সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সিলেটেও ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়লেও গণপরিবহণে নেই স্বাস্থ্যবিধি। কোথাও কোথাও অর্ধেক সিটের বদলে সকল সিটেই যাত্রী পরিবহণ করছে গাড়িগুলো। এতে ভাড়া নিয়ে প্রায়ই হচ্ছে বাকবিতণ্ডা।
এর বাইরে নির্দেশনায় প্রতিটি গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী রাখার কথা বলা হলেও কেউ মানছে না এসব নির্দেশনা। তবে সরকারি নির্দেশনা কিছুটা মেনে চলছে নগর এক্সপ্রেস।
রোববার (১১ এপ্রিল) সকালে সিলেট নগরীর মেজরটিলা থেকে একটা লেগুনা বন্দর বাজারের দিকে রওনা দেয়। সাধারণত একটা লেগুনার ভিতরে ১০ জন এবং সামনে আর ২ জন মিলিয়ে ১২ জন যাত্রী বহন করা যায়। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে সরকার ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করলে প্রথম তিনদিন সেটি কার্যকর হয়নি। করোনার হার বাড়লেও মানুষের মাঝে লকডাউন মানার তেমন কোন প্রবণতাই ছিল না। যে কারণে লকডাউনও চলে ঢিলেঢালা ভাবেই। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের দাবি প্রেক্ষিতে শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট, শপিংমলও খুলে দেওয়া হয়। সকল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহণ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।
পাশাপাশি নির্দেশনায় ৬০ শতাংশ বাড়া বেশি নেওয়ার বিপরীতে প্রতিটা যানবাহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কথা বলা হয়। সরকার কর্তৃক দেয়া এই নির্দেশনা অনুযায়ী মেজরটিলা থেকে ছেড়ে আসা বন্দরগামী লেগুনাটিতে ১২ জনের পরিবর্তে ৬ জন যাত্রী থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তার উল্টোটাই। লেগুনাটিতে ১২ জনের সাথে পিছনে আরও দুজন বাদুড়ঝোলা হয়ে আসছেন। তবে গাধাগাধি যাত্রী পরিবহণের সাথে নিচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়াও।
দ্বিগুণ বাড়া নেওয়ার পরেও অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন লেগুনা চালক বলেন, গাড়ি থামার সাথে সাথে যাত্রীরা দলবেঁধে উঠে পড়েন। কাউকেই নামানো যায় না। তাই কি আর করা, সবাইকে নিয়েই আসতে হয়।
একই অবস্থা সিএনজি অটোরিকশা, বাসগুলোতেও। যেসব এলাকায় ট্রাফিক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে, সেখানে নামমাত্র অর্ধেক যাত্রী তুললেও গাড়ি চলার পরে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে অনিয়মের এই ধারাবাহিকতা। শুধুমাত্র মেজরটিলা থেকে আসা বন্দরগামী এই লেগুনাই নয়, সিলেটের প্রায় সকল পরিবহনগুলোর চিত্র মোটামুটি একই।
নগরীর আম্বরখানা, কদমতলী, কুমারগাওসহ অধিকাংশ এলাকার রাস্তাগুলোতেও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার একই চিত্র। সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বিগুণ বাড়া নিলেও অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিষয়টির কোন তোয়াক্কাই করছেন না সিলেটের অধিকাংশ পরিবহন শ্রমিকরা।
সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, গাড়িতে যাত্রী বোঝাই না করে তারা আসেন না। আবার ভাড়াও নেন দ্বিগুণ। সরকারের দ্বিগুণ বাড়ার বিষয়টি ভালভাবে পালন করলেও অর্ধেক যাত্রীর বেলায় সেটি মানছেন না । তাদের এই অনিয়মের বিষয়ে কেউ কথাও বলেন না। এতে আমরা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষেরা চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, আমি জিজ্ঞেস করছিলাম, দ্বিগুণ বাড়া যেহেতু নিচ্ছেন তাহলে অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছেন না কেন? উত্তরে এক সিএনজি চালক জানান, এতো কথা কওয়ার টাইম নাই, পুষাইলে আসেন, নইলে যান৷
তবে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিত বলেন, সরকারের সব নির্দেশনাই মানা হচ্ছে। দুইএকটা জায়গায় হয়তো কিছু অনিয়ম হচ্ছে, আশা করি এগুলোও থাকবে না। তবে বেশি যাত্রী বহন করার অভিযোগটি খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দেন তিনি।
আর সিলেট মেট্রোপলিটন ট্রাফিকের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে আমরা সর্বোচ্ছ চেষ্টা করছি। নগরীর সবগুলো ট্রাফিক পয়েন্টে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। যারাই অনিয়ম করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের কোভিড-১৯ সেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার শাম্মা লাবিবা অর্ণব বলেন, গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নিলেও অনেক সময়ই চালকরা অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার বিষয়টি মানছেন না। ইদানীং এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশাকরি শিগগিরই এটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এসময় তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন ৷
সিলেট৭১নিউজ/টিজা