সিলেট৭১নিউজ ডেস্ক;: সিলেটের নগরীর বন্যা কবলিত বেশীরভাগ এলাকায় গত সোমবার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুতহীনতা পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। অনেকের বাসায় পানি না উঠলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটছে। সময় যত গড়াচ্ছে বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
সিলেট নগরীর বাসা বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় বন্যা কবলিত বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির।
তিনি বলেন, কিছু জায়গায় সাব স্টেশনের যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে গেছে। আবার অনেক জায়গার বাসা বাড়ির মিটার পর্যন্ত ডুবে গেছে। একারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। তারপরও আমরা সরবরাহ স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে কিছু এলাকায়স্বাভাবিক হয়ে গেছে। পানি কমলে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাষিটুলা, বেতের বাজার, কানিশাইলের অন্তত ২০টি পাড়া। নদীর উপচে পানি ঢুকেছে ওই জনপদে। কয়েক হাজার বাসা-বাড়ি তলিয়ে গেছে। ওই এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। ঘাষিটুলা ও বেতের বাজার থেকে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
স্বল্প আয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার পানি না বাড়লেও কমার কোন লক্ষন নেই। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্র কম। এতো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেও জায়গা হবে না। আর কেন্দ্রে যারা আছেন তারা শুকনো খাবার খাচ্ছেন।
নগরের তালতলা পয়েন্ট চারদিন ধরে পানিবন্দি ওই এলাকার মানুষ। পয়েন্টের কাছেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়। কোমর পানিতে নিমজ্জিত ফায়ার সার্ভিসের অফিস। এই কার্যালয়ে কোনো কার্যক্রম নেই। এক কর্মচারী জানালেন- পানি উঠে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম স্টেডিয়াম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অস্থায়ীভাবে স্টেডিয়াম এলাকা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তালতলার অর্ধশতাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকেছে।
কালীঘাটের অবস্থা শোচনীয়। সুরমা নদীর তীরবর্তী প্রধান এ বাণিজ্যিক এলাকার অবস্থান। তিনদিন ধরে গোটা এলাকা পানির নিচে। শতশত পণ্যবাহী ট্রাক নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল খালাস করতে পারছে না। পাইকারি আড়তগুলোতে কোমর পরিমাণ পানি। সার্কিট হাউসের সামনে থেকে সুরমা নদীর তীরবর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকা পানির নিচে। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানিয়েছেন- পানি উঠে যাওয়ায় কালিঘাটে কয়েক কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে।
বাণিজ্যিক এলাকা কাজীরবাজারের অবস্থাও একই। কাজীরবাজারের আড়তগুলোও পানিতে ভাসছে।
নগরের উপশহর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক কার্যালয় রয়েছে ওখানে। গোটা উপশহরই পানিতে ভাসছে। হাজারো বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তবে উপশহর সংলগ্ন তেররতন ও সাধারপাড়া এলাকার বস্তিবাসী শতাধিক পরিবার বাসা-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুরা সেখানে অনাহারে, অর্ধাহারে রয়েছে। ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম জানিয়েছেন- ওয়ার্ডের বেশীরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। তারা এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
২৪ নং ওয়ার্ডের তেররতন বস্তি এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন- বস্তি এলাকায় কোমর পানি। এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাননি বলে তারা জানান।
সিলেট৭১নিউজ/ইফতি রহমান