নিজস্ব প্রতিবেদক :: রাত তখন আনুমানিক সাড়ে ৯ টা। জিকির আর ধর্মীয় বয়ানে মশগুল শাহজালাল মাজারের ভিতরে অবস্থানরত মুসল্লিরা। আর মাজার প্রাঙ্গণের চারদিক ঘিরে চলছে ওরসের আসর। কেউবা জিকিরে আর কেউবা হারমোনিয়াম আর ঢোলের তালে বাউলিয়ানা কিংবা সুফি গানের মধ্যদিয়ে করছেন আধ্যাত্মিক সাধনা। সব মিলিয়ে ধ্যানেমগ্ন কয়েক হাজার ভক্ত আশেকান।
এমন সময় নামলো বৃষ্টি। তবুও বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছিলো জিকির আর ওরসের আসর। কিন্তু সময়ে সময়ে বৃষ্টি বাড়তে থাকায় ফাঁকা হতে থাকে মাজারের ভিতরের মাঠ। কিন্তু মাজার ছাড়তে নারাজ সকলেই। খোলা আকাশের নিচে মাজারের বেশির ভাগ জায়গায় কোন সামিয়ানা না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েন সকলে।
তবে সামিয়ানা থাকার কারণে মাজার মসজিদের বাইরের অংশে ছাউনি থাকার কারণে মানুষ ভিড় জমান সে অংশে। কিন্তু মানুষের তুলনায় সে ছাউনি অংশ খুবই অপ্রতুল হওয়ায় মাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন দোকান ও আশপাশের বিভিন্ন চালের নিচে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেন মুসল্লি, ভক্ত-আশেকান। তবুও বিড়ম্বনা।
অনেকেই কোন জায়গা না পেয়ে বৃষ্টিতেই দাঁড়িয়ে থাকেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরাই বেশি সমস্যায় পড়েন। নারী এবাদতখানা খুবই ছোট হওয়ায় খোলা আকাশের নিচেই বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে উপরে কোন সামিয়ানা না থাকায় মাজারের মাঠের টাইলসের উপর তৈরি হয় পানির আস্তরণ। পানিতেই টাইলসগুলো ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় কয়েকজন মুসল্লিকে হোঁচট খেতেও দেখা গেছে। এমনকি বসার জায়গা বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার কারণে বৃষ্টি ছাড়ালেও দুর্ভোগ থেকেই যাবে এমনটাই মনে করছেন সকলে।
তবে সকল দুর্ভোগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ি করছেন দূর দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লি, ভক্ত-আশেকান। তাদের দাবি বৃষ্টির মৌসুমে ওরস তাই যে কোন সময় বৃষ্টি আসতেই পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত ছাউনির ব্যাবস্থা করা উচিত ছিলো।
তাহিয়া বেগম এসেছেন কুমিল্লা থেকে। সাথে দুই বোন, মা আর বাবা। অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরুষরা বিভিন্ন দিকে আশ্রয় নিতে পারলেও আমরা বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে আছি।
আগামীতে আসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেন শাখাওয়াত হোসেন। তিনি এসেছিলেন ময়মনসিংহ থেকে। দাঁড়িয়েছিলেন একটি গাছের নিচে। বললেন ওরসে আসার আগ্রহ আর নাই। একবার এসেই শেষ। এই প্রথম এসেছি ওরসে। বৃষ্টির মৌসুমে ওরস হলেও উপরে ছাউনিটুকু পর্যন্ত নেই। এখনতো বৃষ্টি থামলেও বসার জায়গা থাকবে না। সব জায়গাই ভিজে গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সকাল পৌনে ১০টার দিকে মাজারে গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে ৭০০তম ওরস শুরু হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে মাজারে গিলাফ দেয়া হয়।
বুধবার ভোরে আখেরি মোনাজাত ও শিরনি বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুই দিনব্যাপী এই ওরস।
ওরসে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এবং বিদেশ থেকে হজরত শাহজালালের (রহ.) ভক্ত-আশেকানরা গত রোববার বিকেল থেকে দলে দলে মাজারে আসতে শুরু করেন।
প্রতি বছরের ন্যায় ১৯ ও ২০ জিলক্বদ হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে ওরস উদযাপন হয়। মঙ্গলবার ওরসকে ঘিরে মাজার প্রাঙ্গণে বসেছে বাউলদের আসর। ভক্তিমূলক ও শাহজালালের নামে বাউল সাধকরা হৃদয় উজাড় করে নিবেদন করছেন তাদের পীর-মুর্শিদি গান। এছাড়া দেশি-বিদেশি ভক্ত-আশেকানরা লাল সালু মাথায় বেঁধে মাজারে আসছেন। দুই দিনব্যাপী ওরসে মানুষের ঢল নেমেছে। নগরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। হজরত শাহজালালের (র.) মাজারের ওরসে দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ভক্ত-আশেকান সমাবেত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ইসলাম প্রচারের জন্য হজরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেট আসেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জিলক্বদ তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেটে তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। তার কবরকে ঘিরেই পরে গড়ে উঠেছে মাজার। এখানেই বিগত ৭০০ বছর ধরে পবিত্র ওরস পালিত হয়ে আসছে।
সিলেট৭১নিউজ/২৪জুলাই/বুধবার/এআ