নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানী ও নানা অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকি এসব কাজের সাথে বিমানবন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিও জড়িত থাকার বিষয়টিও আলোচনায়। এমন সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিজস্ব সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
মূলত সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন থেকে চলমান যাত্রী হয়রানি ও চোরাচালান রোধে বিমানবন্দর অভ্যন্তরে এমন গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিয়ন্ত্রিত একটি গোয়েন্দা সংস্থা সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নিজস্ব নজরদারির আওতায় নিচ্ছে বিমানবন্দরটি।
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও গোয়েন্দা সংস্থা নিজেদের নজরদারির জন্য আলাদাভাবে বসাচ্ছে প্রায় ৮০ টির বেশি ক্যামেরা। আলাদা একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এসব ক্যামেরা ওই গোয়েন্দা সংস্থা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করবে বলেও সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ক্যামেরাগুলো বসানোর কাজও প্রায় শেষের দিকে রয়েছে।
জানা গেছে- ২০১৯ সালের শুরুর দিক থেকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিয়ন্ত্রিত একটি গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ নজরদারি শুরু হতে না হতেই নড়েচড়ে বসেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি স্বর্ণের চালান, সিগারেট ও আগর।
২০১৯ সালে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হওয়ার পর থেকে গত ১৭ ডিসেম্বর প্রায় আড়াই কেজি ওজনের ২২টি স্বর্ণের বারসহ মমিন উদ্দিন নামে এক যাত্রীকে আটক করা হয়। এর আগের দিন ১৬ ডিসেম্বর বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে যৌথ অভিযানে ১৬০ কাটন বেনসন সিগারেট উদ্ধার করে এনএসআই, কাস্টমস ও এপিবিএন।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর বিমানবন্দরের বাথরুমের ডাস্টবিনে দেড় কেজি ওজনের ১২ পিস স্বর্ণের বার ফেলে উধাও হয়ে যায় চোরাচালানকারী। এছাড়া ১১ নভেম্বর এক যাত্রীর লাগেজ থেকে ২১০ কাটন সিগারেট জব্দ করা হয়। ১৩ অক্টোবর অপর একটি অভিযানে ৭৯৮ কাটন বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়। তার আগে ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে ২০ পিস স্বর্ণের বার জব্দ করে সংশ্লিষ্টরা। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এছাড়া ১২ এপ্রিল স্বর্ণের ২৫টি বারসহ এক যাত্রীকে আটক করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তার আগে ২৫ মার্চ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের ২৪ কেজি আগরের ছাল উদ্ধার করা হয়। সেই সাথে আগর বহনকারী তিন যাত্রীকেও আটক করা হয়।
সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে গোয়েন্দা নজরদারি শুরুর পর অসংখ্য চোরাচালান উদ্ধার ও আটকের ঘটনা থাকলেও সে হিসেবে অতীতের বছরগুলোতে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই সব মিলিয়ে সিলেট বিমানবন্দরে বাড়তি নজরদারি ও কোন যাত্রী যাতে হয়রানি না হয় সে লক্ষ্যে এসব ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন- সিলেটের সচেতন নাগরিকরা। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, ‘সিলেট বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। যাত্রী হয়রানিসহ চোরাচালানের সাথে কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগও আছে। কিন্তু সম্প্রতি শুনলাম গোয়েন্দা নজরদারি বেড়েছে। বিষয়টি শুনে অনেকটা ভালই লাগছে। আর এখন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে গোয়েন্দা সংস্থা নিজেরা নজরদারি করবে কথাটি শুনে মনে হচ্ছে হয়তো একটা নিয়মের ভিতর আসবে ওসমানী বিমানবন্দর। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে যদি সঠিক নজরদারি থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে ভালো কিছু হবে।’
এটাকে বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরোধী আরো একটি কঠোর পদক্ষেপ উল্লেখ করে আজিজ আহমদ সেলিম ওসমানী বিমানবন্দরে গোয়েন্দা নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেন।
তবে সিসি ক্যামেরা স্থাপন বা গোয়েন্দা নজরদারির ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ। তিনি বলেন, ‘এটি রাষ্ট্রীয় ব্যাপার। আমি কিছু বলতে পারবো না।’
ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি সত্য কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা যে গোয়েন্দা সংস্থা লাগাচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন। আর এভাবে ফোন করলেই যে আমি বলে দিবো তাও হতে পারে না।’