এক দিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছেন, অপরদিকে অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মাসদুয়েক গণপরিবহন বন্ধ রাখার পর পুনরায় চালু হয় জুন মাস থেকে। তবে সেটা ‘শর্ত সাপেক্ষে’। শর্তের মধ্যে রয়েছে- পাশাপাশি দুটি আসনের একটি খালি রেখে যাত্রী বসানো, প্রত্যেক যাত্রীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা, গাড়িতে স্যানিটাইজার রাখা ইত্যাদি। অর্থাৎ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যানবাহন চালাতে হবে এবং আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। কম যাত্রী বহন করায় যে ক্ষতি হবে, তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য যাত্রী ভাড়াও বাড়ানো হয় ৬০ ভাগ। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রথমদিকে সরকারের নির্দেশনা মেনে কিছু কিছু গণপরিবহন চলাচল করেছে, এটা ঠিক। তবে যতো দিন গড়িয়েছে ততোই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে গণপরিবহনে। এখন হয়তো এমন কোন পরিবহন খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে যাত্রীরা সরকার নির্দেশিত দূরত্ব বজায় রেখে ভ্রমণ করছেন। বরং নির্দিষ্ট আসনের অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে যানবাহনগুলো। তাছাড়া, স্যানিটাইজারের ব্যবহার তো দূরের কথা, যাত্রীরা মাস্কই ব্যবহার করছেন না। অনেক পরিবহনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে। তাই যদি হয়, তবে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দেবে কেন? এই প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই সামনে এসে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের বক্তব্য হচ্ছে- সরকারের বর্ধিত ৬০ শতাংশ ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বিভিন্ন রুটে। তাছাড়া, সরকার বাস মালিকদের চাপের কাছে মাথা নত করেই ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে; যা এখন স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে বলেই মনে হয়।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। এই অবস্থায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা তৈরি হলেও তা ভেস্তে যাচ্ছে। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে যানবাহন চলাচলের ঘোষণা দিয়ে এবং ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে বসে আছে। এই নির্দেশনা আদৌ কার্যকর হচ্ছে কিনা, সেটাও তদারকির দরকার মনে করছে না। মালিক-চালক কিংবা যাত্রী কেউই এই ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠেননি। এই অবস্থায় পরিবহন খাতে সরকারের প্রদত্ত নির্দেশনাবলী কার্যকর করতে হবে, যেভাবেই হোক। আর তাই যদি না হয় তবে পরিবহনে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করাই জরুরি।